তারিখের গায়ে আগুনের রেখা—
‘জুলাই’।
এ নাম উচ্চারণ মানে—
মাটি কাঁপে,
বাতাসে ওঠে অবরুদ্ধ শ্বাসের মিছিল।
সে কোনো সাধারণ ঋতু নয়—
জুলাই এক উন্মীলিত কালচক্র,
যেখানে ইতিহাস ব্যঞ্জনাময়,
আর গুলির শব্দে লেখা হয়
মানবমুক্তির চুক্তিপত্র।
রক্ত-রঞ্জিত নগরপথে
যে পদচিহ্ন রেখেছিল আবু সাইদ,
তার পায়ের চাপে ফাটল ধরেছিল
শাসকের প্রাসাদে,
আর জন্ম নিয়েছিল অবিনশ্বর প্রতিরোধ।
তখন শহরের বাতাস ছিল কাঁটাতারে জড়ানো,
প্রতিটি দেয়াল উচ্চারণ করত অপার হাহাকার—
“বাঁচো, তবে নত হয়ে নয়।”
ছেলেরা—অতিশয়ের, উদাত্ত, দীপ্ত,
বুক উজাড় করে হয়ে উঠেছিল
সময়ের সংহত প্রতিমূর্তি।
ওরা নাম জানত, পতাকা জানত না—
তবু তাদের মৃত্যুর মধ্যে
একটি অবিভাজ্য স্বাধীনতার শিকড় গাঁথা ছিল।
জুলাই তখন ছিল লাল,
লাল মানে বেদনা,
লাল মানে নির্ভীকতা,
লাল মানে প্রণয়—
মাটির সঙ্গে মানুষের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ধূলিকণা
স্মরণ করে আজও সেই রাত্রি—
যেখানে ব্যারিকেডের ওপাশে দাঁড়িয়ে
কে যেন ফিসফিস করে বলেছিল—
“রক্তই যথার্থ ভাষা।”
একেকটি লাশ ছিল একেকটি কবিতা,
যার শিরোনাম লেখা হত
কান্নায়, গর্জনে, প্রতিজ্ঞায়।
এই মাসে—
বৃষ্টিধারাও যেন আর নিছক বৃষ্টি নয়,
সে যেন আত্মত্যাগের মধুর আত্মপরিচয়;
একজন শহীদের চোখের চাওয়া হয়ে
নেমে আসে আকাশ থেকে।
গণঅভ্যুত্থান মানে—
সামষ্টিক হৃদস্পন্দনের বজ্রনিনাদ,
যেখানে মানুষ এক মুহূর্তে মানুষ হয়ে ওঠে না,
বরং যুগযুগান্ত ধরে দগ্ধ হয়
তবেই তার জন্ম হয় ইতিহাসে।
তাই,
জুলাই মানে শুধু মাস নয়—
একটি জাতিসত্তার অন্তঃস্থলে খচিত মহাস্মৃতি,
যা যুগপৎ শোক ও গৌরবের দীপশিখা হয়ে জ্বলে।
এখনো,
বর্ষার প্রতিটি বাজ পড়া শব্দে মনে হয়—
কেউ যেন মেঘের আড়াল থেকে বলছে,
“আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো—
তোমার নিঃশ্বাসে,
তোমার প্রতিবাদে,
তোমার আত্মমর্যাদায়।”
উৎসর্গঃ এই কবিতা উৎসর্গিত সকল নামহীন শহীদদেরকে, যারা জুলাই মাসে হয়ে উঠেছিলেন এক একটি জ্বলন্ত আলোকস্তম্ভ।