এইতো, গত জুনেই তো তোমার ওখান থেকে ঘুরে এলাম,
তুমি হয়তো প্রপাতের ওপারে ছিলে, আমি এপারে ছিলাম।
হয়তো তোমার সাথে দেখা হয়েছিল, হয়তো বা হয় নাই,
মাথার উপর ঘুরঘুর করছিল তোমার সঙ্গী সাথীরা সবাই।
নিভৃতে আলাপও করেছিল কেউ কেউ। তবে তোমার মত
এমন নিঃসঙ্গ কাউকেও দেখিনি, এতটা উদাসী, আনত!


চিকণ দুটি পায়ে ভর করে তুমি স্থবির দাঁড়িয়ে আছো,
সবাই উড়ে বেড়াচ্ছে, অথচ তুমি দাঁড়িয়ে কি ভাবছো?
পেছনে রংধনুর রঙীন রেখা, পানিতেও তার প্রতিফলন,
তোমার সামনে আজ যেন হায়, শুধুই বিবর্ণ জীবন!
তোমার পদতলে যে এবড়ো-থেবড়ো সুকঠিন শিলাদন্ড,
সে কি তোমারই প্রতীক? যেন এক টুকরো জীবনখন্ড?


ধূসর কুহেলিকাকে তুমি পেছনে রেখেছো, রঙধনুর পাশে,
স্বচ্ছতার পানে তুমি তাকিয়ে রয়েছো, স্বচ্ছ সাথীর আশে।
তোমাকে এভাবে দাঁড়ানো দেখতে মনে হাহাকার বাজে,
সঙ্গী বিহনে দাঁড়িয়ে বিজনে এমন বেদনাবিধুর সাজে!
পাখি তোমার পাখা মেলে দাও, দাঁড়িয়ে থেকোনা এভাবে,
হয়তো তুমি সাথী পেয়ে যাবে ঐ অনন্ত আকাশ মাঝে।


পাদটীকাঃ   বছর কয়েক আগে আমার এক বন্ধু মারা যান। তার মৃত্যুর পরে অপর এক বন্ধু সহমর্মিতা নিয়ে এগিয়ে আসেন। নিজ ছেলের সাথে মৃত বন্ধুর একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়ে সবাইকে কানাডা পাঠিয়ে দেন। বন্ধুপত্নীও এখন তাদের সাথে কানাডা প্রবাসী, মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ। তিনি কাল সকালে তার ফেইসবুক পেজে এ ছবিটা পোস্ট করেন। ছবিটি নায়াগ্রা ফলসে তোলা।
বন্ধুপত্নী ছবিটিতে কোন শিরোনাম বা মন্তব্য দেন নি। নায়াগ্রা ফলসে হাজার হাজার উড়ন্ত পাখির মাঝে এরকম একটি নিঃসঙ্গ, উদাস ও স্থবির পাখিকে দেখে আমার কেন যেন মনে হলো, এটা যেন তারই জীবনের এক মূর্ত প্রতীক। পেছনে ফেলে আসা রঙিন দিনগুলো, ক্রমক্ষয়িষ্ণু ঝাপসা হয়ে যাওয়া অতীত, বেমানান একাকীত্ব, সামনে মেয়ের জীবনের উজ্জ্বল কিন্তু নিজের অনিশ্চিত ভবিষৎ, তার জীবনের ইত্যকার বৃত্তান্তগুলো যেন এ ছবিতে মূর্ত। এ ধরনের এক অনুভূতি থেকেই আমার এ কবিতাটি লেখা।
পাঠকদের অনুধাবনের সুবিধার্থে সেই নিঃসঙ্গ পাখীর ছবিটা আপাততঃ আমার প্রোফাইল পিকচার হিসেবে আপলোড করলাম। এখানে ছবি আপলোড হতে বেশ কয়েকঘন্টা সময় লেগে থাকে।


ঢাকা
৩১ অক্টোবর ২০১৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।