চির যৌবনা-২১
✍️শাহ্ নেওয়াজ


আমার প্রেমিকা-এই"অমর একুশে গ্রন্থমেলা"
এই গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
ঐ যে উঁচুতে,স্মৃতিফলক?
আমার প্রেমিকার গর্দান।


প্রতিটি বইয়ের প্রচ্ছদ, ডিজাইন-আর্ট;
প্রেয়সীর অপরূপ সব সাজ-বসন,অংশুপট।


এ উদ্যানের-
প্রতিটি  বইয়ের লাইন,পঙক্তি- স্তবক;
আমার রূপসীর দেহ অবয়ব।
লাল-নীল বাহারি খামে মোড়ানো বই অগণন,
আমার রামার শৈশব, কৈশোর-যৌবন।


এখানে আমার প্রেমিকা-
নান্দনিক প্রকৃতি,বিস্তীর্ণ জলধি,পাহাড়,গিরি-খাদ ;
সুবিশাল আসমান-জমিন,গোটা আকাশগঙ্গা-পূর্ণিমাচাঁদ।
এখানে আমার হৃদয় কাননের রাণী-
খোলা চুলের চপলা,
নীল শাড়ি লাল চুড়ি-
পায়ে নিক্বণ পরে ছুটে চলা দুরন্ত ষোড়শী;
নগ্ন পায়ে কোমর দোলানো চঞ্চলা কিশোরী।
কখনো বা বক্ষের দু'ধারে বেণি ফেলানো মাঝ খানে সিধে আঁকা মনোহারিণী,
আবার কখনও চৌরাস্তায় মলিন বস্ত্রের ভুখারী;
চরম স্বার্থপর,একরোখা দুশ্চরিত্রতা-বেশ্যা।


এই  ফাল্গুনের  স্নিগ্ধ প্রভাতে,
টাক ফাটা,ঘাম ঝরা দুপুরে ;
মলিন আলোর এ বিকেলে,
এ বইমেলা চত্বরে-
আমার জীবনবল্লভা সুরভি ছড়াচ্ছে।

এখানে আমার প্রিয়তমা-
ব্যস্ত স্রষ্টা ও সৃষ্টির বন্দনায় ;
আমার মনোহারিণী  মিশে আছে,
সৃষ্টিশীল লেখকের প্রতিটি-
কাব্য বা উপন্যাসের সৌন্দর্য উপমায়।
  
এই যে মাতাল করা স্বেদের গন্ধ!
আমি বুঁদ হয়ে থাকি প্রায়;
ঘ্রাণেন্দ্রিয়  লুটছে দেখ!
নতুন বইয়ের প্রতিটি পাতায়।


আমার প্রেমিকা আজ গৃহবন্দী!
মুক্তি চাই-
শত্রুর সাথেও রাজি করতে সন্ধি;
শুধু মন প্রেয়সীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।


কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অমর একুশ চত্বর-
প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়ন চিড়িয়াখানার সেল;
গোটা-গোটা হরফে লেখা প্রতিটি প্রকাশনীর ডিসপ্লে,
আলমারি-শেলফে সাজানো প্রেমিকার অচেতন দেহ।


এভাবেই বন্দি থাকে অধিকাংশ প্রেমিকা।
প্রেমিকাদের মুক্তি দিন;
উন্মুক্ত করে দিন সব বদ্ধ অঙ্গিকা।


চিত্তাকর্ষীর নিষ্প্রভ দেহ,বোবা-কান্না,
বৃথা হতে পারে না মোর আশনাই;
লৌলমর্ম বড়ই উতলা!
হৃদয়বল্লভার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।


এই  উৎসুক জনতার মুখে,
লেপ্টে লাগানো চেতনার টেপ;
রাণীর আত্ম চিৎকারে-
এ জমায়েতের নেই কোন ভ্রূক্ষেপ।


লৌহ শিকল দিয়ে বাঁধা হাত-পা,মুষ্টি করা চুল,
আমি লৌহমানব,লৌহকপাট করে অঙ্গার;
পাগলা কুত্তা,খ্যাপা ঘোড়া পেরিয়ে সব বাঁধা,
নর্মসখীর সাথে বাঁধতে চাই সুখের সংসার।


এই উদ্যানের, ভরা মজলিসে-
গগনবিদারী নাদে গলনালি ছিঁড়ে যাক;
ডান হস্তে গোটা অমর একুশে গ্রন্থ মেলা,
হাঁটু গেড়ে বসে,নয়নে-নয়ন;
অনামিকা আঙ্গুলে এঁকে দিতে চাই,
ভালবাসার এক মহাকাব্য।


এই যে উৎসুক গণ জমায়েত-
মানবতার এ আবেদন কর্ণকুহর ভেদ করুক,
নিউরনে জাগাক অনুভূতি;
দয়াকরে,সন্তর্পণে বেরিয়ে যান উদ্যান ছেড়ে,
প্রেয়সীর সাথে একান্তে মধুর সময় কাটাতে চাই।


ঘুষ চাই?
উদ্যানে বন্দী প্রেমিকা!
আমার সর্বস্ব লুটে নিন ;
আমার প্রেমিকা সম বই নিয়ে দূর হয়ে যান উদ্যান ছেড়ে।
আমার অনেক কাজ-
আমার নির্বাক-নিস্তেজ প্রণয়ীকে উদ্ধার করতে হবে।


আমার প্রেমিকার হাতে জ্ঞানের বর্তিকা,
দাঁড়িয়ে হয়ে মহাকালের সাক্ষী;
দাঁড়িয়ে আছে চিরযৌবনা-একুশ,
প্রেমিকা ছুটে চলে ৫২ ভেদিয়া ৭১ ছেদিয়া-
ভাবী কালের সাক্ষী হতে নিরঙ্কুশ।