খণ্ড-খণ্ড সময়ে,  
আমি যে কত প্রবলভাবে তোমারে চাইতে চাই—  
সেই চাওয়াটা ছিল ক্ষুধার মতো,  
মা-হারা শিশুর মতন,  
আঙুল ছুঁয়ে দুধ না পেলে কাঁদে যেমন,  
তেমন অন্ধ কষ্টে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।

তোমার হৃদয়ের দরজায় নক করা মানা ছিল,  
তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেছি,  
একটা গোলাপ হয়ে—  
তোমার দৃষ্টিসীমার বাইরে, নিঃশব্দ সৌন্দর্যে।

আর স্পর্শের খুব কাছাকাছি এসে,  
হয়তো হয়ে গেছি কুষ্ঠরোগগ্রস্ত কুকুর—  
যাকে ভালোবাসা যায় না,  
শুধু সহ্য করা যায়।

আমি জানি,  
তোমার হৃদয়ে আমার জন্য কোনো যাবজ্জীবন বরাদ্দ নেই।  
তবু, জানো?  
এই অনাহুত ভালোবাসার যদি মাত্র এক বিন্দু তুমি বুঝতে,  
তবে তুমি অমর হতে চাইতে…  
কারণ এমন ভালোবাসা রোজ জন্মায় না,  
এটা জন্মায় হৃদয় পুড়ে গেলে।

আমি কারো কাছে কিছু চাই না,  
অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই,  
আর অনেকেই আমার খবর রাখে না—  
এই নিঃসঙ্গতা আমার অভ্যস্ত খোলস।  
কোনো অভিমান নেই,  
কারণ কোনো দাবিও তো ছিল না।

আমরা কেউ কাউকে বলা শেষ করতে পারিনি—  
শেষ দেখা, শেষ পথচলা,  
সবই হয়ে গেছে,  
যেন চুপ করে হারিয়ে যাওয়া একটা সন্ধ্যা।

জীবন আসলে দিগন্তরেখার মতো—  
কখনো ভিড়, কখনো নির্জনতা।  
আর এই নির্জনতায় দাঁড়িয়ে,  
আমি সেই তোমাকেই বলি,  
যার কাছে আমার হৃদয়টা ছিল উজাড় করে দেওয়া চিঠি।

তুমি ছিলে জারুল ফুলের মতো—  
নীল, নীরব, আর হারিয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর।  
তোমায় বলা হয়নি,  
কতবার বুকের গভীর কষ্ট চাপা দিয়ে চুপ থেকেছি।  
কারণ মুখের শব্দ বুকের ব্যথা বোঝাতে পারে না।

আমাকে হারালে,  
তোমার বিশেষ কিছু ক্ষতি হবে না, আমি জানি।  
তুমি তো চাঁদ,  
হাজারো রাত তোমায় চায়,  
হাজারো প্রেম তোমার দিকে ছুটে যায়।

তবুও, আমি ছুটিনি,  
আমি শুধু থেকেছিলাম—  
একটা নিরব আবেগ হয়ে,  
তোমার চারপাশে।

তোমার চোখে ঝরে পড়া এক বিন্দু অশ্রু হয়ে।

কিন্তু একদিন হঠাৎ,  
সব আলো নিভে গেল—  
একরাশ কালো মেঘ ঢেকে দিলো এই পৃথিবী,  
যেন পূর্বপরিকল্পিত বিদায়।

তখনও আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম,  
শেষবার তোমাকে দেখা হবে বলে,  
শেষবার যদি তুমি আমার দিকে তাকাও বলে...।

"নিঃসঙ্গতা আমার অভ্যস্ত খোলস"_ মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ