আজ বড় বেশি মনে পড়ে বাবা তোমাকে
কেমনে থাকো একা এপারে রেখে আমাকে?
একদিন যদি আমায় না পেতে বুকে
ঘুম কভু আসতো না তোমার দুটি চোখে।
আজ তুমি আমা বিহনে কেমন করে
ঘুমিয়ে আছো চির অঘোর ঘোরে?
তোমার বুকেতে নেই আমার মাথা
কভু কি হয় না তব একটুকু ব্যাথা?
একদিন বাড়ি ফিরে রাত্রি করে
মাকে জিঙ্গাসিলে, "খোকা নেই ঘরে?"
উত্তরে মা কহে বুকে নিয়ে ঢর,
"খোকা গেছে নানি বাড়ি ফিরবে দু'দিন পর।"
"তুমি কি জানো না বউ খোকা বিহীন
কাঁটাতে পারিনা আমি একটিও দিন।"
এই কথা বলে বাবা টর্চ নিয়ে হাতে
আমায় আনতে নানা বাড়ি ছুঁটে গেল রাতে।
ঘুম থেকে তুলে মোর গলাখানি ধরি
কহে, "তোকে ছাড়া আমি থাকতে কি পারি?
চলো, তরা করে যাবে আপন ঘরে
বেড়াবে যত পারো আমি মরিবার পরে।"
আজ বাবা থাকো তুমি কেমন করে
আমাকে ছাড়া ঐ কবর ঘরে?
একদা মাস্টার বাবু অঙ্ক কষার ভুলে
বেত্রাঘাত করে পিষ্ঠে হাই বেঞ্চে তুলে।
স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে গায়ে এলো জ্বর
মাকে বলে, "কি হয়েছে? দেখি ওদিক সর।"
পিষ্ঠদেশে চক্ষু মেলে তাকালে যখন
অগ্নিমূর্তি হয়ে গেল বাবা আমার তখন।
রাগস্বরে মাকে কহে, "শুনো তোমায় বলি,
আমার পুতের পড়া লেখা শিকেয় রাখো তুলি।
পুত্র মেরে বিদ্যাসাগর নাহি প্রয়োজন
বড় হলে করো ছেলের ব্যবসার আয়োজন।"
নিজ হাতে খাইয়ে দিতে আমায় ভাত মেখে
মাছের কাটা বেছে দিতে থালের কোনায় রেখে।
সারা রাত পাখা হাতে থাকতে তুমি জেগে
"এবার তুমি একটু ঘুমাও" মা বলতেন রেগে।
"খোকা তোমার ঘুমিয়ে গেছে আর লাগবে না"
"এই যে দেখো ঘামে ভেজা যাদুর শরীরখানা।"
এই বলে সারারাত ঘুরাতেন পাখা
তাঁর বিহনে এই জীবন কেমনে যায় গো রাখা?
থাকতে তবু হবে জানি বুকে পাষান বেঁধে
তোমার কথা পড়লে মনে বুক ভাসাব কেঁদে।।