এখন চিন্তা হয়, সেই আমলের লোকেরা তো অনেক সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তাহলে এতো কঠিন কঠিন অঙ্ক, উপপাদ্য নিয়ে তাঁরা করতেন কী? সত্যি বলতে কি এর পুরো জবাবটা আজকের দিনে আমরাও জানি না। কারণ অনেক ক্ষেত্রে একটি নিরিহ শ্লোক-কে আমরা পুজার মন্ত্র বা দেবদেবীর স্তুতি মনে হলেও - পরে আবিষ্কার হয়েছে যে ওটা মোটেই নিরিহ কিছু একটা নয়। ওটা আসলে সাংকেতিক ভাষায় সম্পুর্ন অন্য অর্থের একটা গোপন কথা। ব্যাপারটা কি? বিভিন্ন ভারতীয় শাস্ত্রে বা অঙ্কে সংখ্যার উল্লেখ সরাসরি না করে তাকে অন্য কিছুর নাম দিয়ে বোঝানো হতো। (এ প্রসঙ্গে একে চন্দ্র, দুই-এ পক্ষ, তিনে নেত্র ইত্যাদি একবার মনে মনে আউড়ে নিলে ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে)। বেদ, পুরাণ, স্মৃতি ইত্যাদি পুরনো পুরনো গ্রন্থে এই সমস্ত আঙ্কিক শব্দের ব্যবহার হাজারে হাজারে রয়েছে।


তাহলে যদি কোথাও লেখা থাকে “সাগর নাগ বিরাট বন্ধু” তবে আমরা কিন্তু এর মানে “সমুদ্রের সাপ পরম বন্ধু” বুঝবো না। সাগর মানে হচ্ছে চার, নাগ হচ্ছে আট, বিরাট হচ্ছে পাঁচ এবং বন্ধু মানেও চার। অর্থাৎ এটা হচ্ছে চার অঙ্কের একটা সংখ্যা। হিন্দু গণিতশাস্ত্রে সংখ্যা লেখবার সময় “অঙ্কানাজ বামতো গতিঃ” এই আইন ব্যবহার করা হতো এবং এখনও হয়ে আসছে। এই আইন অনুযায়ী সংখ্যাটা হচ্ছে ৪৫৮৪; এই একই ভাবে “রাম যুগ তুষ্ট বিষয়” কথাটার মানে যাই ভাবিনা কেন, সংখ্যায় দাঁড়াবে ৫০৪৩; বৈদিকমতে তিন রকমের অগ্নি আছে আর বান পাঁচ রকমের। তাই অগ্নিবাণ হল ৫৩;  “সোমরস গুণ বিষয় তুচ্ছ তর্ক” শুনে আনন্দ পাবার কিছু নেই। কারণ ওটা আসলে ৬০৫৩৬১ সংখ্যাটারই অাঙ্কিকরুপ। স্কুলে পন্ডিতমশাইরা যাই বলুন না কেন “বেলা বসু রুপ বিষয় তুচ্ছ তুচ্ছ ভাব” কথাটার মানে হলো ৫০০৫১৮২; এভাবে হাজার হাজার স্লোকের মধ্যে যে কত হিসেব নিকেশ লুকিয়ে আছে তা বলা মুস্কিল। হয়তো একদিন আবিষ্কার হবে, দুগার্পুজার অঞ্জলীতে বলা আছে সবর্জয়ী হবার গোপন রহস্য। বিয়ের মন্ত্রের মধ্যে লুকিয়ে আছে সুখে থাকবার ফমুর্লা। শ্রাদ্ধ-শান্তিতে লুকিয়ে আছে পারলৌকিক আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করার বিচিত্রা পদ্ধতি। হয়তো বা আবিষ্কার হবে পুষ্পক-রথ তৈরীর আসল রহস্য। রাম কী ভাবে “বাণ” দিয়ে সমুদ্রকে শুকিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন বা ঘরে বসেই কিভাবে টেলিপ্যাথির মতো কুরুক্ষেত্রের সব ঘটনা ধৃতরাষ্ট্র জানতে পেরেছিলেন সঞ্জয়ের পুংখানুপুঙ্খ বণর্নার মাধ্যমে। ‘কাদম্বরী’ গল্পের লেখক কি ভাবে জানতে পেরেছিলেন যে মঙ্গল গ্রহের রং লাল! সূযর্সিদ্ধান্তে কী ভাবে হিসেব করে বলা হয়েছে যে বৃহস্পতি গ্রহ এক মহাযুগে “খদস্রাক্ষিবেদষড়াহ্নি” বার অর্থ্যাৎ ৩৭৪২২০ বার প্রদক্ষিন করে! অবাক লাগে এসব ভাবতে! অদ্ভুত এইসব পুরনো দিনের মুনি ঋষিদের ম্যাজিক!! কি? এরপরও কি বলা যাবে অঙ্ক বিষয়টি একদম রসকষহীন? একেবারেই  ইন্টারেস্টিং নয়?


পাঠকবর্গ  কি বলেন ?