একজন প্রেমিক পুরুষ খুঁজে পাওয়া সহজ, শুধু যদি-  
তুমি সততার সাথে তোমার চাওয়াগুলো চাইতে পারো।
আয়নার সামনে দিগম্বর হয়ে তার পাশে দাঁড়াও, যেন
সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারে অধিকতর শক্তিশালীরূপে,  
আর তোমাকে অধিকতর কোমল তরুণী এবং রমণীয়রূপে।  
অকপটে প্রকাশ কর তোমার প্রশস্তি, লক্ষ্য কর তার অঙ্গসৌষ্ঠব,
স্নানান্তে লাল চোখে সলাজ হেঁটে এসে তার তোয়ালে খুলে ফেলা,  
ঝাঁকুনি দিয়ে দিয়ে তার মূত্র ত্যাগাভ্যাস, এমন সকল খুঁটিনাটি
সস্নেহে লক্ষ্য কর, যা তাকে একজন পুরুষ এবং তোমার একমাত্র
কাম্য পুরুষে পরিণত করে! তাকে উপহার দাও তোমার রমণীয়
সবকিছু- তোমার দীর্ঘ কেশের সুঘ্রাণ, তোমার দু’স্তনের মধ্যবর্তী
স্বেদকস্তুরি, রজঃস্রাবের গরম অভিঘাত, এবং তোমার সকল
সীমাহীন রমণীয় ক্ষুধার চাহিদা। হ্যাঁ অবশ্যই, একজন পুরুষের
ভালবাসা পাওয়া খুবই সহজ, তবে এটাকে মেনে নিয়ে যে তাকে
ছাড়াই হয়তো তোমাকে পরে থাকতে হতে পারে, প্রাণহীন হয়ে।  
এমন জীবন মেনে নিয়ে যে তুমি আগন্তুকদের মাঝে ঘুরে বেড়াবে
লক্ষ্যহীন চোখে। তোমার দু’চোখ তার অনুসন্ধান পরিত্যাগ করবে,  
তোমার কান কেবল তারই তোমায় নাম ধরে ডাকা শেষ কন্ঠস্বরটি
শুনতে পাবে। আর তোমার যে দেহবল্লরী, যা একসময় তার স্পর্শ
পেয়ে ঘষা পিতলের ন্যায় দীপ্ত হতো, নিষ্প্রভ ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।    


মূলঃ কমলা সুরাইয়া/কমলা দাস
অনুবাদঃ খায়রুল আহসান


কবি পরিচিতিঃ কমলা সুরাইয়ার পূর্বনাম ছিল কমলা দাস ওরফে কমলা মাধবীকুট্টী। ‘মাধবীকুট্টী’ তার লেখনি-নাম ছিল। কেরালা রাজ্যের ত্রিশুর জেলার পুণ্যায়ুর্কুলাম নামক স্থানে তিনি ৩১ মার্চ ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ভিএম নায়ার ছিলেন তখনকার দিনে মালয়ালাম ভাষায় বহুল প্রচলিত ‘দৈনিক মাতৃভূমি’ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং মাতা নালাপাত বালামনি আম্মা ছিলেন মালয়ালাম ভাষার একজন যশস্বী কবি। তার পিতামাতা পরে কোলকাতায় স্থানান্তরিত হন, যেখানে তার পিতা বিখ্যাত ওয়ালফোর্ড ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির একজন ‘সিনিয়র অফিসার’ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাই তার শৈশব এবং বেড়ে ওঠার বয়সটা কেটেছিল কোলকাতায়ই। তার মায়ের মত কবিতার প্রতি তার ঝোঁক ও অনুরাগ প্রকাশ পায় শৈশব থেকেই। মা এবং মামা মালয়ালাম ভাষার প্রখ্যাত লেখক নালাপাত নারায়ণা মেনন এর প্রভাবে তার কাব্যপ্রতিভা বিকশিত হয়।  


মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি মাধব দাস নামক একজন ব্যাঙ্কারের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন, যিনি তার লেখার স্পৃহায় প্রেরণা যোগ করেন। ষাটের দশকটি ছিল কোলকাতার বিকাশমান সাহিত্য শিল্পকলা নিয়ে তুমুল কোলাহলপূর্ণ একটি সময়। কমলা দাস সে সময়ে ইংরেজী ভাষায় ধর্মীয় প্রথা নিয়ে লেখা অন্যান্য কিছু ভারতীয় কবিদের মাঝে অন্যতম হিসেবে আবির্ভূত হন। মালয়ালাম ভাষায় লেখা তার ছোটগল্প এবং ইংরেজী ভাষায় লেখা কবিতার জন্য তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও তিনি সংবাদপত্রের ‘সিন্ডিকেটেড কলামিস্ট’ হিসেবেও কাজ করেন এবং প্রসিদ্ধি অর্জন করেন। নারী এবং শিশু বিষয়ক তার বহু লেখা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কবিতা বিষয়ক তার একটি খেদোক্তি আজও প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। তিনি সে সময়ে বলেছিলেন, ‘Poetry doesn’t sell in this country (India)’ (এ দেশে  কবিতা বিকোয় না)।  


তার প্রথম ইংরেজী কবিতার বই এর নাম Summer in Calcutta, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ভালবাসা এবং তার ছলাকলা। ওনার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘The Descendents’ এ তিনি নারী বিষয়ক অনেক প্রসঙ্গ নিয়ে খোলাখুলি লিখেছিলেন, যা সে সময় প্রথাবিরোধী বিবেচ্য ছিল। আলোচ্য ‘The Looking Glass’ কবিতাটিও সেটি থেকে নেয়া। এমন বিষয় নিয়ে এতটা খোলাখুলি লেখার জন্য তাকে সে সময়ে ফরাসী কবি Marguerite Duras এবং আমেরিকান কবি Sylvia Plath এর সাথে তুলনা করা হতো। মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি তার দুঃসাহসিক আত্মজীবনী ‘My Story’ লিখে রাতারাতি আলোচিত এবং বিখ্যাত হন। বইটি প্রথমে তিনি মালয়ালাম ভাষায় লিখেছিলেন এবং পরে তা তিনি নিজেই ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। বইটি নিয়ে যখন আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে, তখন অবশ্য তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে তার আত্মজীবনীর কিছু প্রসঙ্গ কল্পনাশ্রয়ী ছিল। এজন্য তাকে কেউ কেউ ‘যশাকাঙ্খী’ মনে করলেও, ২০০৯ সালে ‘The Time’ তাকে ‘The mother of modern English Indian Poetry’ আখ্যায় ভূষিত করে।      


তিনি একটি রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার ধমনীতে রাজ বংশীয় রক্ত প্রবাহমান ছিল। এতদসত্ত্বেও, তার স্বামীর মৃত্যুর পর সাদিক আলী নামে তৎকালীন একজন মুসলিম লীগ এমপি তার পাণিপ্রার্থী হলে তিনি তার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তার অনুরোধে তিনি ১৯৯৯ সালে ৬৫ বছর বয়সে ধর্মান্তরিত হয়ে কমলা সুরাইয়া নাম গ্রহণ করেন। নিজ দেশে তার এ স্বধর্মত্যাগ কঠোরভাবে সমালোচিত হয়। ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি স্বল্পকালীন সক্রিয় থাকা কালে ১৯৮৪ সালে ভারতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং পরাজিত হন। সাহিত্যিক জীবনে তিনি বহু পুরস্কার অর্জন করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ    


Nominated and shortlisted for Nobel Prize in 1984
Asian Poetry Prize-1998
Kent Award for English Writing from Asian Countries-1999
Asian World Prize-2000
Ezhuthachan Award-2009
Sahitya Academy Award-2003
Vayalar Award2001
Kerala Sahitya Academy Award-2005
Muttathu Varkey Award


কবিতা পাঠ এবং সাহিত্য আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে তিনি পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমণ করেন এবং বহু শিক্ষাঙ্গণে পদচারণা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো University of Duisburg-Essen, University of Bonn, Adelaide Writer's Festival, Frankfurt Book Fair, University of Kingston, Jamaica, Singapore, and South Bank Festival (London), Concordia University (Montreal, Canada), ইত্যাদি।  


কানাডিয়ান লেখক  Merrily Weisbord এর সাথে তার বহদিনের সখ্য ছিল। ২০১০ সালে মেরিলী তার বহু বছরের পুরনো বন্ধু কমলা দাসকে নিয়ে একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন, যার নাম ‘The Love Queen of Malabar’। বইটি রাতারাতি সুখ্যাতি অর্জন করে।  


৩১ মে ২০০৯ তারিখে কমলা সুরাইয়া ওরফে কমলা দাস ৭৫ বছর বয়সে পুনের একটি হাসপাতালে মারা যান। সেখান থেকে তার মরদেহ কেরালায় নিয়ে এসে তিরুভানাথাপুরাম জামে মাসজিদ প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।  


(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং ইংরেজী কবিতার ওয়েবসাইট ‘পোয়েমহান্টার’ এ ইংরেজীতে প্রকাশিত কবির জীবনী থেকে, বঙ্গানুবাদ আমার)


মূল কবিতাটি নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ


The Looking Glass


Getting a man to love you is easy
Only be honest about your wants as
Woman. Stand nude before the glass with him
So that he sees himself the stronger one
And believes it so, and you so much more
Softer, younger, lovelier. Admit your
Admiration. Notice the perfection
Of his limbs, his eyes reddening under
The shower, the shy walk across the bathroom floor,
Dropping towels, and the jerky way he
Urinates. All the fond details that make
Him male and your only man. Gift him all,
Gift him what makes you woman, the scent of
Long hair, the musk of sweat between the breasts,
The warm shock of menstrual blood, and all your
Endless female hungers. Oh yes, getting
A man to love is easy, but living
Without him afterwards may have to be
Faced. A living without life when you move
Around, meeting strangers, with your eyes that
Gave up their search, with ears that hear only
His last voice calling out your name and your
Body which once under his touch had gleamed
Like burnished brass, now drab and destitute.


ঢাকা
৩০ জুলাই ২০২০