প্রিয়তমা,
জেল থেকে বলছি,
অনুভ আর অনুভূতির সাহায্যে
তোমাকেই বলছি।


তুমি ভালো নেই
আমি জানি, তুমি ভালো নেই
বলতো দেখি, যার স্বামী এক টুকরো
কাগজ আর অল্পকালির কারণে;
ইট-বালি সিমেন্টের তৈরি
কারাগারের চার দেয়ালের
ভিতর অসহ্য ব্যাথায় কাতড়ায়
সে কি করে ভালো থাকবে?
এই ভাষা আমার জানা নেই।


পর সমাচার শুনোঃ
পুলিশ যেদিন বিনা অপরাধে
আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে
আর মাজাই রশি বেঁধে,
গরুর মত করে টেনে-হিঁচড়ে
তোমার চোখের সামনে থেকে
আমাকে নিয়ে আসছিলো।


তখন মনে হয়েছিল এর থেকে
আমার মৃত্যু অনেক ভালো ছিল।
তুমি জানো?
আমার খুব অবাক লাগে!
স্বাধীন দেশে, স্বাধীনতার এত অপব্যবহার?


প্রিয়তমা,
তুমি শুনলে হয়তো
অনেকটাই অবাক হবে।
বন্য পাখি খাচায় আটকা পড়লে
খাঁচার ভিতর যেমন অসহায় হয়ে পড়ে,
ঠিক তেমন করে,ইট-বালি সিমেন্ট এর
চার দেয়ালের ভিতর আমি এতটাই অসহায়।


তোমার হয়তো মনে পড়বে;
একদিন, এক কালবৈশাখী ঝড়ে
অচেনা একটি পাখি
আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর
সাথে সাথে মাটিতে লুটে পড়েছিল।


ঠিক তখন তুমি,
পাখিটিকে ধরে খাঁচায় আটকে রাখলে,
পাখিটি সারা শরীর ভেজা,
হয়তো একটু আঘাত পেয়েছিল।


কিন্তু তারপরেও পাখিটি
খাঁচার ভেতর থেকে
বের হওয়ার জন্য কি যে চেষ্টা তার।


আর অপরদিকে,ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে
খাঁচার বাহির থেকে অন্য একটি পাখি
খাঁচার ভিতর বন্দি পাখিটিকে
ছাড়িয়ে নেওয়ার কি প্রাণপণ চেষ্টা।


তুমি আমি হয়তো,
সেই দিনের এই মর্মান্তিক ঘটনাকে
ঠিক তেমন ভাবে ভাবিনি!
সত্যি বলছি,
আজ বুঝতে পারছি।


তুমিও নিশ্চয়ই
খুব ভালো করে বুঝতে পারছো?
সেই সময় বুঝতে না পারলেও,
ঝড় বৃষ্টি কমে যাওয়ার সাথে সাথে
তুমি কাঁচার ভেতর থেকে
অচেনা পাখিটিকে মুক্ত করে
আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলে।


অচেনা পাখিটি,
বন্দি খাঁচা থেকে মুক্তি পেলেও
আমি আজও মুক্ত হতে পারিনি গো!


জেল থেকে বলছি
-মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ