প্রেম অবুঝ । আবার প্রেম সমঝদার ।  দুটোই সত্য । একপক্ষ সামাজিক সূচকের যোগ্যতা অর্জন না করে একজনকে একতরফাভাবেই অবুঝের মতো ভালোবেসে ফেলেছে । অন্যপক্ষ তখন সমঝদারের মতো সেই ভালোবাসা স্বীকার করে নি । তার কাছে এই ভালোবাসা মূল্যহীন । সামাজিক সূচকে যে তার সমান নয় তার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে সে আগ্রহী নয় । ভালোবাসা তার কাছে শুধু আবেগসর্বস্ব বিষয় নয়, বিবেচনার বিষয়, অনেক হিসাব মেলার বিষয় ।


কবি পলক রহমান 'আলিংগন' রচনায় এমনই এক অবুঝ প্রেমিককে এঁকেছেন যার ভালোবাসা স্বীকৃতি পায় নি । মনের মানুষকে ভালোবেসে সে শুধু কষ্টই পেয়েছে । দিনে রাতে সে তার ভালোবাসার মানুষটির কথা ভাবে, তার জেগে থাকা দু'চোখ ভিজে যায় । তবু এই একতরফা ভালোবাসা থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারে না । তার মনের মানুষ সামাজিকতার সূচকবিচারে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এটা সে জানে, তবু মন থেকে সে তাকে ভুলে যেতে পারে না । এমনই অবুঝ সে।


কখনো কখনো তার মনে হয় এতদিন সে যা করে এসেছে, সবই সে ভুল করেছে । এ ভালোবাসা সফল হবার নয় । তবু সেই ভুল স্বীকার করে সে তার ভালোবাসাকে মেরে ফেলতে পারে না । যাকে সে ভালোবাসে সে তার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করেছে । কিন্তু নিজের মনের মধ্যে বেড়ে ওঠা ভালোবাসাকে সে উপেক্ষা করতে পারে না । বরং তাকে না পাবার যে কষ্ট, ভালোবাসার জনের কাছ থেকে উপেক্ষার এই যে বেদনা - সেই কষ্ট ও বেদনাকেই আলিঙ্গন করে প্রত্যাখ্যাত প্রেমিক। এ যেন মৃত্যুর স্বাদ পেতে মৃত্যুর আরও কাছে আসা।  


এই প্রেমিকের এমন জ্ঞানও আছে যে ভালবাসা অর্থ হলো মনের মানুষকে ছুঁয়ে দেখা, তাকে আলিঙ্গন করা - যা তার পক্ষে সম্ভব হয় নি । হবার আশাও নেই । তার প্রেম শুধু বুকের ভিতর ধুঁকে ধুঁকে মরে । এই যন্ত্রণা নিয়েই নিঃশব্দে তার রাতগুলি একাকীত্বের মধ্যে দিয়ে কেটে যায় । সেটাকেই নিয়তি বলে মেনে নেয় সে । এভাবেই দম ফাটানো মৃত্যুকে রুখে দেবার জন্য বুকে পাথর বেঁধে যন্ত্রণা সয়ে যায় সে ।


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ।