সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ দেওয়া হয়েছে। এ বছর ১১ বিভাগে পুরস্কার পায়েছেন ১৫ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর উদ্বোধনী আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য যারা পুরস্কার পায়েছেন তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে এই লেখায় সাজানো হয়েছে।

কবিতায় অবদানের জন্য পুরস্কার
ফারুক মাহমুদ: সত্তর দশকের উত্তাল সময়কে ধারণ করে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যাদের হাতে নতুন ধারার কবিতার সূত্রপাত হয়, তাদের মধ্যে ফারুক মাহমুদ অন্যতম। কবিতার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে তার বসবাস। গদ্য ও শিশুসাহিত্য রচনায়ও তিনি সমান পারদর্শী। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৭। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে ১৯৫২ সালের ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর। বিচিত্র পেশায় জড়িত থাকলেও এখন সাংবাদিকতা করছেন। ফারুক মাহমুদের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হচ্ছেÑ ‘পাথরের ফুল’, ‘অপূর্ণ তুমি আনন্দ বিষাদে’, ‘অনন্ত বেলা থেকে আছি’, ‘এত কাছে এত দূরে’, ‘সৌন্দর্য হে ভয়ানক’, ‘বাঘের বিষণ্ন দিন, ‘হৃদয়ে প্রেমের দিন’, ‘ভ্রƒণপদ্য’, ‘অন্ধকারে মুগ্ধ’, ‘রৌদ্র এবং জলের পিপাসা’, ‘সমান্য আগুন যথেষ্ট জীবন’, ‘নির্বাচিত শত পদ্য’, ‘মহাভারতের প্রেম’, ‘ফিরে যাব দূরত্বের কাছে’, ‘আগুনে আপত্তি নেই’, ‘দাগ নয় চিহ্ন’, ‘দুই হৃদয়ে নদী’, ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ এবং ‘ও স্মৃতিমেঘ ও স্মৃতিরোদ’। কাব্যচর্চার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০৯ সালে সুকুমার রায় সাহিত্য পদকে ভূষিত হয়েছেন।


তারিক সুজাত: জনপ্রিয় কবি তারিক সুজাত। বহুল পঠিত ও অনূদিত এই কবিতাগুচ্ছ বাংলাদেশের কবিতাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিতও করেছেন তিনি। বাংলা কবিতায় তিনি সৃজনশীল কবি হিসেবে স্বোপার্জিত মুদ্রায় নিজেকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তারিক সুজাতের জন্ম ঢাকায় ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫। কবি-লেখক-ভাষাসৈনিক বহুদর্শী পিতা তোফাজ্জল হোসেন ও মা হোসনে হেনা হোসেনের দ্বিতীয় সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস। কাব্যগ্রন্থÑ ‘প্রতিবিম্ব ভেঙে যাও’ ‘যাবো বলে থেমে থাকতে নেই’ ‘সময়কে আমি উল্টোপায়ে হেঁটে যেতে দেখেছি’, ‘আকাশপুরাণ’, ‘কবিতা সংগ্রহ’, ‘সবুজে ধুয়েছি পা’ ‘নির্বাচিত ১০০ কবিতা’, ‘জন্মের আগেই আমি মৃত্যুকে করেছি আলিঙ্গন’ ও ‘ছিন্নডানার মানুষ পাখি’। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে অকালপ্রয়াত কবি আবুল হাসানের গল্প সংগ্রহ ও কাব্যনাটক ওরা কয়েকজন।


কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য পুরস্কার
তাপস মজুমদার : বাংলা ছোটগল্পের শক্তপোক্ত শানবাঁধানো মহাসড়কে এক স্বতন্ত্র পথের পথিক তাপস মজুমদার। তাঁর প্রতিটি গল্পই স্বতন্ত্র মহিমায় মহিমান্বিত; ভাষা উপমা শব্দ বাক্যবন্ধ ও রূপকল্পে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। বলা যায় গল্পদ্রষ্টা। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব ও বাংলা একাডেমির সদস্য। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থÑ ‘মঙ্গল সংহিতা’, ‘একটি দশ টাকার নোট’, ‘কেউ কাউকে চেনে না’, ‘অন্তর্বত্নী পুতুল’ ও ‘শব্দকরের আকাশবাজি’।


পারভেজ হোসেন : পারভেজ হোসেন এই সময়ের একজন অনুসন্ধিৎসু ও সংবেদনশীল গল্পকার। আধুনিক মানুষের চৈতন্যের ভেতরে বসে যেন কথা বলেন। কাদামাটির গভীরে কেঁচোর মতো সংকুচিত প্রসারিত হয়ে তাঁর গল্পের চরিত্রেরা যেন নিজেদের উন্মোচিত করতে থাকে মনোলগ-এর মাধ্যমে।
পারভেজ হোসেন ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬০ সনে। বাংলা অনার্সসহ এমএ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে। আশির দশকের ছোটকাগজ সংবেদ-এর সম্পাদক পারভেজ হোসেন বর্তমানে মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসায় জড়িত। জেমকন সাহিত্য পুরস্কার-২০১০ পেয়েছেন ‘যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলর’ গল্পগ্রন্থের জন্য। ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১৯ পেয়েছেন ‘ডুবোচর’ গল্পগ্রন্থের জন্য।


প্রবন্ধ/গবেষণায় অবদানের জন্য পুরস্কার
মাসুদুজ্জামান: মাসুদুজ্জামান প্রধানত কবি। তবে প্রবন্ধ ও গবেষণাতেও অনিঃশেষ আগ্রহ তাঁর। জাতীয় দৈনিক, ছোটকাগজ ও সাহিত্য পত্রিকায় সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব, নারীবাদ, বিশেষ করে বিদেশি উল্লেখযোগ্য লেখকদের সুখপাঠ্য লেখার অনুবাদসূত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত একজন লেখক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : নির্বাচিত কবিতা (কবিতা), বাংলাদেশের সাহিত্যপাঠ : রাষ্ট্র রাইফেল ও ব্যক্তিমানুষের বয়ান (প্রবন্ধ), বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার কবিতা : দুই প্রতিবেশী ধারা (প্রবন্ধ), রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর শিক্ষাভাবনা (প্রবন্ধ), পুরুষতন্ত্র ও যৌনরাজনীতি (নারী অধ্যয়ন), নারী যৌনতা রাজনীতি (নারী-অধ্যয়ন), কাফকার প্রেম (অনুবাদ), জেন্ডার বিশ্বকোষ (সেলিনা হোসেনের সঙ্গে যৌথ সম্পাদনা)। পেশাগত জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কয়েক বছর তাইওয়ানের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সাহিত্য-সংস্কৃতির অনলাইন পোর্টাল ‘তীরন্দাজ’-এর সম্পাদক।


অনুবাদে অবদানের জন্য পুরস্কার
আলম খোরশেদ: ছাত্রাবস্থা থেকেই আলম খোরশেদ সাহিত্যচর্চা ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । শিল্পসাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সমান উৎসাহী, তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় অবশ্য সমকালীন বিশ্বসাহিত্য।  জন্ম ১৯৬০ সালে কুমিল্লায়। পেশায় প্রকৌশলী। প্রবাসে উচ্চশিক্ষা ও দীর্ঘ পেশাজীবন শেষে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন ২০০৪ সালে। ছাত্রাবস্থা থেকে সাহিত্যচর্চা ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর সম্পাদিত লাতিন আমেরিকান ছোটোগল্প সংকলন জাদুবাস্তবতার গাথা আমাদের অনুবাদ সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সম্পাদনা, অনুবাদ ও মৌলিক রচনা মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়ির অধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তির মধ্যে রয়েছে ভার্জিনিয়া উল্ফ-এর অমর গ্রন্থ অ জড়ড়স ড়ভ ঙহব'ং ঙহি-এর অনুবাদ নিজের একটি কামরা, নোবেল বিজয়ী কবি ভিস্লাভা শিম্বস্কার ত্রিশটি কবিতার অনুবাদ, বাংলাদেশের নারীবাদী গল্প-সংকলন কাটা জিহ্বার কথা, মূল স্প্যানিশ ভাষা থেকে অনূদিত বোর্হেস ও বিক্রোরিয়া ওকাম্পোর আলাপচারিতা, নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’র নাট্যানুবাদ গির্জা বিয়ে, হেনরি মিলারের আত্মজৈবনিক রচনা জবভষবপঃরড়হং-এর অনুবাদ ভাবনাগুচ্ছ, সালমান রুশদির ভ্রমণ আখ্যান ঞযব ঔধমঁধৎ ঝসরষব-এর অনুবাদ ইত্যাদি বর্তমানে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরে তাঁর নিজের গড়া সংস্কৃতি কেন্দ্র বিস্তার পরিচালনার কাজে মগ্ন রয়েছেন।


নাটকের অবদানের জন্য পুরস্কার
মিলন কান্তি দে: দেশের যাত্রাশিল্পের জীবন্ত কিংবদন্তি বলা হয় মিলন কান্তি দে’কে। পত্রপত্রিকায় অভিহিত হয়েছেন কখনো ‘যাত্রার নিরন্তর যোদ্ধা’, কখনো ‘যাত্রার নিবেদিত সাধক’, কখনো-বা যাত্রাশিল্পের বর্তমান ‘অভিভাবক’ হিসেবে। এ শিল্পের সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় ৫০ বছর যাবত তার নিরলস অভিযাত্রা। ১৯৪৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বুধবার চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার ছনহরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নগেন্দ্র লাল দে, মা- সুনীতি বালা দে। দারিদ্র্যের কারণে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ হয়নি তার। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় ১৯৬৬ সালে পেশাদার যাত্রাদলে যোগ দেন। অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক চিত্র পূর্বানী, দৈনিক বাংলার বাণী এবং দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক সমকাল ও ত্রৈমাসিক থিয়েটার-এ তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনার সংখ্যা শতাধিক।  তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন নাট্যসংগঠনের যাত্রাবিষয়ক কর্মশালায় মুখ্য প্রশিক্ষকের দাযত্বি পালন করেছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে চলেছেন যাত্রাপালা। তার রচিত পালাগুলো হচ্ছে পাতা হাতেম তাই, বিদ্রোহী নজরুল, এই দেশ এই মাটি এবং বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনভিত্তিক পালা ‘বাংলার মহানায়ক’।
যাত্রাশিল্পে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় যাত্রা উৎসবে তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিশেষ যাত্রাব্যক্তিত্বের পুরস্কারে ভূষিত হন। এর আগে ১৯৮৬ সালে যাত্রা সাংবাদিকতার পথিকৃত হিসেবে ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’ লাভ করেন। অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদক আন্তর্জাতিক ইবসেন অ্যাওয়ার্ড এবং টেলিভিশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ট্র্যাব)-এর শ্রেষ্ঠ যাত্রা সংগঠকের পদকও লাভ করেন।


ফরিদ আহমদ দুলাল: বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে কবি ফরিদ আহমদ দুলাল এক অনিবার্য নাম। জন্ম ১৮ মে ১৯৫৬, ময়মনসিংহে। বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ফরিদ আহমদ দুলাল-এর বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। চার দশকের অধিককাল ধরে লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত রেখে গড়ে তুলেছেন নিজেকে; সম্পন্ন করে তোলার প্রয়োজনে বারবার নিজেকে ভেঙেছেন আবার গড়েও নিয়েছেন; নিজেকে অতিক্রমও করেছেন বারবার। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লিখেছেন নিষ্ঠার সাথে এবং প্রতিটি শাখাতেই নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দশটি কাব্য, আটটি নাটক, একটি গল্প ও একটি উপন্যাস; দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন কাগজে অসংখ্য প্রবন্ধ লিখে বিদগ্ধজনের দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। নাটক-কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি নিজেকে গবেষণাকর্মেও নিয়োজিত করেছেন; তাঁর গবেষণার বিষয় ময়মনসিংহের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি; ‘স্বাধীনতা-উত্তর ময়মনসিংহে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা’ তাঁর প্রধান গবেষণা কাজ।


শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য পুরস্কার
ধ্রুব এষ: দেশের জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী ধ্রুব এষ। প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি কবিতা ও গল্প লিখে থাকেন। মধ্য ১৯৯০-এর পর তিনি ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ গ্রন্থের প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছেন। রহস্যপত্রিকার শিল্প সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি ৭ জানুয়ারি ১৯৬৭ সালে উকিলপাড়া, সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। মা  লীলা এষ, বাবা ভূপতি রঞ্জন এষ। সার্বক্ষণিক প্রচ্ছদশিল্পী। পাশাপাশি লিখেন। মূলত ছোটদের জন্য লিখলেও লিখতে পছন্দ করেন রহস্য কাহিনি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত চল্লিশের অধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।


মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণার অবদানের জন্য পুরস্কার
মুহাম্মদ শামসুল হক: চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য ইতিহাসের খসড়া সম্পাদক বিশিষ্ট গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া আল্লাই কাগজি পাড়া গ্রামে। বাবা মৌলভি নুরুল হক ও মা নূর খাতুন। ৭৭ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক জমানার হাত ধরে সাংবাদিকতার শুরু। জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর জন্মলগ্নে যুক্ত হয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর পদত্যাগ। তিনি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা এবং লেখালেখিতে নিয়োজিত। গত সাড়ে ৫ বছর ধরে প্রকাশ করছেন গবেষণামূলক সাময়িকী ইতিহাসের খসড়া। তিনি একজন প্রাবন্ধিকও। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ/নিবন্ধ প্রায় চারশ’। প্রকাশিত গ্রন্থ ৮টি। তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাকে ‘একুশে স্মারক’ সম্মাননা পদক পান।


বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষণার অবদানের জন্য পুরস্কার
সুভাষ সিংহ রায় : বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য এবং এবি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম ও সাপ্তাহিক বাংলাবিচিত্রা'র সম্পাদক। তিনি জন্ম ১৯৬৬ সালে যশোর জেলায়, বিখ্যাত সিংহ রায় পরিবারে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাগ্মিতা তাঁর রক্তে। পেশায় ওষুধ বিজ্ঞানী, প্রবলভাবে রাজনীতি করেন, এক সময়ের ছাত্রনেতা ছিলেন। লিখতে শুরু করেছেন বেশ আগে থেকেই, কলামিস্ট নানা পত্রিকায়। বাংলাদেশের বিতর্ক চর্চায় যে ক’জন নতুন ধারা সূচনা করেন সুভাষ অবশ্যই তাদের অন্যতম। সুভাষ আপদমস্তক প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন মানুষ, যিনি ইস্পাতকে ইস্পাতই বলেন। সমাজ ও মানুষকে তিনি বিশ্লেষণ করেন পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে। খাপখোলা ধারালো তলোয়ারের মতো শাণিত শব্দাবলি, সত্য তবে বিদ্ধ করে হৃদয়। তিনি বঙ্গবন্ধুকে গবেষণামূলক অসংখ্য গ্রন্থ লিখেছেন। এরমধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদাযকিতা’, ‘পাঠক বঙ্গবন্ধু লেখক বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’, ‘শেখ হাসিনার রাজনীতি’ ও ‘জনতার চোখে আওয়ামী লীগ’ তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ।


বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানের অবদানের জন্য পুরস্কার
মোকারম হোসেন : পরিবেশসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য নাম মোকারম হোসেন। জন্ম মাতুলালয়ে ৩০ অক্টোবর, ১৯৭২। বাবা একেএম ফজলুল করিম, মা মনোয়ারা বেগম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা। একযুগেরও সময় দৈনিক প্রথম আলোয় ‘প্রকৃতি’ কলামে লিখছেন। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থÑ বাংলাদেশের নদী, বর্ণমালায় বাংলাদেশ, বিশ্বের সেরা দর্শনীয় স্থান, বাংলাদেশের মেলা, ঘুরে আসি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ফুল ও ফল, জীবনের জন্য বৃক্ষ, বিপন্ন প্রজাতির খেরোখাতা, প্রকৃতি ও প্রাণসম্পদ (সম্পাদনা), বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, ঋতুর রঙে ফুলের শোভা, আমাদের সবুজ বন্ধুরা, ভোরের ফুল সন্ধ্যার পাখিরা, আমাদের পার্ক ও উদ্যান, ছয় রঙের বাংলাদেশ ইত্যাদি। তিনি প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘তরুপল্লব’-এর সাধারণ সম্পাদক।


আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনিতে অবদানের জন্য পুরস্কার :
ইকতিয়ার চৌধুরীর: ইকতিয়ার চৌধুরীর জন্ম ডিসেম্বর ১৯৫৪ সিরাজগঞ্জ। পিতা নতুন কবিতার অন্যতম কবি মরহুম চৌধুরী ওসমান। মাতা এইচ সুলতানা গৃহিণী। সত্তরের শেষভাগ হতে গদ্য লিখছেন। প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘লণ্ঠন’ কবি আহসান হাবীব সম্পাদিত দৈনিক বাংলার সাহিত্য পাতায়। গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনিসহ প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৮। গ্রন্থÑ যমুনা সম্প্রদায়, সোনালি জীবনের ভার, সমতটের স্বর এবং যুদ্ধের পর মুক্তিযাদ্ধো। পেশাগত জীবনে সর্বশেষ স্পেনে রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।


ফোকলোরের অবদানের জন্য পুরস্কার
আব্দুল খালেক: প্রফেসর আব্দুল খালেক কৃতী শিক্ষক, সফল গবেষক, দক্ষ প্রশাসক এবং একজন অতি নিপুণ সংগঠক। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত ও চীনা ভাষায় পারদর্শী। সিরাজগঞ্জ (বৃহত্তর পাবনা) জেলার সাহজাদপুর থানার অন্তর্গত চরনবীপুর গ্রামে ১৯৩৭ সালের ১৯ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ ১৯৬০ সালে রাজশাহী কলেজ অনার্স এবং ১৯৬২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৬৬ সালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চীনা ভাষায় ডিপ্লোমা এবং ১৯৭৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬২ সালে এমএ পাশ করবার পর তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং ১৯৮৯ সালে তিনি প্রফেসর পদে উন্নীত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের দায়িত্ব তিনি সাফল্যের সাথে পালন করেন।


মুহম্মদ আবদুল জলিল : অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আবদুল জলিল একজন ফোকলোর গবেষক ও লেখক। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো। তিনি বাংলা একাডেমিতে কিছুকাল কাজ করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর একই প্রতিষ্ঠানে ফোকলোর, বাংলা, নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের সভাপতির দাযত্বিও পালন করেন। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি অঙ্গনে ড. মুহম্মদ আবদুল জলিলের পরিচয় লোকবিজ্ঞানী হিসেবে। তিনি স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বাংলার ফোকলোর চর্চার বহুমাত্রিকতার পরিচয় নির্ণয়ে সদা সচেষ্ট বাংলাদেশে গধঃবৎরধষ ঋড়ষশষড়ৎব এর আলোচনায় তিনি অগ্রপথিক। বাংলাদেশের আদিবাসী সংস্কৃতির নানা দিকের বিচিত্র ও বহুধাকৌনিক আলোচনা পর্যালোচনায় তাঁর স্থান শীর্ষে। ‘বাংলাদেশের ফোকলোর চর্চার ইতিহাস’ গ্রন্থে ড. মুহম্মদ আবদুল জলিলের সারাজীবনের অভিজ্ঞতার ফসল উঠে এসেছে এবং লেখকের অনবদ্য দক্ষতায় পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। গ্রন্থটির পরতে পরতে তিনি গতানুগতিকতা পরিহার করে সর্বদাই বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে সচেষ্ট। হয়েছেন। বাংলার দুইশো বছরের ফোকলোর চর্চার সার্বিক ইতিহাসের অপূর্ব সমীকরণও পরিলক্ষিত হয় এ মূল্যবান গ্রন্থ।