একটু পরেই বেরোব, তাই সাজের শেষ টোকাটুকু দিয়ে নিচ্ছি।
ধুতিটা একটু পুরোনো, তবে শার্টটা তুমিই দিয়েছিলে,
তাই আজো নতুন।


বেশ গুছিয়েই বসা গেল ৩৩ নম্বর টেবিলে।
আজও আসবে তো? নাকি অপেক্ষাই করে যাবো!
উপরে লম্বা ঝুলন্ত মরচে ধরা ফ্যান,
আর বাসি মুচমুচে করে রাখা ফিস ফ্রাই...
আরেক দফা কফির অর্ডার দেওয়া যাক।


এই টেবিল জানে আমার প্রথম কবিতার স্পর্শ।
আমার প্রথম পকেট হাতরে বার করা খুচরো,
কিছু কম পড়েছিল বলে সন্দীপনদার প্রশ্রয়জড়ানো হাসি,
এই টেবিল জানে তোমার আঙ্গুলের প্রথম উষ্ণতা; আমার আঙ্গুলে
প্রথম নিকোটিনের ছ্যাকা! শার্টে ফুটো; তোমার রাগ;  
একটু উত্তাপ, একটু ন্যাকামি;.........সব সব জানে।
কারা সব চলে গেল, আরো কারা কারা আসছে,
এই কফি হাউসেই। অথচ এ টেবিল জানে;
শুধু জানে আমারই প্রথম চোখের জল, প্রথম টিউশনির টাকার গন্ধ।
আমার ঘেমো রুমালে লেগে থাকা রাজনৈতিক গন্ধ,
কাপের পর কাপ চায়ের তলানির গন্ধ;
স্নিগ্ধা, তোমার গন্ধ।


ট্রামলাইনের পাশে ম্যানহোলের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে কলকাতার বিকেল,
সব সব চুষে নিচ্ছে। সন্ধ্যে নামছে; ক্রমে রাত।
ক্রমে ক্রমে বিবিধভারতী আর অনুরোধের আসর।
পাড়ায় ঢুকলেই পাশের বাড়ি থেকে অতুলপ্রসাদের গান,
বা ভাজা বড়ির গন্ধ!


সবই আগের মতন;
অথচ তুমি কি আজো আসবে না; আমি তো আসি,
বসি, তোমার প্রিয় খাবারের অর্ডার দেই,
এই দেখো ভুলে গেছি তোমার শক্তির নতুন কবিতার বই বেরিয়েছে,
এনেছি তাও।


ঝিম ধরা ফ্লুরোসেন্ট আলো আরো ঝিমিয়ে এলে,
আমাদের ৩৩ নম্বর টেবিলের খুব কাছাকাছি সন্দীপনদা,
‘এবার বাড়ি যাও, সময় হয়ে গেছে’


সময় হয়ে গেছে? সন্দীপনদা?
অথবা আজো হয়নি!
ভুলে যেও না, কাল আমি আবার আসব,
যেমন আমি আছি আর আছে আমাদের ৩৩ নম্বর টেবিল।


কোথায় তুমি? স্নিগ্ধা?