আজকের যুগ, আজকের দেশ সত্যি আজব । সাধারণ যুক্তিতর্কের দ্বারা তার সব জট খোলে না । কিছু বিষয়ের মধ্যে আপাত পরস্পর বিরোধিতা থাকে । তবু তার মধ্যে কিছু সাধারণ সূত্রের সন্ধান চলে । তার সাহায্যে বর্তমান সময়কে বুঝে নেবার একটা প্রয়াস থাকে ।


কবি আশুতোষ দালাল 'লোভী' শীর্ষক রচনায় সেই প্রয়াসই করেছেন বলে মনে হয় ।


বর্তমান যুগে সবাই যেন খুব ব্যস্ত । কারো হাতে দু দন্ড সময় নেই । সবসময় যেন ছুটোছুটি লেগে আছে । কিসের জন্য ছুটোছুটি ? সেটাও সবসময় খুব একটা পরিস্কার নয় । কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো দেখা যায় এমনিই ছুটছেন । নির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই । তবু ছুটছেন । ভীষন ব্যস্ত । যার পেছনে ছুটছেন, যে কারণে ছুটছেন তার থেকে যে বেশ কিছু উপার্জন করছেন এমনও নয় । সেদিকে না ছুটে অন্য কোনো কাজ করলে যে কিছু আয় করতে পারবেন, তেমন সম্ভাবনাও নেই । অর্থাৎ যাঁদের সময়ের কোনো মূল্য নেই তাঁদের হাতে সময়ও নেই । অকারণে, কোনো বিশেষ স্বার্থ ছাড়াই তাঁরা নিজেদের সময়কে দিয়ে যাচ্ছেন অর্থহীন লক্ষ্যের পিছনে ।


মানুষ প্রতিনিয়ত প্রয়াস করে চলে । যার যেমন কাজ, সেই অনুসারে সকলেই তার সেরাটুকু অর্জন করার চেষ্টা করে । কিন্তু সকলে সমান সফল হয় না । সবাই সমান স্বীকৃতি পায় না । কেউ তার কাজের যথাযোগ্য স্বীকৃতি পেয়ে যান, কারো ভাগ্যে স্বীকৃতি আসে না । কিন্তু প্রয়াসের কষ্ট কিন্তু সবার সমান । যিনি সফল হলেন, স্বীকৃতি পেলেন, এবং সর্বোত্তম পরিশ্রম করেও যিনি সফলতা, স্বীকৃতি পেলেন না - বিফল হয়েছেন বলেই তাঁর প্রয়াসের গুরুত্ব কমে যায় না ।


আবার কিছু ক্ষেত্রে মানুষ কোনো ঘটনার সাপেক্ষে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সেটিও আজব । সন্তুষ্ট হলেও মুখ ফুটে তা স্বীকার করেন না । নিজের সুখ নিজের মধ্যেই চেপে রাখেন । প্রকাশ করেন না । ওদিকে যার কর্মে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তাঁর মধ্যে কিন্তু প্রত্যাশা থেকে যায়, লোভ থেকে যায় যে তিনি অন্তত ধন্যবাদটুকু পাবেন । এই আশাটুকু নিয়ে তিনি প্রাণাতিপাত পরিশ্রম করে যান । শেষে যখন সেটা জোটে না, তখন অগত্যা নিজেকেই দোষারোপ করেন তিনি, হয়তো তাঁর দিক থেকেই সেবায় কোনো ত্রুটি থেকে গেছে । তিনিই হয়তো সবটা ঠিকমতো করে উঠতে পারেন নি । এই আক্ষেপটুকুই তাঁর সান্ত্বনা হয়ে ওঠে ।


যাঁরা কাজ করে যান, তাঁদের কাজের গ্রহণযোগ্যতা কতখানি, মানুষ তা পছন্দ করছে কি না তা জানার আগ্রহ থাকে তাঁদের । গভীর আগ্রহ নিয়ে তাঁরা মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন হয় তা জানার অপেক্ষায় থাকেন । যা প্রতিক্রিয়া হয় তা শোনেন, জানেন, উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন । মনে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা প্রাপ্তির আশা থাকে । ফ্যালফ্যাল করে যেন সেই আশায় অপেক্ষা করে বসে থাকেন । যখন বিপরীত দিক থেকে পরিতৃপ্তির বার্তা পান না, তখন নিজেরই ত্রুটি, দুর্বলতা মেনে নিয়ে নিজেকেই সংশোধন করার প্রয়াস করেন । আবার যেন সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয় । নতুন করে মনকে প্রবোধ দিতে হয় । অর্ধেক বিফলতা যে অর্ধেক সফলতাও বটে - মনকে এই সান্ত্বনা দিতে হয় । হয়তো তা মিথ্যা সান্ত্বনা । তবু এর মধ্যে দিয়েই নতুন করে কাজের প্রেরণা আসে ।


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ।