মানুষ বড়ো একা, যতদিন না কারুর সঙ্গে তার গাঁটছাড়া বেঁধে যায় l একবার সেই গাঁটছাড়া বেঁধে গেলে, সেই বাঁধন ছিঁড়ে ফেলা কঠিন l ভবঘুরে মানুষের একাকিত্ব এবং কোনো একজনের সঙ্গে বাঁধা পড়ার পর তার সেই বন্দীদশা, যা সে ভালোই অনুভব করে, সেই বিষয়ে কবিতা রচনা করেছেন কবি অদিতি চক্রবর্তী 'ভবঘুরে' শিরোনামে l


প্রতিটি মানুষ তার নিজের অস্তিত্বের কাছে বড়ো একা l এই একাকিত্ব নিয়ে তাকে বহুদিন কাটাতে হয় l কিন্তু সেই একা মানুষ একদিন সম্পর্কে বাঁধা পড়ে কোনো একজনের সঙ্গে l এই বাঁধন প্রেম ও ভালোবাসার l অনিবার্যভাবেই তা একদিন আসে এবং তার স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় নর ও নারীকে l কোনোভাবেই এই আকর্ষণকে এড়ানো যায় না l দমকা বাতাসের মতো, হড়কা বানের মতো তা এসে উপস্থিত হয় এবং মানুষ, প্রতিটি নর, প্রতিটি নারী, সেই বাঁধনে বাঁধা পড়ে l দিনে দিনে সেই বাঁধন শক্ত থেকে আরও শক্ত হয় l হৃদয় মন জুড়ে পাষানের মতো সেই সম্পর্ক তার আসন পেতে বসে l যুবক বয়সে এই পারস্পরিক আকর্ষণের সূত্রপাত এবং পরস্পরকে কাছে নিয়ে আসা l শৃঙ্গাররসে জারিত হয়ে তখন শুধু নিজেকে আরও সুন্দর করে তোলার প্রয়াস থাকে l সঙ্গীর কাছে নিজেকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা, নানা সাজে নিজেকে সজ্জিত করে তোলা তখন মুখ্য কাজ হয় l জায়গামতো লাল টিপ, সিঁথির সজ্জা, লাল আরও লাল টুকটুকে হয়ে সম্পূর্ণরূপে একে অপরের হয়ে যায় l প্রকৃতির সৌন্দর্যের বাঁধনে বাঁধা পড়ে পুরুষ l বাঁধা পড়ে নাকের ফুলে, বাঁধা পড়ে প্রেম ও অভিমানে l কখনো সম্পর্কের টানাপোড়নে রাগ অভিমানে শ্বাসাঘাত তীব্র হয় l ক্রমাগত একে অপরকে ছুঁয়ে কাঁপুনির অনুভব হয় l যা কিছুই ঘটুক না কেন, শেষ পর্যন্ত এই ভালোবাসা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া যায় না l একদিন এই প্রেমের জন্ম হয়েছিল, তারপর নানা আদানপ্রদানে সেই সম্পর্ক গভীর হয়েছে, শেষে যমগিঁঠ বাঁধনে বাঁধা পড়েছে, যে বাঁধন কখনো খোলে না l প্রকৃতি সাক্ষী থাকে এমন অটুট সম্পর্কের l জোৎস্নারা সেই থেকে আজও ফিসফিস করে যায় l  যতো সব ভবঘুরে বাঁধনে বেঁধে যায় l


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা l