সাহিত্য বলতে, কি বা কী বুঝি? সাহিত্য শব্দের অর্থ

সাহিত্য শব্দটি র বিশ্লেষণ: এই শব্দটিকে আমার কাছে মনে হয়, মহা সাগর বা মহা আকাশের মতো। তবু একটু চেষ্টা, সাগরের জল বাটি দিয়ে সেচ দেওয়া। মানুষের সুখ দুঃখ হাসি কান্না কে শাশ্বত ও চিরন্তন অনুভূতি প্রতিফলিত করে যে শিল্প সত্তা সেই শিল্পীর সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা।

কতগুলো বর্ণ মিলে একটি অর্থ-বোধক শব্দ কে আমরা চিনি ও জানি তা হলো "সাহিত্য" । এর সাথে যারা সময় ব্যয় করেন চর্চা বা সাধনা করেন ও তার ফল প্রকাশ করেন, তাকে আমরা বলি সাহিত্যিক।  এই 'সাহিত্য' শব্দটি কি, বা কী, জানতে হলে আমি এভাবে বর্ণনা করতে চাচ্ছি। হয়তো আপনার মনের মতো হতে পারে বা, না ও হবে। আমি 'সাহিত্য' শব্দটি কে  ভেঙ্গে আবার জোড়া দিতে চাচ্ছি। চলুন মূল আলোচনায় কি আসে আসুন জেনে নেই।

প্রথমে দেখি "সাহিত্য" উচ্চারিত শব্দটি কেমন হয়। আমি এই রকম পেলাম লেখিত শব্দ'টি হলো 'সাহিত্য'। আর উচ্চারিত শব্দটি= (সাহিততো)। এখন এই শব্দটি কে ইটের মতো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করব। তার পর আবার সৃষ্টিশীল শ্রমিকদের মতো মূল শব্দে রূপান্তরিত করব। এতে করে সাহিত্য কি, কী? প্রশ্নটার উত্তর মনোজগৎ  ফুটিয়ে তুলব ভাবে ও ঘ্রাণে।

সা-হি-ত-তো:

সা= সাধনা
হি=হিতৈষী
ত=তথ্য
তো=তোড়া
এখান থেকে সাধনা, হিতৈষী,তথ্য, তোড়া এই
চারটি শব্দ চয়ন করে নিলাম আরও কিছু শব্দ নেওয়া যেতো ঐ দিকে আজ না চললাম।

সাধনা, হিতৈষী, তথ্য, তোড়া সকল শব্দকে জোড়া দিয়ে হয় শিল্প। আর সেই শিল্প কে বলে সাহিত্য।

আরও একটু আলোচনা করা যাক
যেখানে শিল্পের বা বুদ্ধিমত্তা র আঁচ পাওয়া যায়, যা সাধারণ লিখন থেকে আলাদা ইন্দ্রিয় ভাব তথ্য, সাধনা ফুলের তোড়া র মতো সৃজন করা হয়। হিতৈষী কে জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা , অনুভূতি , সৌন্দর্য কে ফুটিয়ে তোলে। যেমন একজন চিত্র শিল্পীর অনবদ্য এক সৃষ্টি  জগতের বাস্তবতার ইশারা করে তা হতে পারে লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি বা পারিপার্শ্বিক মানুষের দৈনিক জীবন চিত্র। সাথে সাধনার কল্প গল্প তাল ছন্দে গঠন করে বাস্তব গাঁথুনি তে ও ভাবনার জগতে নাড়া দেয় চিত্র হয়ে ফুল ফোটে , এই সৃষ্টির শিল্পকে সাহিত্য বলে।

প্রাচ্যের সাহিত্য সমালোচক শ্রীশচন্দ্র দাস তাঁর 'সাহিত্য সন্দর্শন'গ্রন্থে ১৭ পৃষ্ঠায় সঙ্গা প্রসঙ্গে সাহিত্য কে বলেছেন-" নিজের কথা, পরের কথা, বা বাহ্য -জগতের কথা সাহিত্যিকের মনোবীণায় যে সুরে ঝংকার হয়, তাহার শিল্পসংগত প্রকাশ ই সাহিত্য।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এভাবে- 'অন্তরের জিনিসকে বাহিরের, ভাবের জিনিসকে ভাষার, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানবের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের  করিয়া তোলাই সাহিত্যের কাজ।' সাহিত্যের পরিধি ও ব্যাপক। মানুষের কল্যাণের জন্য যাঁরা জগতে যত বাণী উচ্চারণ করেছেন; যেমন ধর্মগ্রন্থে স্রষ্টার বাণীসমূহ এবং মনীষি বা মহামানব দের কল্যাণমূলক সকল বাণীই সাহিত্যের পর্যায়ভুক্ত। এর জন্য ডা. লুৎফর রহমান সাহিত্যের এ ব্যাপকতাকে উল্লেখ করে স্মরণযোগ্য একটি মন্তব্য করেছে।-'জীবনের কল্যাণের জন্য, মানুষের সুখের জন্য এ জগতে যিনি যত কথা বলিয়া থাকেন,-তাহাই সাহিত্য।'

সাহিত্য' শব্দটি বাংলা 'সহিত' শব্দ থেকে সৃষ্টি আর এই 'সহিত' শব্দ মূলের সাথে বিবাহ হয় 'য' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে সাহিত্য শব্দটি গঠিত হয়েছে। 'সহিত' শব্দের অর্থ সংযুক্ত, সমন্বিত, সঙ্গে, মিলন , যোগ সংযোগ সাথে বা সম্মিলন। 'সাহিত্য' শব্দের আভিধানিক অর্থ- সহিতের ভাব মিলন বা যোগ; অথবা জ্ঞানগর্ভ বা শিক্ষামূলক গ্রন্থ। কাব্য উপন্যাসাদি রসাত্নক বা রম্য রচনা যাতে এক মনের সাথে অন্য মনের মিলন ঘটে লেখকের বুদ্ধিমত্তার মায়াজাল বিস্তারের মাধ্যমে পাঠক হৃদয়ে লেখকের যে সংযোগ হয় পাঠের মাঠে তা থেকে 'সাহিত্য' শব্দের সার্থকতা উচ্চশিরে উদিত হয়। মূল শব্দ সহিত  হলেও আমরা সহিত না চিনলেও সাহিত্য'কে চিনি এরকম ভাবে যিনি গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখেন ও বই প্রকাশ করেন তাকে সাহিত্যিক বলে চিনি যারা এই পথে সময় ব্যয় করেন। বিভিন্ন নামে ও চিনি যেমন গল্পকার, কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক,  লেখক /লেখিকা' কে সাহিত্যিক জানি তিনি সাহিত্য চর্চা করেন বলে।

তবে সাহিত্যের আদি সৃষ্টি ছড়া, কবিতা থেকে বর্তমানে এ ধারা বিস্তার লাভ করে বিভিন্ন শাখা -প্রশাখায়। শিল্পময় সৃষ্টিশীল কবি সত্তা মনোভাব বিজ্ঞানময় হয়ে আরও উন্নত হোক পাঠে পাঠে ধ্যানে জ্ঞানে রুচিশীল সাহিত্য প্রেমীর আত্নার চিত্তের বিকাশ সাধনায় প্রসারিত হোক। যদিও সবাই সাহিত্যিক মনের মানুষ সবাই সাহিত্যিক নয়; কেন'না যারা সুস্থ মনে সাহিত্য চর্চা করেন, এবং কবি সত্তা থেকে সৃষ্ট রচনা কে সৃষ্টির কল্যাণে বিজ্ঞানময় উন্নয়নে এগিয়ে নিয়ে চলেন তিনি তিনি সাহিত্যিক বা কবি।

ইবনে মনির হোসেন