রাত ঠিক বারোটা এক মিনিটে
চৌরাস্তার মোড়ে-
ট্রাফিক সিগন্যালে লাল বাতি জ্বলতেই
চারজন মানুষ এক সাথে দাঁড়িয়ে পড়ল।


তারা সবাই সবুজ বাতির জন্য অপেক্ষা করছে,
অনেক সময় ধরে লাল বাতি বদলে আর সবুজ হচ্ছে না!!
বিরক্ত হয়ে তারা পরস্পরের দিকে তাকালো।
তারপর গল্প করার জন্য পরিচিত হয়ে গেলো।


বালকটি অস্ফুট কন্ঠে নিজের নাম বললো
-রশিদ হারুন।
কিশোরটি চিৎকার করে তার পরিচয় দিলো -রশিদ হারুন।
যুবকটি খুব উদ্ধত কন্ঠে নাম বললো -আমি রশিদ হারুন।
মধ্যবয়স্ক মানুষটি বিনয়ের সাথে   বললো- রশিদ হারুন।
সবাই একসাথে বলে উঠলো
-এতো পরিচিত লাগছে কেনো আজ আমাদের নিজেদের!!


মধ্যবয়স্ক মানুষটি পরম মমতায় বালকটির মাথায় লেপ্টে থাকা
নিয়ন বাতির আলো মুছে দিতে দিতে বললো,
- রাতের বেলায় এক সময় তোমার এই শরীরে
শুধুই চাঁদের আলো আলসেমী করে শুয়ে থাকতো।
এখন বুঝি নিয়ন বাতির আলোও শুয়ে থাকে!!


কিশোরটি যুবকের দিকে তাকিয়ে দুঃখ ধরা গলায় বললো,
-আমাদের ঠিকমতো খেতে দিতে পারতো না বলে
বাবা একদিন পুকুরের জলে ডুবে মরলো!!
তারপর থেকে জল দেখলেই আমি মাছ হয়ে যাই,
সাঁতার কাটি আর বাবাকে খুঁজি।


যুবকটি মধ্যবয়স্ক মানুষটির দিকে তাকিয়ে বললো
- অনেক অভাব, অপমান আর অভিমান!!
এই তিন অভিশাপে একজন নারীও আমাকে ভালোবাসেনি,
তবুও আমি দাঁড়িয়ে আছি রাতের এই আত্মীয়শূন্য শহরে।
আমি এখন শুধু এই শহরের মাছরাঙা পাখি ভালোবাসি।


বালকটি সবার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আপনারা সবাই আজ না হয়
আমার সাথেই চলুন,
চাঁদের আলোতে আজ সবাই মিলে আকাশে সাদা বক হয়ে উড়বো।


অনন্ত সময় পর,
ঠিক রাত বারোটা তিন মিনিটে সিগন্যালের সবুজ বাতি জ্বলে উঠলো।
চারজন মানুষ সবাই সবার দিকে তাকাল আবারও,
তারপর বালকটিকে সামনে রেখে পেছন পেছন তিনজন মানুষ
একটি রেখা ধরে সোজাসুজি হাঁটতে লাগলো।


দূর থেকে দেখলে এদের চারজন মানুষ মনে হয় না,
মনে হয় শুধু একজনই রশিদ হারুন অসীমের দিকে হারিয়ে যাচ্ছে।
——————
রশিদ হারুন
১৫/০১/২০২০