সকলেই বলেন 'পেটের জ্বালা বড় জ্বালা'। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী তথা উদ্ভিদ সবার অন্ন চাই। এই অন্নের তাগাদায় সারা পৃথিবী হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছে। মা, বাবা,স্ত্রী,সন্তান ত্যাগ করে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে। মানুষ পেটের দায়ে নীচ থেকে নীচ কর্ম করতেও দ্বিধা বোধ করছে না। বলে না 'জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ' পেটের তাগাদায় সব কিছুই করতে হয়। যাদের কাজ করার সামর্থ নেই তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে দিনপাত করে। তাছাড়াও চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই,রাহাজানি এমনকি নারীরা দেহ ব্যবসা করেও অর্থ রোজগার করছে। সামাজিক উত্থানের সঙ্গে যেমন চাহিদা বেড়েছে তেমনি রোজগারের উপায় বৃদ্ধিতে রোজগারের পন্থাও পরিবর্তন করতে হচ্ছে।বর্তমান অত্যাধুনিক জামানায় এখন রাস্তা ঘাটে চুরি ছিনতাই কমলেও ব্যাঙ্কের পাসওয়ার্ড জেনে একাউন্টের টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা প্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তেমনই আবার কেউ কেউ খুন,হত্যা,(সুপারি ) চরস, গাঁজা বা জাল নোটের কারবার করেও মোটা টাকা রোজগার করে থাকে।তেমনিই ভিক্ষা চাওয়ার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে।ভিক্ষা চাইতে গেলে এখন 'নাই নাই রব'। যদিও মেলে তা যৎসামান্য।সেক্ষেত্রে তাদেরকেও নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। ব্রিহণ্ণলারা (হিজড়া) জোরপূর্বক বা অশ্লীলতা প্রদর্শন করে মোটা টাকা রোজগার করে তেমনই কিছু পুরুষ ব্রিহন্নলা সেজে আয় করতে দ্বিধা বোধ করে না। তাছাড়াও আরো নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে টাকা রোজগারের পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে।
       আজ আসরে এমনি  ভিক্ষা চাওয়ার লেটেস্ট পদ্ধতি সহ একখানা সনেট কবিতা উপহার দিয়েছেন আসরের প্রিয় কবি জাহিদ হোসেন রনজু মহাশয় তাঁর "উপহাস" কবিতাটির মাধ্যমে।
       আমি এখানে সনেট কবিতা সম্পর্কে আলোচনায় যাচ্ছি না। কারণ কয়েকদিন আগে শ্রদ্ধেয় কবি ও আলোচক  সহিদুল হক মহাশয় শ্রদ্ধেয় কবি অজিত কুমার কর মহাশয়ের "আমাকে বাঁচাও" কবিতার আলোচনা করতে গিয়ে সনেট সম্পর্কে বিস্তরিত আলোচনা করেছেন।
   আমরা এখানে কবি জাহিদ হোসেন রনজু মহাশয়ের কবিতাটি নিয়ে আসবো। কবি পথ চলতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন এক রমনী ঘোমটা মাথায় সাদা কাপড়ে ঢাকা একটা লাশকে সামনে রেখে অনুচ্চ স্বরে কেঁদে চলেছেন এই বলে যে তার স্বামীর লাশটাকে দাহ সৎকার করার ক্ষমতা নেই।তাই সাহায্যের আবেদন করেন। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কম বেশী মমত্ববোধ এখনও অবশিষ্ট আছে। তাই এহেন পরিস্থিতিতে কোন কঠিন হৃদয় আছে যে দু চার টাকা অর্থ সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না? তার অর্থ সঞ্চয় হতে থাকে। কবির ভাষায়...


"শেষকৃত্য সমাধানে টাকা চাই তার
দেখে সেটা কষ্ট হয় হৃদয়ে সবার।"


আর সেই টাকা দেখে ঘোমটার আড়ালে থাকা রমনীর চোখগুলো উজ্জ্বল হতে থাকে। কারণ এখানে কান্না তো সুনিপুণ অভিনয়।
      যে সারাদিন লাশ হয়ে পড়ে ছিল সেই লাশকে কবি সাঁজের আঁধারে দুই পায়ে হাঁটতে দেখেন। সে আবার হয়তো পরের দিন অন্য কোনখানে এই ভাবেই লাশ হবে আর তার স্ত্রী কুম্ভীরাশ্রু বিষর্জন করবে।
         কবি অবাক হয়ে বলেন......


"জীবন ধারনে সাজা মানুষের লাশ
বিপন্ন মানবতার বড় উপহাস।"


সভ্যতার বিকশিত সময় ও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগেও মানুষ্য সমাজে সহিংসতা, রক্তপাত, হানাহানি, বিদ্বেষ, প্রতি হিংসা পরায়ণতা জীবন ধারনের জন্য হীন থেকে হীনকর্ম করার উন্মাদনার যে চিত্র প্রায় নিত্য ফুটে উঠছে এতে মানবিকতা আজ সত্যি বড়ই বিপন্ন।
     কবিতাটিতে মড়া লাশের রূপকে অর্থ রোজগারের বিভিন্ন হীন কর্মকে বোঝানো হয়েছে। তাছাড়া কবির অনুভবে আরো অনেক কিছুই থাকতে পারে। আমার সামান্য জ্ঞানে যতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি তা সবার সামনে তুলে ধরতে প্রচেষ্টা করলাম। যদি কারো ভালো লাগে আমার প্রচেষ্টা সার্থক বলে মনে করবো।
    অসাধারণ একটি মানবিকতা বোধের কবিতা আসরে উপহার দেওয়ার জন্য শ্রদ্ধেয় কবি জাহিদ হোসেন রনজু মহাশয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ ও অশেষ শুভকামনা জানালাম।