গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২০ তারিখে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। এই সে-ই গ্রাম; যার দিগন্তজোড়া মাঠের উপরে বিস্তৃত বিশাল আকাশখানি ব্যাসদেবের অর্জুনের গাণ্ডিবের মতো বাঁকা হয়ে আছে। মধুসূধনের প্রজার মতো নদীরা রাজাধিরাজ সমুদ্রকে বারি-কর দেয়ার জন্য নিত্য প্রবাহিত। জসিমউদ্দিনের সবুজ মাঠের দুপাড়ে এ-গাঁও চেয়ে আছে ও-গাঁওয়ের পানে, তেমন গ্রাম। যাকে দেখে রবীন্দ্রনাথ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন- ''আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...''


দীর্ঘকাল করোনাসুন্দরীর ভয়ানক আঁচলের তলে থেকে থেকে মনটা অবসন্ন হতে হতে তেঁতো হয়ে গিয়েছিলো। তাই, ফেরার পথে সড়ক পথে না এসে নদীপথে ফিরছিলাম। যাটনল থেকে নারায়নগঞ্চ লঞ্চে আসছি। লঞ্চ নারায়নগঞ্জ পৌঁছার পর স্মরণ হলো, আসর কবি এম নাজমুল হাসানের কথা; যিনি নারায়নগঞ্জ বসবাস করেন। মোবাইলে কল দিলাম। কবি বললেন, 'কিছুটা সময় অপেক্ষার করুন, আমি বিশ মিনিটের মাঝে আসছি'। বিশ মিনিটের আগেই কবি হাজির হলেন। তাকে বললাম, 'আসুন, একটি রেস্টুরেন্টে বসে চা পান করতে করতে কিছুক্ষণ আলাপ করি।  এরপরই তিনি নিয়ে গেলেন, ''বোস কেবিন'' নামক এক রেস্ট্রুরেন্টে। শতাব্দির পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী একটি রেস্ট্রুরেন্ট 'বোস কেবিন'। কিন্তু লাঞ্চ-টাইমে ওখানে চা বিক্রি বন্ধ থাকে। ফলে, কাটলেট খাওয়ার পর চা-পান না করেই হাঁটতে হাঁটতে শহীদ মিনার এলাকায় চলে এলাম। এ চলার পথেই নারায়নগঞ্জের কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা দিলেন; যে সকল প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে আমার পূর্বে জানা ছিলো না।


শহীদ মিনার এলাকায় আমরা একটি ভিন্ন স্বাদের চা; 'তেঁতুলের চা' পান করলাম। এই কথা, সে-ই কথা এবং বিভিন্ন কথায় বেশ কতোক্ষণ আনন্দ মূহুর্ত কাটিয়ে বিদায় নিলাম। কবি এম নাজমুল হাসান বাঙালির চিরায়ত আপ্যায়ণের ব্যতিক্রম না করে, বাস স্ট‌্যাণ্ড পর্যন্ত সাথে এসে এগিয়ে দিয়ে গেলেন। বাস ছাড়ার পর তিনি উল্টোপথে পা বাড়ালেন। এ ভালোবাসার কথা সহজে ভুলার নয়। শুভ কামনা কবি। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন সব সময়।


০২/০১/২০২১
মিরপুর, ঢাকা।