বাদশা ও বাদীর কাহিনী:—


প্রিয় বন্ধুরা! একটি কাহিনী বলছে এখানে কবি
যার মাঝে ফুটে ওঠে আমাদের হালের প্রতিচ্ছবি ।
চিন্তা করলে আমাদের হাল একটু গভীর ভাবে
উভয় জগতে উপকার আর মঙ্গল খুঁজে পাবে ।
মনোযোগে শোনো, এই ঘটনাটি যদি পাও তুমি টের
পুরোপুরি তবে কাদা পানি থেকে হইতে পারবে বের ।
বিবেক খুলিয়া আগ্রহী হয়ে খুব মনোযোগ দাও
উৎসাহ আর উদ্দীপনার সহিত এগিয়ে যাও ।


ঘটনার পূর্ণ বিবরণ:—


বহু আগে এক বাদশা ছিলেন ধর্মের অনুসারী
দ্বীনদার ভালো সাথে তার ছিল রাজ্যের অধিকারী ।
ঘটনাক্রমেই বাদশার এক ইচ্ছে উঠলো জাগি
লোকলস্কর নিয়ে বের হলো শিকার করার লাগি ।
শিকার করতে পাহাড়ে ভূমিতে ঘুরেফিরে আহ্লাদে
নিজেই শিকার হয়ে পড়লেন হটাৎ প্রেমের ফাঁদে । (১শ)
তিনি রাজপথে একটি সুশ্রী বাদীকে দেখতে পান
দেখামাত্রই বশীভূত হলো বাদশার স্বীয় জান ।
বাদশার প্রাণ ছটফট করে উঠলো ভীষণ কাঁদি
প্রচুর টাকার বিনিময়ে কিনে আনলেন ওই বাদী ।
দাসীকে কেনায় সফল হলেন বাদশার মুখে হাসি
দুর্ভাগ্য যে অসুস্থ হলো এরপরে এই দাসী ।


ঘটনার প্রেক্ষাপটে উদাহরণ:—


এক ব্যাক্তির গাধা ছিল তবে বসার গদি না ছিল
পরে গদি পেল কিন্তু নেকড়ে গাধাটিকে খেয়ে নিল ।
হাতে ছিল শুধু পানির পেয়ালা পানি ছিল বহু দূর
পানির দেখাটা মিললো যখন পেয়ালা ভাঙিয়া চূর ।


ঘটনায় প্রত্যাবর্তন:—


বাদশা সকল চিকিৎসক-রে ডেকে আনে একসাথে
বলে আমাদের উভয়ের প্রাণ আপনাদেরই হাতে ।
আমার প্রাণ তো কিছুই না এই বাদীই আমার জান
আমি যে পীড়িত বাদীই আমার ঔষধি উপাদান ।
যার চিকিৎসা পেয়ে প্রিয়জন সুস্থতা ফিরে পাবে
সে আমার আজ ধনভাণ্ডার সবকিছু পেয়ে যাবে ।
চিকিৎসকরা সবাই বললো, চেষ্টা করবো আজ
গবেষণা করে পরস্পরেতে মিলিয়া করবো কাজ ।
আমরা সবাই এক-একজন বিজ্ঞ চিকিৎসক
আমাদের আছে ঔষধ সব রোগের মীমাংসক ।


খোদার উপর ভরসা না রেখে বিপরীত হলো ফল
প্রভু ওদেরকে করে দিলেন যে অক্ষম,  দূর্বল ।
‘ইনশাআল্লাহ্’ মুখে মুখে নয় দিলের ভরসা মূল
আল্লা'র প্রতি থাকা চাই সদা গভীর তাওয়াক্কুল ।
এমনো অনেকে ‘ইনশাআল্লাহ্’ মুখে বলেন না খুবি
কিন্তু তাদের অন্তরে আছে ‘ইনশাআল্লাহ্’ ডুবি ।
চিকিৎসকরা ঔষধ যাহা প্রয়োগ করলো তাতে
রোগ কমলো না বেড়েই চললো খুব বেগে দিবারাতে ।
এদিকে বাদী যে রোগে দূর্বল শুকিয়ে কাঠের মত
তার চিন্তায় বাদশার চোখ ঝর্ণায় পরিনত ।


অসুখ দেখিয়া চিকিৎসকরা নির্বোধ হয়ে যায়
উপকারী এই ঔষধ শুধু অপকার পৌঁছায় ।
ঔষধে সব উল্টো হচ্ছে চিকিৎসা গেল ফাউ
পানি ঢাললেও নেভে না আগুন জ্বলে ওঠে দাউদাউ ।
মনে অশান্তি বেড়ে গেল খুব নিদ্রা হারালো আঁখি
চোখ জ্বালা-পোড়া করতে লাগলো ব্যথা ভরা প্রাণপাখী ।


(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)
মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ ৬+৬+৬+২