এই তো কদিন পূর্বে হয়েছে আপদটা চিরবিদায়
তোর মা ছিল কুড়ানো মেয়ে - ছেলেকে বলা কি যায়?
তার চেয়ে ভালো বড় হলে সে জানবে মা তার মৃত
পরিচয়হীন মায়ের জন্যে হতে চায় কে আর ঘৃণিত?


আরফান ভাবে মনে মনে আর এক এক করে ছোড়ে -
আছিয়ার যতো ফেলে যাওয়া স্মৃতি - সমুখে আগুনে পোড়ে।
যৌবনের এক জ্বালাময়ী ক্ষণে পেয়েছিল যার দেখা
ক্ষণিকের মোহে ভাগ্যে ভুলটা নিজের হাতেই লেখা।


একদিন সেই অষ্টাদশীর রূপে পড়েছিল প্রেমে
বাবা মা'র সে কুড়ানো মেয়ে, জেনেও যায়নি থেমে।
আছিয়া ছিল না পালক মা-বাবার ঔরসজাত মেয়ে
আপত্য স্নেহে পালন করেছে রাস্তার পাশে পেয়ে।


কোনদিন তারা ভাবেনি তারে তাদের মেয়ে সে নয়
সেই শুধু আলো সন্তানহীনের আঁধার জগতময়।
সেদিন আরফান রূপের মোহে না হয় ছিলই কানা
আজও বোঝেনি বাবা মা তার কেন করেনিকো মানা।


বিবাহের পরে কয়টি বছর সুখ ভরা ছিল ঘরে
প্রেমের নদীতে ভেসেছে হেসেছে দুজনেই বুক ভরে।
তারপর এলো ঘর আলো করে একটি পুত্র ছেলে
আদরে সোহাগে নিয়েছে জড়িয়ে দুজনেই বুক মেলে।


সৌভাগ্যের সিঁড়িটা বেয়ে আরফানও ওঠে উচ্চে
আর তারই সাথে কিছু দূরে রাখে সমাজের কিছু তুচ্ছে।
এসেছে আছিয়ার ভুবনমোহিনী যৌবনে কিছু ভাটা
সংসারে শত কাজের মাঝে সাজ-রূপও সাদামাটা।


এ জগত থেকে নিয়েছে বিদায় দুজনেরই পিতামাতা
মাথার উপর আছিয়ার নেই পালক মা-বাবার ছাতা।
স্বামী-সংসারে সব দায়িত্ব তারই 'পরে আজ ন্যস্ত
কাজ ও কর্মে স্বামী থাকে আজ শহরেই বেশী ব্যস্ত।


বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী যার বাড়িতেই যায়
আরফান যেন ভোগে আজকাল মনের এক হীনতায়।
সবাই যেন তার দিকে চেয়ে বলে ভ্রূকুটি হেনে
কুড়ানো মেয়ে তার ঘরের স্ত্রী গিয়েছে সবাই জেনে।


ঘরে ফেরে সে ক্লান্ত দেহে উদাস-ক্ষিপ্ত মনে
আছিয়া ছাড়াও দুর্ব্যবহার করে অনেকের সনে।
উদ্বিগ্নে আছিয়া ভাবে স্বামী কী তার নেশাগ্রস্ত
স্বামী কী তারে ঘৃণা করে আজ - ভেবে হয় বিধ্বস্ত।


একদা এমন কথা বেকথায় আরফান তাকে জানায়
যার ঘরে বউ কুড়ানো মেয়ে সুখ তার মনে মানায়?
পরদিন থেকে আছিয়াকে আর পায়নি কেউ-ই খুঁজে
বেঁচে থাকলেও ফিরবে না সে, আরফান গেছে বুঝে।


স্মৃতিগুলি তার পুড়াতে পুড়াতে আগুনের দিকে চেয়ে
সম্বিত ফেরে হাতে একখানা রঙিন কাগজ পেয়ে।
দেখে সেটা তার মায়ের পত্র, বাবাকে একদিন লেখা
মায়েরই দেয়া আছিয়ার বাকসে নিচে পেলো তার দেখা।


"আল্লাহর কাছে, তোমার কাছে আমার এ কৃতজ্ঞতা
আজীবন গোপন রইল আমার বড় লজ্জার কথা।
কেউ যা জানেনি, কোনদিন যেন জানে না তা আরফান
আমি ছিলাম এক কুড়ানো মেয়ে - আমার সে সন্তান।


ভালোবেসে তুমি বিয়ে করেছিলে এই কুড়ানো মেয়েকে
আমার মতো ধন্য হয়েছে এতো ভালোবাসা পেয়ে কে?
তোমার মতো পুরুষ পেলে নারীর  পৃথিবী স্বর্গ
ধন্য আমি নিজেকে করে তোমার সেবায় উত্সর্গ।"