তুমি আসো। ফিরেও যাও।
নীরবতার শহরে ভীষণ রকম ভালোবাসাও হয়।
তারপরও বলা হয়ে ওঠে না
হঠাৎ করে এসে
   আবার হঠাৎ করে কেন হারিয়ে যাও?
   এক দীর্ঘতার ছুটি নিয়ে কাছে থাকা যায় না?
নীরবতায় শত কথার আড়ালে
   তবু কেন জানি একটা ঘাটতি থেকে যায়
   তোমার আগমন অজানা পড়ে রয়।
আমি জানি
   সময়ে বসন্ত নামিয়ে তুমি দৈবাৎ আবার আসবে
   শরত আকাশে যেমন মেঘ হাসে, তেমনি হাসবে
তারপর খানিক কোলাহলের পর
   মেঘ যেমন চলে যায়, তেমনি চলে যাবে।
বাধার দেওয়ার ইচ্ছে হয়, হবে। কিন্তু সেই নীরব চুক্তি!
আমার কিচ্ছু বলার থাকেনা
শুধু তোমার চলা যাওয়া প্রতি চেয়ে থাকা ছাড়া,
     আমার কিচ্ছুই বলার থাকে না।


ইচ্ছে অকারণে তুমি আসো যদি মন জাগরণে,
    যোগাযোগের কোনো উপায়ও থাকে না।
আমিও হঠাৎ পাখিডাকা বিকেলে তোমাকে খুঁজি,
   স্নিগ্ধ সকালে চা এর কাপেও তোমাকে খুঁজি
   তোমার হাসি খুঁজি
   তোমার তিল খুঁজি
   তোমার স্তন খুঁজি
তখন তুমি মহাকাল দূরত্বে
বেখেয়াল হাসিতে ছন্নছাড়া ঘাসফুলের মত
   শুধু আমার পড়ে থাকা।


জুবাইদা, আঁধার রাতে নিজ বালিশের পাশে
   আমাকে অস্পর্শে খুঁজেছো কি কখনো?
যেদিন সিগারেটে মৃতের স্বাদ থাকে না
যেদিন মদের বোতল নেশা আনতে ব্যর্থ হয়
সেসব দিনে তোমার আঁধার রাতের ভাবনা
       আমাকে পৃথিবীর নেশা এনে দেয়।
       ঘুমের ভগ্নতায়
       তোমার মগ্নতায়
       উষ্ণদেহ নগ্নতায়
       তোমার ঘনঘন নিঃশ্বাসে
       ঘুরে ঘুরে মরে মরে নেশা যখন আসে
       ইচ্ছে কামড়ে ঠোঁটে কাঁধে
       কচি স্তনের স্বাদে
       অবাধে নেশা আমাকে খেয়ে ফেলে।
আর স্পর্শহীনতায় আমি তোমাকে খেয়ে ফেলি।
তুমি এমনটা কখনো ভেবেছ কি?


থাক, না ভাবলেও বসন্ত আসবে।
তুমি বসন্ত মহামারিতে নীরবতার শহরে আবার এসো জুবাইদা,
স্বাধীন সত্তার জলাঞ্জলিতে নয়, গীতাঞ্জলিতে-
হা আবার নীরবতার শহরে ভীষণ রকম ভালবাসা হবে।


৪ মে, ২০২১


(কাব্যগ্রন্থ – সম্ভাষণ)



জুবাইদার ওষ্ঠ জেগেছিল (দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ৮)


গতরাতে যখন এসে মিললে উড়ো চিঠির মত
পুকুরে উঠেছিল ঢেউ শত শত।
কি জানি কি মনে,
জুবাইদা, গোপনে তোমার ওষ্ঠ জেগেছিল।
লেগেছিল বাতাস কালো মেঘে
চঞ্চল ভ্রমরের মত ছিল তোমার ঠোঁটের গতিবিধি;
সমুদ্রঅবধি পড়েছিল সাড়া।
তুমি যেন জেকে বসেছিলে দুরন্ত ঘোড়ার পিঠে
মিঠেপানিতেও তৃষ্ণা মিটানোর কোনো নাম ছিল না
তোমার কোনো অবিরাম ছিল না
ছিল না তাড়া, ছিল না কোনো অভিযোগের অনুনয়;
ছিল নিঃশ্বাসের উপরিপাতন
খর জিভের গাঢ় উদ্দীপন;
পতন আমার গিরিখাতে
সময়ের হলুদ অজুহাতে
          ভালবাসা নীরব দাঁড়িয়েছিল
হারিয়েছিল যেন জীবনের অবলীলায়।
তোমার যেন কোনো কাল ছিল না
        সমুদ্র নায়ে পাল ছিল না
দোপাটি নেশা মুহূর্তই যেন শেষ
তাই আমাকে তোমার চিবিয়ে খাওয়ার ছিল সফল প্রয়াস।
উচ্ছ্বাস ছিল তোমার বক্ষঘাটিতে
নেশা ছিল তোমার ঠোঁটের পরিপাটিতে;
আমার জমানো আদুরে দুষ্টু পরশে
তোমার সুষ্ঠুনিতম্ব ভয়াবহ আপোষে
ধীরে ধীরে নীড়ে নাও ফিরেছিল মিলনের সমুদ্রতট;
তোলপাড় তোলপাড়
চুম্বনে চুম্বনে নেশা ভেঙে চুরমার
বারবার ভূমধ্যসাগরে ভুল থামাতে নামিয়েছিলাম ঠোঁট।


১১ মে ২০২১



নীরব বলয়ে প্রেমপ্রলয়ে জুবাইদা (দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ৯)


নীরবে প্রেম যখন সহস্র জামানার
সরবে তখন প্রেমের কি বা প্রয়োজন!
আয়োজন থাক না বলা কথার দ্বারে
প্রেম থাকুক হৃদয়ে শ্বাশত মহিমায়।
কালক্ষেপণে বিষাদের জ্বালা
প্রলয় ভেঙে অবসাদ
নরকঅগ্নি বুকে দাউদাউ
বিন্দু প্রেমে পৃথিবী অবসান।
আমি কাপুরষ, কালপুরুষে বিবর্তন
কোনো যতিচ্ছেদে আমাদের থামা নেই।
আলোয় আলোকিত আলয়, মালয়সাগরে আমাদের ডুবসাঁতার
নীরববলয়ে প্রেমপ্রলয়ে জুবাইদা তুমি নেশাতুর আমি নেশাঘর
ঝড়ে দেহ হয় হোক ব্যবেচ্ছদ
যৌবনজ্বালা আজ বিদ্রোহে শান্ত দোয়াব
প্রকৃতি সে তো শ্বেত পাথরের খোয়াব
আস্বাদন, অবগাহন, মোহনের ঝাপসা নেশার আলখাল্লা।


২৯ মে ২০২১


সেদিন প্রেমের মৃত্যু ছিল (চুক্তিভঙ্গ)


সঙ্গম জোয়ারে দুজন ভাসমান
জড়িয়ে কাঁধে নামিয়েছ থুতনি। চুক্তিভঙ্গের অশনিসংকেত।
কান কামড়ে নিয়ে শ্রবণ তীক্ষ্ণতা বাড়িয়ে দিয়ে বললে, আমার শেষ বিদায়ের পালা।
তোমার কাঁধ চু্ম্বনরত ওষ্ঠ এখন কম্পমান।
কোলাহলে আজ কিছু ভালবাসার কথা হোক তবে।
চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললে, আমার বিয়ের পর
কোনোদিন যদি নীরবতায় পাশে এসে বসি,
অবৈধ প্রেমসঙ্গমে তুমি মিলবে কি?
ভাসবে কি আজকের মতো ভালোবাসার জোয়ারে।
চাহনি উষর হল
সময় ধূসর হল
তুমি তো জানোই জুবাইদা আমি খাঁখা প্রান্তর আর উষর মরু
এক ফোঁটা জল কোন বৃষ্টি, কোন মেঘ, নদী সমুদ্র থেকে আসে
সেটা হিসেবের সময় কোথায়?
তুমি যদি
হাত ইশারায় আমার ধ্বনিকে থামিয়ে বললে,  তুমি আর কিছু বলো না।
পড়ে থাকা সামনের গল্প সামনেই তৈরি হতে দাও।
বরং চলো আজ আবারো নীরবতার শহরে হারিয়ে
আরও কিছুক্ষণ ভালবাসি।


১৭ জুন ২০২১