তক্ষশীলার অরণ্যে বসে
পাঠ করেছি বৃক্ষ পদাবলী  
শরীরে সঞ্জীবনী আরক তুলে
ডাক শুনি নালন্দার। বলল,
এখানেই তোমার দর্শন।
তারপর নদীয়ার আলোর বেদীতে
তর্কে তর্কে, আমি হয়ে গেছি
কতকিছু বিস্মৃত।


বিস্মৃতির গাঢ় কুঞ্জটিকা কেটে গেলে
আমার বাসনা জাগে
মহেঞ্জোদারোর নীল উপতক্যা থেকে
একবার দেখে আসি ভারতবর্ষ।
আবার হরপ্পার সিংহদ্বারে চাতকির মতো
চেয়ে থাকা মেষবালিকার আহবান
আমি কি করে উপেক্ষা করি !
দুই স্রোতের বিপরীত টানে
আমার যাওয়া হয়না কোনদিকে।  
তখন মাধুরার অতীত জগতে
আমি ইতিহাসের দিশেহারা বাউল
হাঁটতে হাঁটতে নিবিড় অন্ধকারে
আমি পার হয়ে আসি শিব মন্দির।
দেখি পাষাণ গম্বুজের চুড়োয় শিবের ত্রিশূল
দাঁড়িয়ে আছে নক্ষত্রের মুখোমুখি।
আদিম প্রচির ছুঁয়ে সবুজ ছত্রাক
খোঁজে নিয়েছে তার নির্ভার আশ্রয়।

আমি আর পারিনা তাকাতে নক্ষত্রের দিকে
কেন জানি অতিকায় নক্ষত্র
জোনাক পোকার মতো ছোট দেখায়  
আকাশ থেকে আড়াআড়ি নেমে আসে উল্কার আগুন
আমি তো ভজনে বিশ্বাসী নই,শিখিনি ভালোবাসা
আর এদিকে অমরাবতীর কাননে তুমি
বসে আছো সাজিয়ে প্রেম-পসরা।

হঠাৎ কে যেন আমাকে নিয়ে গেল
অজন্তার গুহা ভাস্কর্যের দারুণ এক জগতে। সেখানে
নিদ্রিত বুদ্ধমূর্তির পাশে নগ্ন যুবতীদের কণ্ঠে সমর্পণের গান  
‘বুদ্ধং শরং গচ্ছামি'।  
শর্তহীন আত্মসমর্পণে আমি কোন কালে বিশ্বাসী  ছিলাম না।
তবু অযোধ্যায় আমি স্তম্বিত হয়ে খানিক থেমেছিলাম,
মনে পড়ে ইতিহাসের সেই কৌতুক !  
মন্দির ভেঙ্গে পড়ে, মসজিদ ভেঙ্গে পড়ে, সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে
আরও ভেঙ্গে পড়ে আমাদের অঙ্গিকারলব্ধ ভালোবাসা।
তাই আমি লহমায় মন্দির পেরিয়ে যাই ,
পেরিয়ে আসি বাবরি মসজিদের মিনার থেকে আজানের ধ্বনি।
হে অদৃশ্যবাদিরা !
অপার্থিব বাসনার সমুদ্রে আর কতকাল করে যাবে অবগাহন ?
হে ক্রুশবিদ্ধ যিশু !
বল তোমার মৃত্যু মানে কার পরাজয় ?

মাধুরার অন্ধগলিতে মুছে গেছে কত ইতিহাস
কীটদষ্ট ইতিহাসের জীর্ণপাতা ঝেড়েমুছে তুলে নিই হাতে
আমার আর যাওয়া হয়নি অমরাবতী।

এভাবে মুছে গেছে তোমার আমার যূথবদ্ধ জীবনের অঙ্গিকার,
কেবল ভেসে যাচ্ছে লোহিতাভ সাম্পান মানবিক নগরের দিকে।