আমি হতদরিদ্র! খুবই জীর্ণ পোশাক পড়ি
তবু না আমি হে ধনী! তোমার পিছনে ঘুরি।
গাত্রে খেটে মাটির তলে পুঁজি করি উদ্ধার
রক্ত আমার পানি করে লড়ি যে বারংবার।
শক্তি সাহস আছে বুকে সহায় মোর প্রভু
নিজের অন্নদাতা তিনিই হই না আমি কাবু।
ভয়-ভীতি ও সংশয় কীসে তেজস্বী অম্লান
ত্যাগের সাগরে কবেই করে নিয়েছি স্নান।
আমি পাহাড় কেটে তৈরি করি তব গিরিপথ
আমি জাহাজ বানিয়ে সহজ করি পানিপথ।
আমি শাবল চালাতে যখনই ঘাম ঝরাই
বিজয়োল্লাস আনন্দ পলে পলে খুঁজে পাই।
যুদ্ধ করি স্বাধীনতা আনি শত্রুর হাত থেকে
শ্রম মোর প্রতি ইঞ্চিতে পথের বাঁকে-বাঁকে।


আমি হতদরিদ্র! ভীষণ নিম্ন মানের খাবার
আমি চাই না অনুগ্রহ চাই আমার অধিকার।
আমি চাই সম্মান-মর্যাদা শ্রমের ন্যায্য মূল্য  
আমার জন্য পেয়েছ যে যতটুকুই সাফল্য।
বুঝিয়ে দাও দরিদ্রদের অবদানের স্বীকৃতি
ক্ষুদ্র নয় সে অবদান তা যে অতিদীর্ঘাকৃতি।
দেশ গড়তে পরতে পরতে রেখেছি ভূমিকা
কোথায় লিখে রেখেছো তা দেখিতো ফাঁকা।
আমার হাতে ফোস্কা পড়ে গড়তে যে দালান
সেথায় আরাম করো সোফায় দিয়ে হেলান।
আমার অবদান প্রাপ্য দাওনি বুঝিয়ে তবে
আমার পাওনা বলো তো কীভাবে শোধ হবে?
প্রতিটি ইটের দেয়াল প্রতিটি ইটের টুকরে
আমার সাক্ষী দিচ্ছে দেখো ও ডুকরে ডুকরে।


আমি হতদরিদ্র! দেখো আমার ভাঙা ঘরে
পাতার ছাউনি বৃষ্টি হলে ঝর ঝরিয়ে পড়ে।
আমার এই যে ভাঙা ঘর বেড়া পাটের খড়ি
আমার পরিশ্রমের ফসল এটাই বাহাদুরি।
হোক না আমার নড়বড়ে ঘর ছিদ্রটাও বেশ
আত্মনির্ভর, আত্মনিমগ্ন যে সুখের পরিবেশ।
তোমার মতো কালো টাকায় পাহাড় গড়ি না
হয়তো-বা দামী যানবাহনে আমি চড়ি না।
আমার ঘরের খেজুর পাটি আমার বিছানা
তিন-বেলায় তিন মুঠো ভাত এতেই সান্ত্বনা।
মুক্ত আকাশ মুক্ত বাতাস মুক্ত মনে ঘুরি
আমার ঘর সুখের খনি দেখছি ভূরি ভূরি।
মাটির পাত্রে আছে হয়তো আর কিছুটা চাল
এতে আমার হয়ে যাবে সকাল আর বিকাল।


তারিখঃ ৩০/০৫/২০২২ইং
রাতঃ ০৮:১২ মিনিট।


বিঃদ্রঃ- পৃথিবীর সকল আত্মনির্ভরশীল পরিশ্রমী খেটে খাওয়া মানুষের তরে (কবিতাটি) উৎসর্গ করলাম।