মানবজীবন এক দুর্লভ প্রাপ্তি । লক্ষ কোটি জীবের মধ্যে একমাত্র মানুষের আছে সভ্য সংস্কৃত জীবন যাপনের সংস্কৃতি । সভ্যতার পথ বেয়ে মানুষ গড়ে তুলেছে নানান নিয়ম, সংস্কার, আইনকানুন যা তার জীবনকে কাম্য পথে নিয়ে যায় । এক সুগঠিত সমাজ গঠনের উদ্দেশে মানুষ পারস্পরিক এক এবং একাধিক সম্পর্কে নিজেদের আবদ্ধ করেছে । এই সম্পর্ক রক্ষার একটা দায় ও দায়িত্ব আছে । মানুষ কৃতজ্ঞতার সাথে তা মেনে চলে । উপকারীর উপকার স্বীকার করে । এর সঙ্গে যুক্ত হয় নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস, আঞ্চলিক বা স্থানভিত্তিক কিছু সংস্কার ইত্যাদি ।


কবি আব্দুর রহমান আকন 'বন্দনা' শীর্ষক কবিতায় কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁদের স্মরণ করেছেন, এই জগত সৃষ্টিতে, জগতে প্রাণের সৃষ্টিতে, শিক্ষা দীক্ষা, সু অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যাঁদের ভূমিকা আছে । তাঁদের বন্দনার মাধ্যমে তিনি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ।
প্রথমেই তিনি বন্দনা করেছেন এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা প্রভু আল্লাহকে । পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষই মনে করেন এই বিশ্বভুবন, সেখানে প্রাণের এই প্রবাহ তার বিধাতার সৃষ্টি । তার প্রতি বন্দনায় মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে । এই বন্দনার সংস্কৃতি ধরে রচিত হয়েছে কতো গান, কবিতা, কাব্য, মহাকাব্য । পৃথিবীর বুকে যতো তরুলতা বৃক্ষরাজি, যতো প্রাণপ্রজাতি আছে সকলেই সেই স্রষ্টা ভগবানকে বন্দনা করে । তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে । আল্লাহ ভগবান বায়ূ দিয়ে সবার প্রান রক্ষা করেন । তিনি সর্বশক্তিমান, দয়াময়, মহান । পৃথিবীর তাবৎ জীব সর্বদা তাঁরই গুনগান গেয়ে চলে ।


কবি এরপরে বন্দনা করেছেন জন্মদাতা মা ও বাবাকে । মা ও বাবা সন্তানের জন্ম দেন এবং সব রকম প্রয়াস করেন যাতে করে সন্তান ভালোভাবে বেড়ে ওঠে । মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে বাবা ও মা তাঁদের সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দেন, তার সব রকমের স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করেন, তাকে একজন সফল মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে তার শিক্ষা দীক্ষার আয়োজন করেন । এই বাবা মায়ের প্রতি তাই আমাদের থাকে অশেষ ঋন । কৃতজ্ঞতার সাথে আমাদের তা সদা সর্বদা স্মরনে রাখা উচিত এবং আজীবন তাঁদের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করা উচিত ।


এরপরে কবি স্বাভাবিকভাবেই স্মরণ করেছেন শিক্ষক ও গুরুকুলকে যাঁরা প্রকৃত শিক্ষার আলোকে আমাদের গড়ে তোলেন । অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে তিনি আমাদের জ্ঞানের আলোকে নিয়ে আসেন । তাই কৃতজ্ঞচিত্তে কবি তাঁদেরও বন্দনা করেন । পিতামাতার পরেই গুরুর স্থান । পিতামাতা জন্ম দেন । ভরণপোষন করেন । শিক্ষাদীক্ষার আয়োজন করেন । কিন্তু সেই শিক্ষা আমরা পাই শিক্ষকের কাছে । তিনিই আমাদের গড়েপিঠে মানুষ করে তোলেন । তাই তিনিও পিতামাতার মতো সমান পূজনীয় । তাঁর প্রতিও আমাদের যথাযোগ্য কর্তব্য পালন করা উচিত এবং কখনও তাঁর মনে যেন কোনো কষ্ট না হয় এবিষয়ে যত্নবান হওয়া উচিত ।


এছাড়াও এই জগতে যাঁরা গুরুজন শ্রদ্ধেয় আছেন তাঁদেরও শ্রদ্ধা প্রনাম নিবেদন করেছেন কবি । জীবনে চলার পথে অনেকেই আমাদের পাশে থাকেন । বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন । বিপদের দিনে সহায় হন । তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা নিবেদন করেছেন কবি এবং তাঁদের প্রণাম নিবেদন করেছেন ।


জীবনে চলার পথে আমরা অনেক ভুল ভ্রান্তির শিকার হই । ইচ্ছায় অনিচ্ছায় আমাদের দ্বারা অনেক ভুল, অনেক পাপকাজ হয়ে যায় । সমগ্র মানবজাতির পক্ষে তার জন্য ভুল স্বীকার করেছেন কবি, ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং গুরুজনদের কাছে ভালো হবার আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন ।


রচনাটিতে  সাধু চলিত ভাষার মিশ্রন আছে । এটা পরিহার করা প্রয়োজন ।


তরুন কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ! !