আমি দৌড়াই—
অসমাপ্ত চাহিদার পেছনে,
শূন্যতার এক গহ্বর থেকে আরেক গহ্বরে;
মনে হতো, একদিন পূর্ণ হবো
হৃদয়ের প্রতিটি শূন্য কোষ ভরবে ভালোবাসায়, অর্জনে, জ্যোতিষ্ক আলোয়।
আজ আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখি—
আমি নেই।
আমি শুধু এক বাষ্পীভূত প্রতিচ্ছবি,
ছুঁতে গেলেই মিলিয়ে যাই সময়ের ঘূর্ণিপাকে।
যা কিছু ধরে রেখেছি, তা ছিল কুয়াশা,
যার ভেতর স্পষ্ট ছিল শুধু আমার একাকিত্ব।
যারা পাশে ছিল—তারা শুধু ছিল,
থাকার গভীরে ছিল না কোনো স্পন্দন,
তারা হাসতো, কথা বলতো,
কিন্তু সেই হাসির পেছনে ছিল না আমার জন্য কোনো আস্থার ধ্বনি।
একজন মানুষের তরলতা যখন নিজের মনে হয়,
তখন আমরা তাকে ধরা দিই অবহেলার দরজায়—
আমরা বুঝি না,
এই সহজলভ্যতা অন্য কারো কাছে স্বপ্নের মতো অধরা।
আমরা বিশ্বাস করি মানুষ চিরকাল এক,
কিন্তু মানুষই সবচেয়ে বড় রূপ পাল্টানো কারিগর।
এক ছাদের নিচে থেকেও
একটা হৃদয় অপর হৃদয়ের মানচিত্র চেনেনা।
বিশ্বাসের কাঁচ ভেঙে পড়ে—
অবিশ্বাসের কাঁটার ওপরে,
আর আমরা কেবল তাকিয়ে থাকি নির্বাক।
স্রষ্টা আমাদের দিয়েছেন চোখ—
কিন্তু মানুষ চেনার দৃষ্টি নয়,
তাই প্রতিটি বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের বিস্ময়ের খাদে ঠেলে দেয়।
সময় একা একা সব শিখিয়ে দেয়—
কে কতোটা নিজের, কে কতোটা ছিল অভিনয়!
যে মানুষটা একদিন চোখের জলে ভিজতো আমার ব্যথায়,
আজ সে-ই নির্ভুল ভাবে করে অপমান।
আমি শিখে গেছি—
পৃথিবীতে কিছুই আমার নয়।
যেটুকু পেয়েছি, তা আমার পাওয়ার কথা ছিল না;
যেটুকু হারিয়েছি, তা কখনোই আমার ছিল না।
একাকিত্ব?
এটাও এক সময় অভ্যেস হয়ে যায়—
যেমন শীতের ভোরে কুয়াশা,
যেমন ঝরাপাতায় শূন্য গাছের দুঃখ।
আর তুমিও—
আমার সেই অংশ,
যা ভাগ হয়ে গেছে অন্য কারো জীবনে।
তোমার না থাকা
আজ আর অভিমানের মতো নয়,
শুধু স্মৃতি—একটা পুরোনো চিঠির মতো শুকনো,
যা আর খোলা হয় না,
তবু ফেলা যায় না।
আমি দৌড়াইনি সুখের পেছনে,
আমি দৌড়েছি শুধু অনুভূতির কোনো প্রান্তে পৌঁছতে—
সেই প্রান্তে আজ আর কেউ নেই,
শুধু আমি আর আমার শূন্যতা।
আমি ছিলাম না, আমি আছি না, আমি হবোও না—
এই গল্পে, কারো গল্পে,
আমি শুধু এক ফাঁকা পাতার নামহীন শিরোনাম।
শুধু আমি আর আমার শূন্যতা_মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ