আল্লাহর নিকট বাদশার প্রার্থনা
ও বিজ্ঞ চিকিৎসক প্রাপ্তি:—


বাদশা দেখেন নিরুপায় সব চিকিৎসা অভিযানে
তখন বাদশা নগ্নপদ-এ ছোটে মসজিদ পানে ।
মসজিদে ঢুকে সামনে এগিয়ে সেজদায় পড়ে কি যে
চোখের পানিতে সেজদানগর পুরোপুরি যায় ভিজে ।
আত্মস্থ ও সংজ্ঞাপ্রাপ্ত নিজেকে যখন লাগে
প্রভুর তারীফ করতে থাকে সে হৃদয়ের অনুরাগে ।
হে প্রভু! আমার এই বাদশাহী তোমার দয়ার দান
যে ব্যথা বলবো তোমার নিকটে সবি তো দৃশ্যমান ।
ভুল করেছি গো কেন আগে মোরা ভরসা করিনি, তবু
দয়ার সামনে নগণ্য ভুল ক্ষমা করে দাও প্রভু ।


হে প্রভু মোদের আশ্রয়দাতা, দয়ার নেই গো কূল
প্রথমবারেও ভুল করে ওগো পুনরায় হলো ভুল ।
তোমার যেহেতু বলা ছিল সব— গোপনও প্রকাশিত
তারপরেও তো তোমার সামনে করলাম নিবেদিত ।
বাদশা যখন দোয়া করলেন ব্যাকুল হৃদয় দিয়া
মহান প্রভুর দয়ার সাগর উঠলো রে উথলিয়া ।
বাদশা যখন কান্নার হালে একটু ঘুমাইয়াছে
স্বপ্নের মাঝে দেখে এক বুড়ো সম্মুখে আসিয়াছে ।
বৃদ্ধ বললো, বাদশা তোমার ইচ্ছে পূরণ হবে
আগামী প্রভাতে অতিথি আসলে তাকে ডেকে নিও তবে।


যিনি আসবেন, চিকিৎসক ও বিজ্ঞ বিচক্ষণ
সত্য স্বভাবী জানিও তাহাকে, গুণী ও মহৎজন ।
তাঁর চিকিৎসা দেখবে ভীষণ যাদুর ক্রিয়ার মত
কার্যাবলীতে প্রভুর মহিমা চাক্ষুষ দেখো, কত !
স্বপ্ন দেখিয়া ঘুম থেকে জেগে কমে গেল হাহুতাশ
বাদীর চিন্তা বাদশাকে যেন করে ফেলেছিল দাস ।
অপেক্ষা শেষে সময় আসলো সূর্য উঠলো পূবে
দিনের আলোয় আলোকিত সব তারকারা গেল ডুবে ।
বাদশা তখন জানালার ধারে থাকেন অপেক্ষায়
কেউ আসবেন, পথ চেয়ে রয় স্বপ্নের ভরসায় ।


একটু পরেই মহা গুণী এক লোককে দেখতে পান
রবির ছায়ার মধ্যে এ-যেন আলোয় দীপ্তিমান ।
নতুন উদিত চন্দ্রের ন্যায় আসছেন এই পথে
কল্পিত ছবি তেমন হটাৎ হারান দৃষ্টি হতে ।
খেয়ালের কোন রূপ-রং নেই মনের চিন্তা বলে
তবুও দেখবে পুরো পৃথিবীই খেয়ালের পরে চলে
মানুষের সব সন্ধি, যুদ্ধ খেয়ালের উপরেই
আর মানুষের গর্ব, লজ্জা খেয়ালের কারণেই ।
ওই সমস্ত খেয়াল যে-সব ওলিদের মনে আসে
উহাতে প্রভুর রূপ আধারের প্রতিচ্ছবিই ভাসে ।


কল্পিত ছবি যা রাতে বাদশা স্বপ্নে দেখিয়াছিল
আগত লোকের চেহারায় তাহা প্রকাশ্যমান ছিল ।
ওলীদের মাঝে আল্লা‘র নূর সদা জ্বলজ্বল থাকে
নিখুঁত হইলে অন্তরচোখ দেখতে পারবে তাকে ।
যখনই সেই ওলীআল্লা-কে দেখলো দৃষ্টি দ্বারা
দেখা গেল প্রতি লোমকূপ থেকে বর্ষে নূরের ধারা ।
দারোয়ান রূপ ধরে ছুটে আসে ফেলে বাদশার ভিত
বিনয়ের সাথে অতিথির কাছে হয় যে উপস্থিত ।
সম্বর্ধনা জানাতে বাদশা আবেগে হারালো দিশে
জরাইয়া ধরে চিনির মতোই তাঁর সাথে গেল মিশে ।


বাদশা বুঝি গো খুব পিপাসিত মেহমান বুঝি জল
বাদশা মাতাল মেহমান হলো শরাব সুউজ্জল ।
তিনি তো ছিলেন প্রেম সাগরের ডুবুরি ও মহাজ্ঞানী
বাদশা তাহাকে দেখামাত্রই বুকে নেয় বুক টানি ।
বাদশা বলেন, আপনি ছিলেন আমার প্রেমাষ্পদ
বাদীর প্রেমের ওসিলায় আমি পেলাম পরমপদ ।
আপনি আমার জীবনের পরে ভূমিকা মোস্তফার
কোমর বেঁধেছি উমরের ন্যায় খেদমতে আপনার ।


(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)
মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ ৬+৬+৬+২