ভালোবাসা যেমন শুধু কাছে টানে না, প্রয়োজনে দূরেও ঠেলে দেয়, তেমনই ভালাবাসা শুধু নিজের সুখে সন্তুষ্ট থাকে না, সর্বদা চায় তার প্রিয় মানুষটি তার প্রেমের মানুষটিও যেন সুখী থাকে, হাস্যময় থাকে l কবি উত্তম চক্রবর্তী "সহাস্য দেখবো বলে" রচনায় এমনই এক প্রেমিক মানুষের তার প্রিয়াকে ঘিরে যে ভাবনাগুলি কাজ করে যায় তা মেলে ধরার প্রয়াস করেছেন l


প্রেমিক মানুষটি চায় তার প্রিয়তমা সবসময় হাসিখুশি থাকুক, জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করুক l এমনটাই ছিল l জীবন থেকে সমস্ত রকমের সুখ নিংড়ে উপভোগ করেছে সে এবং তার প্রিয়া l এভাবে বেশ হাসি মজার মধ্যে দিয়েই জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল তাদের l জীবনে আনন্দ সুখের অভাব ছিল না l সর্বদা তার প্রিয়ার মুখে হাসি লেগে থাকতো l কিন্তু সে লক্ষ্য করছে বেশ কিছুকাল থেকে তার প্রিয়া আর আগের মতো হাসে না l হয়তো কোনো জটিলতা এসেছে তার জীবনে l তার মন হয়তো সেই কারণে নানবিধ অসুস্থ চিন্তায় আচ্ছন্ন আছে l পরিস্থিতির জটিলতা, মনের অশান্ত অবস্থা ছাপ ফেলেছে তার মুখমন্ডলে l মুখের হাসি উবে গেছে l সর্বদা একটা গোমড়া ভাব l প্রতিদিন প্রিয়তমার হাসিহীন গোমড়া মুখ দেখে প্রেমিক মানুষটি দুর্বল হয়ে পড়ে l তার নিজের জীবন থেকেও সুখ আনন্দ হারিয়ে যায় l কারণ সুখ কখনো একা উপভোগ করার বিষয় নয় l উভয়ের আনন্দবোধের মধ্যেই তা নিহিত l ফলে প্রিয়া যখন অসুখী, প্রেমিক পুরুষটিও অসুস্থ বোধ করে, তার জীবনযাপন সব উজ্বলতা হারিয়ে ম্লান হয়ে পড়ে l


একজন প্রকৃত প্রেমিকের মতো সর্বদা প্রিয়ার হাসিমুখ দেখাটাই তার চাওয়া l প্রিয়ার একটু হাসি দেখার জন্য সারাদিন সে অপেক্ষায় থাকে l এই প্রত্যাশায় তার সময় কেটে যায় l প্রিয়ার হাসিখুশি মুখ দেখলে তার অন্তঃকরণ যেন ভরা নদীর মতো জলে উপচিয়ে যায় l সুখের কোনো সীমা থাকে না l


অনেক অনেকদিন পর আজ প্রিয়ার হাসিমুখ দেখতে পায় সে l এই সহাস্য মুখ দেখে সুখে আত্মহারা হয়ে পড়ে l শুধু এই দিনটির জন্য সে কতোকাল থেকে অপেক্ষা করে বসেছিল l তার তৃষিত হৃদয় আজ পরিতৃপ্ত l নব আনন্দে মাতোয়ারা l এই হাসিমুখ যেন উভয় প্রেমিককে এক সত্তায় লীন করেছে l তাদের মধ্যে আজ আর কোনো দূরত্ব নেই l এক মহান সত্তার সঙ্গে তারা দুই প্রেমী যেন আমিত্ববোধে লীন হয়ে গেছে l


সুন্দর প্রেমের কবিতার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা l


***
৫ম পঙ্ক্তি - দুর্বল হয়ে যাই
শেষ স্তবকের ৪র্থ পঙ্ক্তি - তৃষিত হৃদয়