আহার বা খাদ্য জীবনের একটা সহজাত প্রবৃত্তি। জাতি,ধর্ম,ভাষা,ধনী, গরীব নির্বিশেষে আহার গ্রহন করে থাকে। পৃথিবীর সমস্ত জীব জগৎ তথা উদ্ভিদ জগৎ সবারই আহার চাই। তৃণভোজীরা যেমন ঘাসপাতা আহার করে পরোক্ষে মাংসাশীরাও প্রাণী শিকার করে আহার করে।আবার উদ্ভিদও মাটি থেকে রস ও সূর্যের তাপ শোষণ করে আহার করেই।
  সেক্ষেত্রে মানুষ একটু ভিন্ন ভাবে একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে আহার প্রক্রিয়া সম্পাদন করে।শিশুরা যেমন তার মায়ের কাছে দুধ চাই। কিশোরেরাও মায়ের কাছে আহারের দাবি করে। আবার বিবাহতরা স্ত্রী 'র কাছে আহারের দাবি করে থাকে। এ ছাড়া পারিবারিক গন্ডির বাইরে আরো কিছু অসহায় মানুষ আছে যাদের অভিভাবক কেউ নেই যার কাছে সে আহার চাইবে। তারাকে নিজেকেই খুঁজে খুঁজে আহার জোগাড় করতে হয়। অনেকসময় তো পায় আবার অনেক সময় নিরন্ন যাপন করতে হয়।
   আজ আসরে এমনই একটি কবিতা "কী খাবো?" শিরোনামে শ্রদ্ধেয় কবি খলিলুর রহমান মহাশয় উপহার দিয়েছেন। কবি অনুভব করেন শিশুর জন্মের প্রথম কান্নায় যেন সে কথায় ভেসে আসে "কী খাবো?"।
       "কী খাবো?" কথাটা ভাবতেই মায়ের কাছে আবদার করাটা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখটা ধুয়ে মায়ের কাছে এই প্রশ্নটাই করতাম 'মা আজ "কী খাবো?"
কিন্তু আজ যখন সমাজ সংসারের আশেপাসে লক্ষ্য করি তখনও অসংখ্য বুভুক্ষু মানুষকে দেখতে পায় যারা বলে আজ "কী খাবো?" যাদের নিশ্চিত উপার্জনের পথ নেই যারাকে 'দিন আনি দিন খায়' ভাবে চলতে হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোন দুর্যোগে উপার্জন না হলে তারা এই কথাটাই বলে আজ কী খাবো ।
    শ্রদ্ধেয় কবি খলিলুর রহমান মহাশয় এমনি অসহায় মানুষদের প্রতি সহমর্মীতা জ্ঞাপন করে এই কথাটাই বলতে চেয়েছেন।
  কান্নায় যে জীবনের খাদ্য চাওয়ার ভাষা তা কবি অনুভব করেন শিশুর জন্মের প্রথম কান্নার স্বর থেকেই। তাই কবি লেখেন.....


"প্রথম কান্নাটাই এ প্রশ্নের আদিভাষা।"


কবি লক্ষ্য করেন....


"প্রতিদিন পৃথিবীর প্রতিকোণে "


প্রতিটি ভাষার মানুষ প্রতিক্ষণে কী খাবো এ প্রশ্নই আসে মনে। কবি হৃদয়ে বৈষম্য কি ভাবে ধরা পড়েছে দেখুন....


"অসংখ্য উপকরন কারো খাদ্য তালিকায়
একটিও অনিশ্চিত কারো জীবন চালিকায়!
কারো প্রশ্নে প্রাসাদের দেয়ালে বিলাসী ঢেকুর
কারো প্রশ্নে গগন বিদারী কান্নার সুর।"


এক শ্রেণীর মানুষের আহারের মেনুতে লম্বা লিষ্ট আর এক শ্রেণীর মানুষের পান্তাভাত টুকুও নিশ্চিত নয়।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রিসার্চ সেন্টার বসেও বৈজ্ঞানিক কবির শ্রবণে আসে বুভুক্ষু অসহায় মানুষের গগন বিদারী কান্নার সুর। কবি প্রাণ বিচলিত  হয়ে উঠে।কিন্তু কবি অনুভব করেন খাদ্য আর খাদকের প্রক্রিয়াই বৈষম্য চলবেই। আর্ত অসহায়ের সহায়তা করার কোন উপায় যখন খুঁজে পান না তখন কবি প্রকৃতির পরিচালক ঈশ্বরের প্রতি আবেদন করেন যেন একটা ভূমিকম্প কিম্বা প্রলয় হোক। যে প্রলয়ে পৃথিবীর সমস্ত বৈষম্যের অবসানে সবাই শরণার্থীর শিবিরে দাঁড়াবে।  খাদ্য নিজেই এগিয়ে আসবে খাদকের কাছে আর.....


"শুধাইবে কে কত খাবে আমাকে বলে"


সেদিন অসহায় বুভুক্ষু মানুষেরা ধনী সম্প্রদায়ের উদর পুর্তীর সহায়ক হবে। তাই ঈশ্বরের প্রতি কবির প্রার্থনা...


"ওহে ভূমিকম্প এবং প্রলয়ের চির নিয়ন্ত্রক
বঞ্চিত বুভুক্ষুরা শুধু একবার আদেশ দাতা হোক।"


যদিও কবিতাটিতে জীবন বোধ ও ধনী সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্রোহ প্রকাশ পেয়েছে। তবে আমার হৃদয়ে মানবিক বোধ জাগতে সক্ষম হয়েছে।
সার্থক নামকরণ সহ মানব বোধের অসাধারণ একটি কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য শ্রদ্ধেয় কবি খলিলুর রহমান মহাশয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ সহ অশেষ শুভকামনা জানালাম। আমার সামান্য অনুভবে যতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি সবার সামনে তুলে ধরলাম। কবির অনুভবে আরো বেশী কিছু থাকতেই পারে। কবির মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম।