বেশ কয়েকদিন ধরে বাংলা কবিতার এ আসরে আসতে পারিনি। আজ এসেই এখানে প্রকাশিত শোকবার্তাটি দেখে চমকে উঠলাম। আমাদের প্রিয় কবি শহিদ খাঁন গত ১৪ অক্টোবর ২০২০ তারিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন তার জীবনের সকল ত্রুটি বিচ্যূতি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে বেহেশতের সম্মানিত অধিবাসীদের দলভুক্ত করে নিন!  


প্রয়াত কবি’র সাথে কবিতার মাধ্যমেই আমার পরিচয়, এ আসরেই। আমার কবিতায় এ আসরের যে সামান্য ক’জন কবি মন্তব্য করে আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন, শহিদ খাঁন তাদের একজন। অত্যন্ত সুদর্শন শ্মশ্রুমন্ডিত এ কবি’র চেহারাতেই ফুটে আছে সৌম্যের এক অপরূপ প্রতিচ্ছবি। নিজের পরিচয়ে তিনি লিখেছেন যে তিনি "একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, কন্ঠশিল্পী এবং একজন ইসলামিক আলোচক”।  


বেদনার সাথে লক্ষ্য করলাম, কবির শেষ কবিতাটিতে আমি মন্তব্যে তিনি কেমন আছেন জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন মনে হয়, কবি তার অসুস্থতার কারণেই আমার সে প্রশ্নের জবাব দিয়ে যেতে পারেন নি। আমার মত আরো অনেকেই তাকে এ প্রশ্নটি করেছিলেন, কিন্তু তিনি কারো প্রশ্নেরই জবাব দিয়ে যেতে পারেন নি। এ আসরে কবি শেষ কবিতাটি লিখেছিলেন গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ তারিখে, কবিতার নাম “সত্যের পথে”। সত্যের পথে থেকেই তিনি এমন একটি শিরোনামে তার জীবনের শেষ কবিতাটি এখানে প্রকাশ করেছিলেন। তার সেই কবিতাটিতে আমার মন্তব্য ছিলঃ


"আপনার এ সত্যের জয়গানে কন্ঠ মেলাচ্ছি।
কেমন আছেন কবি? আমার আগেও অনেক পাঠক পাঠিকা এ প্রশ্নটি করে গেছেন। মন্তব্যের উত্তর দিতে হবে না, সময় করে শুধু একবার জানিয়ে যান, আপনার শরীর এখন কেমন আছে?"


১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত আমার একটি অনুবাদ কবিতা “অনুরক্তি”র প্রথম মন্তব্যটিই ছিল কবি শহিদ খাঁন এর, এবং সেটাই ছিল আমার কোন কবিতায় তার শেষ মন্তব্য। সেখানে তিনি লিখেছিলেনঃ “অনবদ্য জীবনমুখী কাব্য প্রয়াসে মন ভরে গেল সুপ্রিয় কবি বন্ধুবর। শুভেচ্ছা রইল। ভাল থাকবেন সর্বোক্ষণ।”  


আমি জানিনা, হৃদরোগ ছাড়াও এই করোনাকালে কবি করোনাক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, করোনা বিশেষ করে হৃদরোগীদের একবার ধরতে পারলে আর ছাড়ে না, সে জন্যেই আমার এ শঙ্কা! কেউ যদি একটু খবর নিয়ে কবি’র পরিবারের কেমন অবস্থা তা জানাতে পারেন, তাহলে বাধিত হবো। এ মুহূর্তে তাদের কোন সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা, তা জানতে পারলে এবং তা থেকে থাকলে কিছু করতে পারলে ভাল লাগতো। এ আসরের কোন কবি’র বাড়ী যদি কেশবপুরে কিংবা বৃহত্তর যশোর এলাকায় হয়ে থাকে, তবে তিনি বা তারা একটু খোঁজ নিয়ে জানাতে পারেন। মানুষের বিপদের দিনে তার পাশে দাঁড়ানোর নামই মানবতা।  


কবির শোকসন্তপ্ত স্ত্রী এবং একমাত্র পুত্রসন্তানের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন এ চরম বিপদের দিনে তাদের সহায় হউন এবং তাদেরকে সকল বিপদাপদ থেকে সুরক্ষা করুন এবং ধৈর্য্ধারণের শক্তি দিন!


এ আসরের সকল প্রিয় কবিগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি।
ধন্যবাদান্তে,


খায়রুল আহসান
ঢাকা
২৩ অক্টবর ২০২০