আমি মুক্তিযোদ্ধা, দেশের গর্বিত সূর্য সন্তান।
আমিই এনেছি বাংলার আকাশে লাল-সবুজের পতাকা।
এ যে শুধু পতাকা নয়,
এ আমার মায়ের শত কান্না ভেজা শাড়ীর শুভ্র আঁচল,
এ আমার কেবলামুখী বাবার পুত পবিত্র জায়নামাজ।
এ যে শুধু পতাকা নয়,
এ আমার নব বধূর অশ্রুভেজা নয়নে তাঁকিয়ে থাকা দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান,
এ আমার নব জাতকের পৃথিবীতে আগমন বার্তা 'ওয়া' 'ওয়া' গান।
এ যে শুধু পতাকা নয়,
এ আমার প্রয়াত দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানির কবরের এক মুঠো নির্মল মাটি
এ আমার আদুরে বোনের হাতে বুনা নকশি কাঁথা আর শ্যামলিয়া শীতল পাটি।
এ যে শুধু পতাকা নয়,
এ আমার হেমন্তের পদ্মা, মেঘনা,যমুনার পড়ন্ত বিকেল;
দু'পাশের কাঁশ ফুলের নরম ছোঁয়া,
কিংবা ময়না কাটার তিরে বসে সিরাজ চাচার দিবাবসানের বাঁশির সূর-
'ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আর পন্থের পানে...'
এ যে শুধু পতাকা নয়,
এ আমার ডানা মেলা সীমাহীন সবুজ আকাশ
এ আমার সবুজ প্রান্তরে বুক ভরা এক খন্ড নিঃশ্বাস,
এ আমার ফুস ফুস প্রসারিত করা এক মুঠো বিশুদ্ধ বাতাস।
এ পতাকা এনেছি আমি বাংলার আকাশে,
ত্রিশ লক্ষ ভাইয়ের প্রাণ নিগৃত রক্তবানে ভাসিয়ে,
সম্ভ্রম হারা তিন লক্ষ বোনের হাহাকার মেশানো বাতাসে উড়িয়ে।
তাই আজ তার প্রতিদান চাই।
ত্রিশ লক্ষ ভাই হারানোর প্রতিদান,
তিন লক্ষ বোনের ইজ্জত হারানোর প্রতিদান,
লক্ষ বাবা মায়ের সন্তান হারা আর্তনাদের প্রতিদান,
টগ বগে যৌবনের দুইশত চুয়াত্তরটি মধুর রজনী হারানোর প্রতিদান
কিংবা আমার দীর্ঘ নয় মাস নিদ্রাহীন মৃত্যু ভয় মেশানো শ্রমের প্রতিদান।
পতাকা পেয়েছি তাতে কি?
পেট যে উপোষ আমার, ক্ষুধা মেটাতে হবে যে তার।
পতাকার জন্যে শ্রম দিয়েছি, তাই বলে কি পেটের জন্যেও?
না না না, এভাবে চলবে না আমার দিন
হাজার, লক্ষে শোধিয়ে দাও আমার ঋন,
পাঁচ হাজার,দশ হাজার,পনের হাজার কিংবা আরো বেশিতে।
যেতে হয় যাব শত দ্বারে,
পায়ে ধরতে হয় ধরবো যারে পাই তারে।
যাব মেয়র, মেম্বার, চেয়ারম্যান কিংবা মন্ত্রী-এম.পি'র দ্বারে
ধরব হাতে ওসি, এস.পি, ডি.সি, চকিদার যারে পাই তারে।
সবাইকে জানাতে হয় জানাবো মাথা নুঁইয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা
কারণ, আমি যে এক নির্লজ্জ লোভী মুক্তিযোদ্ধা।।