অফিসের ক্লান্ত সময় পার করে কখন যে অসময়ে কাজ শেষ করলাম টের পেলাম না। বের হলাম গন্তব্য কর্মস্থল থেকে নির্দিষ্ট কর্মঘন্টার পরে।অবশ্য একটু রাত হলো।এই যান্ত্রিক জীবনে ইঞ্জিন চালিত গাড়ি পাওয়া খুবই দুষ্কর।হেঁটে  হেঁটে ক্লান্ত শরীর এসে থামলো ছোট্ট একটি নির্জন চায়ের দোকানে। এক কাপ চায়ের তৃষ্ণা মেটাচ্ছিলাম বসে বসে।।
হঠাৎ আচমকা আমার কাদের উপর ভর করলো এক অপূর্ব সুন্দর নারীর, নেইলপালিশ মাখা ও কাঁচের চুড়ি পড়া সাজানো স্নিগ্ধ হাত। তখন হৃদয়ের বাতায়ন খুলে গেলো। বাঁ চোখের আড়ালে তাকাতেই অসম্ভব মুগ্ধ হয়ে পড়লাম!!!


জিজ্ঞেস করলাম
কে তুমি? কি নাম তোমার?


মেয়ে- কি হবে এসব জেনে? মেয়ে মানুষের বুঝি নাম ঠিকানা হয়?
যে সময়ে হিন্দুদের ঘর পুড়লো, হাজার হাজার লোক মরলো, মুসলমানের রক্ত ঝরলো অঝোরে।
তখন মা ছিল গর্ভবতী,


গভীর অন্ধকারে জন্ম হয়েছিল বলে,শখ করে আমার নাম রেখেছিল আলো♥
এখন অবশ্য কারো কাছে রেশমী, কারো কাছে চুষমী।
দাঙ্গা হাঙ্গামার সয়ম দিন পঞ্জিকা পড়ার সময় কই?
তাই বলতে পারছি না
আমার জন্মতিথি।


আচ্ছা তোমার কি প্রেমিক পুরুষ আছে? জানা অজানা প্রেমিক ঘুরে ধারে কাছে?


মেয়ে - আমার আবার প্রেমিক,
তুমিও বটে খুব রসিক।
প্রেমিক বলতে কাকে বলে?
দু-চারটে মিষ্টি কথায়,
সারাক্ষণ সারারাত মন ভোলায়
আর দিন দুপুরে রঙিন স্বপ্ন দেখায়,
সুযোগ চাই শুধু সুযোগ চাই
সুযোগ পেলে বুকে,পিঠে  
উরু, নিতম্বে গভীরে হাতটা ঘষায়।


মেলায় নিয়ে চুড়ি কেনায় হাতে করে
কানের দুলও পড়ায়,
পরিশেষে কোন দূর পাহাড়ে নিয়ে
আমার জামাটা খোলাই।
বাপ-চাচা দের হারানোর পর
প্রতিবেশীর কাছে বড় হলাম।
উনিও করেছে কয়েকবার,
তাহলে প্রেমিক পুরুষ বলবো তাকেই এবার।


হুমম তুমি তো খুব সুন্দর খুব রূপসী।


মেয়ে- আমার রূপ আজ সবার কাছে রূপসী,
লোকের মাঝে, তাদের  মুখে মুখে আমি নাকি
ফুল বিছানার সর্বনাশী।


রূপ তো নয় যেন যৌবনের জোয়ার।
তোমাদের পুরুষ লোকের চোখের
ইশারা,
সন্ধ্যা হলে দেয় যে সাড়া।
কথায় কথায় আমিও বলি
ফেল কড়ি মাখো তেল।


তোমার সমাজের চোখে
আমার রূপ যদি হয়
আপাদমস্তক এই মাংসপেশি,
তবে নিঃসন্দেহে আমি এই
পৃথিবীর বিশ্ব রূপসী।


আচ্ছা কথার মাঝে জানা হলো না।
তোমার জাত,ধর্ম,বর্ণ জানতে পারি?


মেয়ে- তুমি না আমায় হাসালে
মেয়ে মানুষের জাত,ধর্ম,বর্ণ আসলেই কি আছে রে?
এই যে দেখছো আমায়
রক্ত মাংসে গড়া
সবটা যে শরীর ঘিরে।


মেয়ে মানুষের ধর্ম থাকতে নেই।
ও কথা বলো না, পাপ হবে গো।
কই যখন পরিপাটি হয়ে একাকী রাস্তায়
ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকি,
কেউ জানতেও চাই না এতসত,
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ নাকি খ্রীষ্টান
সবাই বলে এই রূপের নগদ কত?


আজকের পুরুষ শাসিত সমাজ
গঠিত হয়েছে এই ধর্মের ধারায়,
অন্ধকারে ফুল বিছানায়
সব ধর্মের পুরুষ লুণ্ঠিত হয়,
আমার শরীরের উত্তাল ঢেউ
শরীর যখন শরীর দোলায়।


তোমার মা, বোন, অর্ধাঙ্গিনী আজ নিরাপদ,
কেন জানো?
এই আলোর রূপে
আলোকিত রূপের খেলায়।


সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি হলাম
এক অবলা, পতিতা, রূপসী নারী,
চলো না, বিনা পয়সায় আজ
তোমায় দেখাবো আমার রূপের তাণ্ডব।
এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে,
গভীর রাত হচ্ছে, আর করো না দেরি।


ছেলে- মনুষ্যত্ব জাগবে একদিন
তোমায় অবহেলা করলো যারা,
সেই পুরুষের ঘরের বিছানায়
তোমারও ফুলশয্যা হবে,
কেন এত তাড়া?


মানুষ তোমায় করবে আপন
পুরুষ শাসিত সমাজের প্রতি
রইলো আবেদন,
হে পুরুষ,
পরিবর্তনের এই পৃথিবীতে
হোক তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।


******************************
২৪শে জুলাই ২০২১।