আশ্বিন গিয়ে কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান
সোনার দানায় ভরে গেল আমার ছোট্ট উঠান।
বউটি আমার ভেজায় খুশি সোনার আমন পেয়ে
গোলায় তুলতে সে সব ধান ঘামে গেল নেয়ে।
শত ক্লান্তির মাঝেও শ্রান্তি দেখলে তাহার মুখ
ভালবাসায় ভরে ওঠে এই কৃষাণের বুক।
পরের ক্ষেতে জন বেচে কি জন রাখা যায়?
আমার বউটি ছিল ক্ষেতে মাঠে একমাত্র সহায়।
ধান কেটে বোঝা বেঁধে মাথায় দিত তুলে
নিন্দুকের মুখ, লাজ-লজ্জার কথা গিয়ে ভুলে।
রাগ করে বলতাম যদি,‍''এবার বাড়ী যাতো
দশ জনের কান কথা ভাল লাগে নাতো।
যা পারি ধীরে ধীরে করব আমি একা
আর কোন বউ-ঝিকে যায় কি চকে দেখা?"
কাঁচি খানা ছুঁড়ে ফেলে বলত রাগস্বরে,
''নিন্দুকের গায়ে ঝাটা রাখ ওসব দূরে।
নিজে যখন কাম করিতে উত্তর-দক্ষিণ যায়
অনাহারে থাকি তখন কেউ কি ফিরে চায়?
যাদু আমার কত কস্ট করেছিল ভাতে
তোমার গুষ্ঠির কেউ কি মুষ্ঠি দিয়েছিল পাতে?
ভাত দেওয়ানের বাসুর নাই বদনামে ভাই
ওসব ঠাকুরের ভয় করব নাকি ছাই?"
ওঠোনেতে ধান ছড়ানো আকাশ মেঘে কালা
ক্ষুধা কাতর ছেলেটি মোর করছে শুুধু জ্বালা।
মায়ের পিছে আঁচল ধরে করছে টানাটানি,
''ম্যালা ভোগ লেগেছে মা, দে ভাত পানি।"
বিয়ের পর দশটি বছর খালি ছিল বুক
শত দরগায় শিরনি দিয়ে দূর হইল দুখ্।
এক নদী চোখের জলে পাইল বুকের ধন
আজ রাগের মাথায় চড় মারিতে কাঁপিলনা মন।
পুত্র হাঁটলে আঘাত পায় যে মায়ে বুকে
ধানের মায়ায় পুত্র প্রেম খানিক গের চুকে।
'' আবার যদি ম্যাঘে ভিজে আমার শুকনা ধান
এক আছাড়ে কেড়ে নেব দেখিস তোর প্রাণ।"
এই বলিয়া নিজের মুখে আঁচল দিল চেপে
কি এক অজানা ভয়ে হ‌্যদয় উঠল কেঁপে,-
''মাফ কর দোয়াল খোদা আর না কবো মুখে
হাজার বছর থাকে যেন যাদু আমার বুকে।"
বুকের মাঝে টেনে এনে পুত্র দেহ খানি
কহে, ''একটু সবুর কর বাবা যদি নামে পানি?"
রাত্রি বেলা ধানের গোলা ঝাপটে ধরে বুকে
কহে, ''এ যে আমার স্বামীর শ্রম, রাখব চোখে চোখে।
কাল ঢেঁকি ছেঁটে চাল বেনে রাঁধব চিতই পিঠে
ঝোলা গুড়ে খেতে তা লাগবে বড় মিঠে।"
বউয়ের কথা শুনে আমার হাসি পায় মনে
ধানের গোলা এমন করে কেউ ধরে যতনে?
ধানের সাথে বউয়ের প্রেম মনে লাগে ভয়
না জানি পাছে আমার সব হারাতে হয়।
জায়নামাজে বসে বলে, ''ওহে দয়াময়,
আমার ক্ষেতের শরীর যেন কভু না ফুরায়।
ঝড়-খড়া,বন্যা-বাদল থাকে যেন দূরে
আমার জমির উপর তোমার রহমত যেন পড়ে।"