বেয়াদবির কুফল:—


প্রভুর নিকট আদব চেয়েছি জীবন চলার পথে
বেয়াদব সে-তো বঞ্চিত রয় প্রভুর করুণা হতে ।
বেয়াদব লোক করে না কেবল নিজেই নিজের ক্ষতি
বেয়াদবি কাজে বিশ্বের মাঝে ছড়ায় আগুন অতি ।
আসমান থেকে নাজিল হইত মান্না সালওয়া রোজ
কেনাকাটা ছাড়া ময়দানে পড়ে থাকত ওদের ভোজ ।
কওমে মুসার বেয়াদবে বলে ইহা খাবো কতকাল
মান্না সালওয়া চাই না আমরা চাই মসুরের ডাল ।
আসমানী সেই মান্না সালওয়া বন্ধ পরের বারে
এবার বুঝলো কাস্তে কোদাল পড়িলো ওদের ঘাড়ে ।


আবার যখন ঈসা নবী এসে খাবারের দোয়া করে
তাঁর উপরেও নাজিল করেন খাবার খাঞ্জা ভরে ।
ঈসার কওম খাবার চাইলে নবী দোয়া করে ফের
আসমান থেকে আসতে থাকতো খাঞ্জা নেয়ামতের ।
এখানেও এই বেয়াদব দল আদবকে যায় ভুলে
ভিখারির মতো বাড়তি খাবার রেখে দিত ওরা তুলে ।
ঈসা নবী বলে, আসমানী খানা আসবে সর্বদাই
নিয়মিত পাবে, জমা রাখিবার কোন প্রয়োজন নাই ।
খাঞ্জার প্রতি থেকো না তোমরা খারাপ ধারণা নিয়া
অতি লোভ হবে প্রভুর উপরে ভীষণ না শুকরিয়া ।


সেই ভিক্ষুক স্বভাবের লোক লোভেই ওদের পেল
আসমান থেকে খাঞ্জা আসাও বন্ধ হইয়া গেল ।
বন্ধ হইলো আসমানী খানা আর কভু আসেনি তো
এরপরে আর খাঞ্জায় কেউ হয়নি উপকৃত ।
জাকাত বন্ধ করিলে বৃষ্টি বর্ষে না ভূমি পরে
যেনার কুফলে মড়ক ছড়ায় চারিদিকে ঘরে ঘরে ।
যে অন্ধকার ছড়িয়ে গিয়েছে তোমার হৃদয়পটে
তা তোমার কোন নির্ভীক হয়ে বেয়াদবি ফল বটে ।
যদি কেউ চলে বন্ধুর পথে নির্ভীক আচরণে
ডাকাতের মতো ক্ষতি করে যায় সে সর্বসাধারণে ।


যেজন সদাই তরিকতে চলে বেয়াদবি যায় করে
পরিতাপেরই উপত্যকায় ডুবিয়া সেজন মরে ।
ওই আসমান আলোকিত হলো, আদব ওদের মূল
আদবের ফলে নিষ্পাপ রয় আজো ফেরেস্তাকুল ।
বেয়াদবিতেই— সূর্য-গ্রহন আসমানে দৃশ্যত
আর আযাযিল বেয়াদবি করে হইলো গৃহচ্যুত ।


(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)
মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ ৬+৬+৬+২