প্রতি সংসারে একজন কর্তা থাকেন l অর্থাৎ গোটা পরিবার যার ওপর নির্ভরশীল l তার সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা, দায়িত্ব ঝামেলা ইত্যাদি বিষয়কে মাথায় রেখে 'সংসারকর্তা' কবিতাটি রচনা করেছেন কবি মুহাম্মদ রুহুল আমীন l


সংসার একটি অত্যন্ত দায়িত্ব পালনের জায়গা l অনেক সুখ হয়তো আছে, সঙ্গে আছে প্রচুর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিষয় এবং নির্ভরশীল প্রতিটি মানুষকে খুশি করার চাপ l


সংসারজীবনে প্রবেশ করার আগে মনের মধ্যে অনেক স্বপ্ন থাকে l থাকে অনেক আশঙ্কাও l এই আশঙ্কাকে জয় করে অনেকেই সংসারজীবনে প্রবেশ করতে ভয় পান l এরকম যাঁরা আছেন, তাঁদের জীবনটা শূন্য ছাড়া আর কিছু নয় l অসম্পূর্ণ জীবন তাঁদের l যতই ঝামেলা থাক সংসারজীবনে, তবু তার অভিজ্ঞতা পাওয়াটা জীবনকে পূর্ণ করে l তাই সংসারজীবন থেকে বিমুখ থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় l বিমুখ থাকা যায় না l এই জীবন সম্বন্ধে একটা ভাবনা থাকে, আশঙ্কা থাকে, না জানি এই অভিজ্ঞতা কতো সুখকর বা দুঃখময় হবে, সারাটা জীবন শুধু কলুর বলদের মতো ঘানি টেনে যেতে হবে কি না, তার জন্য জীবনভর শুধু ছটপট করে যেতে হবে কি না এই দুশ্চিন্তা থাকে -  তবু শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ এই বাঁধনে বাঁধা পড়েন এবং যেমন করেই হোক সংসারজীবনের আনন্দ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তার দায়িত্ব পালনের জন্যও সচেষ্ট থাকেন l
প্রকৃতপক্ষে একটি সংসার চালনা করা খুব সহজ কাজ নয় l যিনি গৃহকর্তা থাকেন তাকে পরিবারের সকল সদস্যের প্রয়োজন মিটাতে হয়, সকলের মন জুগিয়ে চলতে হয় l বিষয়টি কঠিন বটে l সংসারে সব থেকে বেশি পরিশ্রম তাঁকেই করতে হয় l এই পরিশ্রম শুধু দেহের নয়, মনেরও l শরীর ও মনের ওপর অনেক ঝড় ঝাপটা সহ্য করে তাঁকে সংসারচাকা টেনে নিয়ে যেতে হয় l


পরিবারকর্তাকে দেখতে হয় পরিবারের সদস্যদের কার কিরকম মেজাজ l সেই অনুযায়ী অনেক কথার ভাঁজ তাকে সহ্য করতে হয় এবং সব জেনে বুঝেও অনেক সময় নীরব থাকতে হয় l কারণ তার মধ্যেই সংসারের মঙ্গল নিহিত থাকে l কথা বললেই বিপত্তির সম্ভাবনা l


সংসারকর্তা সকলের সব প্রয়োজন মিটিয়ে চলেন, অন্তত মিটিয়ে চলার চেষ্টা করেন l কিন্তু তাঁর নিজের প্রয়োজনের দিকটি, তাঁর নিজের শখ আল্হাদের বিষয়গুলি গুরুত্ব পায় না l সেদিকটা কেউ লক্ষ্য রাখে না l তাঁর যেন কোনো শখ আল্হাদ থাকতে নেই l উল্টো কার কি অভাব তিনি পূরণ করতে পারেন নি, সেই অপবাদ তাঁকে শুনতে হয় l তাঁর খোঁজ করার মতো কারো হাতে সময় থাকে না l এব্যাপারে উদাসীন সবাই l কিন্তু তার থেকে পাবার বিষয়টিতে সবাই বেশ সজাগ থাকেন l


নিজের দুঃখ, বেদনা গোপন করে সংসারকর্তা সর্বদা সচেষ্ট থাকেন কেমন করে পরিবারের সকলকে খুশি করা যায় l সারাটা দিন ধরে সকলের সব প্রয়োজন মিটিয়ে দিনের শেষে জীবনধারণের জন্য আবশ্যিক খুদকুড়েটুকু গ্রহণ করে সংসারকর্তা তাঁর জীবনধারণ করে চলেন l কেউ জানতেই পারে না, জানার চেষ্টাও করে না, সংসারের বাকি সকলের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যে মানুষটি উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন, তাঁর দিনগুলি কেমন কাটছে l


একটি অতি সাধারণ বিষয়কে অসাধারণ সহমর্মিতার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন কবি l


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !!