-: উপলব্ধি-২ ৩৩:-
কবিতায় গুরু চণ্ডালী : কেমনে অপবাদ খণ্ডালি।
মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।
গদ্যের ছন্দরূপই কবিতা। এমন কোন শ্রুতিধর নাই যে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের রুদ্ধগৃহ প্রবন্ধটা পুরো মুখস্ত করতে পারবে। কিন্তু বহুৎ সাধারণ পাঠক পাবেন যাঁরা দুই বিঘা
জমি কবিতাটা হুবহু মুখস্ত বলতে পারবেন। এর এক মাত্র
কারণ ছন্দমিল। কোরআন শরিফের আয়াতগুলি ছন্দবদ্ধ
বলে হাফেজ সাহেবেরা ত্রিশ পারা কোরান শরিফ মুখস্ত রাখতে পারেন।
ইদানিং একটা কথা শুনতেছি যে কবিতায় গুরুচন্ডালী (সাধু ওচলিত ভাষার সংমিশ্রণ করা) বর্জন করতে হবে। সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্যটা ঘটে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদে।যেমন তাহার -তার,আমার -মোর,যাহার -যার,সেইগুলি -সে 'গুলি,
এইগুলি -এ 'গুলি,খাইব -খাব,যাইব -যাব,রহিল -র 'ল,
যাইবার কালে - যাবার কালে,ধরিব -ধরব ইত্যাদি।
চলিত ভাষা খুব বেশি প্রাচীন নয়। নদীয়া শান্তিপুর অঞ্চলের
কথ্য ভাষাটাই সাহিত্যে চলিত রূপ নেয়। গদ্য রচনায় সাধু চলিতের মিশ্রণ আগাগোড়াই দুষণীয় ছিল,কিন্তু কবিতায় ছন্দ মিলের জন্য সাধু চলিতের সংমিশ্রণে বাক্য গঠনের
রীতি হাজার বছরের পুরোনো।
গণমানুষের মননশীলতা উন্নততর করার জন্য কবিতার উৎপত্তি। বাংলা ভাষায় বহুল পঠিত কবিতার মধ্যে দ্বিজ চন্ডীদাসেরর
"সুখের লাগিয়া এঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল,
অমিয় সাগরে সিনান করিতে সকলই গরল ভেল।"কবিতাটা
সব চেয়ে শ্রুতিমধুর।
যাঁরা গুরুচন্ডালী বাদ দিতে বলেন তাঁদের শুনার জন্যকবিতাটা সাধু ও চলিত দু 'ভাষায়ই লিখে দিচ্ছি। শুনে
বলুন কোনটা গণমানুষ পছন্দ করবে।
সুখের লেগে এ 'ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়ে গেল,
অমিয় সাগরে স্নান করতে সকলই গরল ভেল।
আবার
সুখেরও লাগিয়া এই ঘর বান্ধিলাম অনলে পুড়িয়া যাইল,
অমিয় সাগরে স্নান করিতে সকলই গরল হইল।
যদি কবিতা লিখার প্রধান উদ্দেশ্য গণমানুষকে আনন্দ দান হয়ে থাকে তাহলে শতভাগ লোকই গুরুচন্ডালী
দোষে যুক্ত কবিতাটা গ্রহণ করবে।
আমি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল ইসলাম,জসিম উদ্দিনকে বাদ দিলাম,আধুনিক কবিতার জনক জীবনানন্দ দাসের "আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে।"কে
গুরুচন্ডালী দোষমুক্ত বলতে পারি?
মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবেনা মোহগর্তে,
তাই লিখে দিল। বিশ্ব নিখিল দু' বিঘার পরিবর্তে।
আমরা সাধারণ লোক সাধারণ গণমানুষের জন্য লিখব গুরুচণ্ডালী ভাষায়। আঁতেলেরা আঁতেলদের জন্য লিখুক।
"কলঙ্কী বলিয়া ডাকে সব লোকে তাহাতে নাহিকো দুঃখ,
তোমারি লাগিয়া কলঙ্কের হার গলায় পরিতে সুখ।"
আমি সকল নবীন ও প্রবীণ কবিদের মূল্যবান মতামত আশা করছি।
মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।
০৩/০৯/১৬
সকাল ৯-১৫