অনামিকা দেখতে মোটেও সুন্দরী ছিলনা, তবে
চোখে তার যাদুর মায়া ছিল। অনন্তও দেখতে তেমন
সুদর্শন ছিলনা, তবে তার একটা পেলব মন ছিল।
অনামিকার অনেক ছেলেবন্ধু ছিল, নিছক বন্ধু,
যাদের সান্নিধ্যে সে জীবনের এক বিরাট শূন্যতাকে
ভুলে থাকতে চাইতো। অনন্তও বন্ধু বৎসল ছিল, তবে
হৈহৈ করা বন্ধু নয়, পরিমিতিবোধ সম্পন্ন বন্ধুদের নিয়ে
সে আড্ডা-আলাপচারিতা পছন্দ করতো। দু'জনের
জীবনধারা দু'রকম ছিল, তবুও কোথায় যেন একটা
মিলও ছিল। দু'জনই জীবনকে নিয়ে বেশ ভাবতো।


সে সময়ের এক বিখ্যাত মুভি দেখে বের হবার সময়
অনন্তের সাথে অনামিকার পরিচয় ঘটেছিলো। প্রথম
দেখাতেই ভাল লেগেছিল, তেমনটি দু'জনের কারো
মনে হয়নি, তবে ভালোলাগার একটু পরশ নিয়েই
দু'জনে বাড়ী ফিরে এসেছিল। তাদের মেলামেশা খুবই
সীমিত ছিল। অভিসারের সুযোগ সুবিধাও কম ছিল।
একদিন কয়েকঘন্টার অভিসার শেষে অনন্ত একটা
থ্রী-হুইলারে করে অনামিকাকে তার বাড়ীতে পৌঁছে
দিচ্ছিল। পথের বাতাসে অনামিকার চুপিসারে বলা
কথাগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল, শুধু তার হাসিটুকু ছাড়া।


সেদিন অনন্ত খেয়াল করেছিল, অনামিকার খুব ঠান্ডা
লেগেছে। সে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে
অনামিকার গলায় পেঁচিয়ে দিয়েছিল। আর হাত বুলিয়ে
অনামিকার উড়ন্ত চুলগুলোকে বশ মানাতে প্রাণপণ
চেষ্টা করে যাচ্ছিল। এসব কিছুই অনামিকা অভিভূতের
ন্যায় উপভোগ করেছিল, কেননা এ রকম ভালবাসার
ছোঁয়া সে জীবনে আর কখনো পায়নি। অনামিকাকে
বাড়ী পৌঁছে দিয়ে একই থ্রী-হুইলারে অনন্ত ফিরে এসেছিল।
ফিরে এসে অনন্ত অনেক রাত পর্যন্ত বিনিদ্র ছিল। বারবার
তার চোখে ভেসে উঠছিলো অনামিকার ছোট্ট 'বাই বাই'।


যেটা গল্পের শুরু হতে পারতো, সেটা হয়েছিল শেষ।
অনন্তের চালক ছিল হৃদয়, আর অনামিকার, মাথা।
ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনামিকা পৃ্থক পথ বেছে
নিয়েছিল। অনন্ত খুব মুষঢ়ে পড়লেও, শেষমেষ নিজেকে
সামলে নিতে পেরেছিল। সে মেনে নিয়েছিল, পৃ্থিবীতে
সবকিছু সরল অংকে মিলেনা। মিললে আর যাদবের
পাটিগণিতের প্রয়োজন থাকতোনা। অনামিকাও এ নিয়ে
অনেক ভেবেছে। সম্পর্কের যবনিকা নিজ হাতে টেনে
দিলেও, অনন্তের রুমালটা সে যে টানা দু'বছর গলায় পেঁচিয়ে
ঘুমাতো, একথা অনন্তকে তার আর কখনো বলা হয়নি।


পাদটীকাঃ  গল্প গল্পই, কখনো সত্যাশ্রয়ী, কখনো কল্পনাশ্রয়ী। গল্পে যেমন কবিতা বলা যায়, কবিতায়ও গল্প তেমন দোষের নয়। পাঠকেরা কি বলেন?


ঢাকা
০৮ মে ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।