মাঝে মাঝে এক ভয়ঙ্কর ভাবনা আমার মাথায় আসে।
একটা গন্ডমূর্খ হবার অভিলাষ মনে দোলা দিয়ে যায়।
একেবারে নিরেট গন্ডমূর্খ, যার জ্ঞান আছে, বিদ্যা নেই।
যার মুখে কথ্য ভাষা আছে, কিন্তু মনে কোন ভাব নেই।
যার গতি আছে, তবে গন্তব্য নেই, মত আছে, মন্তব্য নেই।
যার বেগ আছে, দিশা নেই। আবেগও আছে, প্রকাশ নেই!


আমি যদি গন্ডমূর্খ হতেম, তুমিও নিশ্চই তাই হতে। তখন
আমরা শুধু আমাদের নিয়েই থাকতাম। আমাদের কোন
ফেসবুক থাকতোনা, স্মার্টফোন কি জিনিস সেটা আমরা
আদৌ জানতাম না। আমাদের কোন ল্যাপটপ থাকতো না,
কোন বিজ্ঞাপনী আচার আমাদের মনে শেকড় ছড়াতোনা।
কোন আয় রোজগার থাকতোনা, হালখাতাও থাকতোনা।


তাই কোন হিসেব নিকেশের বালাই ও থাকতোনা। কোন
পার্টিতে যেতে হতোনা, আর কোন পার্টি দিতেও হতোনা!
কবিতা, গান, সাহিত্য বা অন্য কোন ধ্রুপদি শিল্প কখনোই
আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকতোনা! আমরা থাকতাম
আমাদের নিজেদেরকে নিয়েই! আমি গান গেয়ে নদীতীরে
গুন টেনে চলতাম, যেমন এখনো টেনে চলেছি, অন্যরকম!


তুমি পাটখড়ির চুলোয় ফুঁ দিয়ে রাঙাতে তোমার ফর্সা মুখ।
বাচ্চারা হামাগুরি দিয়ে খেলে বেড়াতো নিকানো উঠোনে।
রাত্তিরে বৃষ্টি হলে দুজনে মিলে মশারীর ছাদে বাটি রাখতাম
যেন দুটো ছাদ ভেদ করে জল না ভেজায় বাচ্চাদের শরীর।
সেই কাকডাকা ভোরে শুরু হতো আমাদের সরল দিনপঞ্জী,
সন্ধ্যার কিছু পরে সলতেটা নিভিয়ে ক্লান্ত দেহ পেত সুখনিদ্রা।


সে রকম হলে কেমন হতো কে জানে! তবে আমাদের ধর্ম
নিষেধ করেছে গন্ডমূর্খ হয়ে থাকতে। ভাবি, সারাটি জীবন
ধরে যে জ্ঞান আহরণ করলাম, তাকি আসবে আমার কোন
উপকারে, শেষ বিচারের দিনে? এ জ্ঞান, এ শিক্ষা কি তবে
করতে পারবে আমার শেষরক্ষা? বিদ্যালোকে উদ্ভাসিত হয়েও
যে সত্যকে খুঁজে পাইনি, তমসাচ্ছন্ন গন্ডমূর্খ হয়ে তা পেতাম কি?


ঢাকা
১০ জুলাই ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।