আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগের কাহিনী স্মরি
ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে অবিরাম চক্ষু দুইটি ভরি।
আমার নবীকে মক্কা বাসীরা থাকতে দিলো না দেশে
চলিলেন নবী মদিনার পথে দেশ ছেড়ে অবশেষে।
"দারুন নাদোয়া" বৈঠক ঘরে কাফেরেরা সব মিলে
শলা-পরামিশ আমার নবীকে হত্যা করিবে বলে।
সারাদিন ভর প্রস্তুতি নিয়ে রাতের গভীর হলো
আমার নবীর ঘর চারপাশ ঘেরাও করিয়া দিলো।
আবু জাহেলের মস্কারা শুনে মাতিয়া উঠিল সবে
রাতের আধেক হয়ে এলে মোরা হামলা করিবো তবে।
এমনি নাজুক পরিবেশে নবী আলীকে রাখিয়া ঘরে
বাহিরে শত্রু ওদিকে ছোঁড়েন ধুলোবালি মুঠো ভরে।
মহান প্রভুর অপার শক্তি প্রকাশিলো তার শান
সব কাফেরের চোখেতে পর্দা ধরিলেন মাহিয়ান।


নিরাপদে নবী আবু বকরের বাড়িতে তখন গিয়ে
মাদিনার পানে রওনা হলেন বন্ধুকে সাথে নিয়ে।
কাফেরের দল আশাতে ডুবিয়া ভাবে যে সময় হলো  
ঘরের মধ্যে মোহাম্মাদরে হত্যা করিবো চলো।
ঘরে গিয়ে দেখে বিছানায় শোয়া নবীর সাহাবী আলী
বুঝিতে পারেনি নবীজী গেছেন চোখে দিয়ে ধুলোবালি।
শয্যায় থাকা আলীকে দেখিয়া ভাবিলো ব্যার্থ মোরা
নবীজী কোথায় জিজ্ঞাসা করে আলীর নিকটে ওরা।
এদিকে রাসুল মাদিনার পথে আবু বকর-ও সাথে
মক্কা শহর ছাড়িয়া দুজনে বেড়িয়ে গেলেন রাতে।
বারেবারে নবী মক্কার দিকে ফিরিয়া ফিরিয়া চায়
হে আমার প্রিয়, জন্মভূমিরে ছাড়িয়া গেলাম হায়।
করুণ কোমল, চাহুনি নবীর ঝরিয়ে আঁখির জল
থাকিতে দিল না আমার শহরে দুষ্ট কাফের দল।


মাদিনার পথে খুঁজিবে আমায় এটাই তো স্বাভাবিক
ভাবিয়া নবীজী পথ পাল্টালো ইয়ামানের ওদিক।
সূর্য উদয় হওয়ার আগে মক্কা শহর ছেড়ে
সাওর পাহাড় সেখানে আসেন পাঁচ মাইলের পরে।
সূর্য উদিবে মানুষ দেখিবে ছড়িয়ে যাবে যে কথা
পাহাড়ি চূড়ার গুহাতে এবার লুকাবেন নবী সেথা  
পাহাড়ে উঠতে প্রিয় নবীজীর হলো যে কষ্ট কত
পাথরের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হয়ে গেলো পায় ক্ষত।
আবু বকর সে উঠিয়া উপরে বাড়াইয়া দিলো হাত
উপরে উঠেন নবীজী এবার আবু বকরের সাথ।
আমার নবীর চরণযুগল রক্তে রাঙানো হায়
গোড়ালিতে ভর দিয়ে হাঁটেন যে মাটিতে দাগ না যায়।
রক্তের দাগ দেখিলে বুঝিবে কাফেরের দলবলে
পিছু নিবে ভেবে মোহাম্মদ তো এ পথেই গেছে চলে।


গারে সাওরের কাছে দুজনের হয়ে গেলো তবে ওঠা
আবু বকর-ই নামিয়া গিয়াছে অন্ধকারে সে কোঠা।
ভিতরের যত আবর্জনা তা সবকিছু সাফ করে
গর্ত যা ছিল বন্ধ করিলো মাথার পাগড়ী ছিঁড়ে।
দুটো গর্তের মুখ খোলা তবে ছেঁড়া পাগড়ী তা শেষ
আবু বকরের দু'পা রেখে তাতে বন্ধ করিলো বেশ।
আল্লার নবী নামিয়া আসুন উরুতে রাখিয়া মাথা
ঘুমিয়ে পড়েন আবু বকরের কোলে যে বিছানা পাতা।
রাসুল আমার বিশ্রাম নেন হাজারো ক্লান্ত হয়ে  
আবু বকরের সেবা তো চলছে প্রেমময় হাত দিয়ে।
ক্লান্তি বিষাদে দেহ দু'টি আজ আঁধার গুহার মাঝে
দেখেছি আমরা সে রাতের ফলে ধরণীকে নব সাজে!


এরই মধ্যে আবু বকরকে দংশিল হায় সাপে
বিষের জ্বালায় নীল হয়ে গেল থরথর দেহ কাঁপে।
অসহনশীল দাহ্য-যন্ত্রণা ভরিলো দুচোখ জলে
সে জল গড়ায় নবীর বদনে, ঘুম ভাঙে তার ফলে।
দেখিয়া নবীজী জানতে চাইলো কি হলো তোমার হায়
কেঁদে কেঁদে বলে নবী গো আমারে দংশিছে সাপে পায়।
নবীর মুখের পবিত্র লালা লাগিয়ে দিলেন যবে
আবু বকরের বিষের জ্বলন ভালো হয়ে গেলো তবে।


যে নবীরে প্রভু, বাদশা করিয়া পাঠিয়েছেন এ ধরা
সে নবী আজিকে গুহায় লুকানো হয়ে নিজ দেশহারা।  
কাফেরের দল বের হয়ে পড়ে নবীজীর অন্বেষণে
ভয়ের পাহাড় জমে গেল হায় আবু বকরের মনে।
রাসুল বলেন ভয় নাই কোন আমরা দুজন নয়
সঙ্গে মোদের ত্রাণকর্তা যিনি আছেন তো দয়াময়।
খুঁজিতে লাগিলো কাফের গোষ্ঠী আসিয়া গুহার দ্বারে
প্রভুর হুকুমে মাকড়সা জাল কবুতর ডিম পাড়ে।
গুহার সামনে ঘোরাঘুরি করে নবীকে খুঁজিয়া পেতে
নিরবে দেখেন গুহা হতে নবী আবু বকরের সাথে।
হে নবী দেখেন কাফেরের দল ওইতো যাচ্ছে চলে
নিচে তাকালেই দেখা যাবে তবু দেখে না কানার দলে।
গুহার মুখেতে মাকড়ের জাল দেখে ছেড়ে দেয় আশা
মানুষ থাকলে এথা নিশ্চিত ভাঙতো পোকার বাসা।


মহান প্রভুর অপার লীলায় রক্ষা করলো তবে
এ গুহায় নবী ও আবু বকর আরো তিনদিন রবে।
আবু বকরের সন্তান আসে শুনায় খবর রোজ
কাফেরদের সে  ষড়যন্ত্রের দিয়ে যায় রাতে খোঁজ।
আবু বকরের গোলাম ছিল যে ছাগল চড়াতো মাঠে
রাত নেমে এলে ছাগলের পাল নিয়ে আসে তল্লাটে।
দুগ্ধ দোহন করিয়া গুহায় পান করানোর পরে
আবু বকর তো বলিয়া দিল যে শুন কথা চুপিসারে।
তিনদিন পরে আনিবে সঙ্গে উট যে তিনটি করে
সওয়ারী হবে মদিনার পথে যাত্রা করার তরে।
বিনিময়ে তারে দিবে যে মজুরি বিনামূল্যে তা নয়
এভাবে গোলাম মালিকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়।
বিশ্বাস ছিল গোলামের প্রতি কাফের ছিল তবু
জানাশোনা ছিল ভয় নাই কোন গোলামকে নিয়ে কভু?


কথা মোতাবেক ঠিক সময়েই আসে উট সাথে করে
আবু বকরের গোলামকে বলে দাঁড়াও তো উট ধরে।
রাসুল এবার উটের পরেতে সোয়ার হয়ে বসিলো
গোলামকে নিয়ে দুজনে এবার রওনা করে দিলো।
সাগর পাড়ের পথটি ছিল তা লোকজন যায় কম
মরুর পথেতে মরুর দুলালী চলিতেছে একদম।
কত অজানারে পড়ি দিয়ে গেলো কুবা শহরের দ্বারে
বরণ করিলো ভালোবাসা দিয়ে আমাদের নবীজীরে।
সপ্তা দুয়েক কুবায় কাটিলো এরপর মাদিনায়
আপন স্বদেশ মক্কা ছাড়িয়া খেজুর গাছের ছায়।
মদিনাবাসীরা আগের থেকেই প্রতিক্ষায় প্রতিক্ষণে
নবীজীকে পেয়ে টানিয়া নিলো যে ভালোবাসা ভরা মনে।
আমেনার কোলে হেসেছিল চাঁদ এ মরুর সাহারায়
নবীজী এবার আলোর প্রদীপ জ্বালাবেন মাদিনায়।


মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ ৬+৬+৬+২
তারিখঃ ২২/০৯/২০২২ইং
তথ্যসূত্রঃ সিরাত ইবনে হিশাম, আর-রাহীখুল মাখতুম, সিরাতে মুস্তফা।