আমি তখন অনেক ছোট, জীবন যে কি তা বুঝতাম না
বাবার হাত ধরে যখন বের হতাম পথে
কত ওঅবান্তর প্রশ্ন করে ক্লান্ত করে তুলতাম
বাবা মধুমাখা হাসির আড়ালে ক্লান্তি লুকোতেন
মাঝে মাঝে বায়না ধরতাম, ওটা কিনে দাও, দিতে হবেই।


তখন দেখতাম,
বাবার ঠোঁটে মলিন হাসি
তাঁর চোখের পাতা ভিজে উঠতো কষ্টে।


চোখের পানি আড়াল করতে উপর দিকে তাকিয়ে বলতেন,  
“দেখো, বাবা কত সুন্দর উড়োজাহাজ, আমরাও চড়বো একদিন”।

এভাবেই কত বায়না পূরণ না করার কষ্ট,
ভেসে উঠতো বাবার চোখে,
মা বলতেন, ‘ও এখনো অবুঝ’,
“তাই, এমন করে তুমি মন খারাপ করো না”।


খেলনা দিয়ে খেলার দিন শেষ হয়েছে কবেই,
"ক্রীতদাসের হাসি" এর গল্পের মতোই পাঠশালায় পড়ার ভাগ্য
সময়ের সাথে লুকোচুরি করেই কেটে গেলো শৈশবের দিন
সত্যের বিধান অনুযায়ী পালা ক্রমে ভার আমার উপরেই
জীবনের বাস্তবতার নিষ্ঠুরতার সাথে পেরে উঠছিলেন না বাবা।


স্বপ্নের প্রাসাদ ভেঙে আমিও যোগ দিলাম সংসারে
বাস্তবতার প্রতিটি রূপ আমাকে নির্বাক করে দিচ্ছিলো,
মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে বের হলাম পৃথিবীর পথে।

বাবা আমার হাত ধরে বলেছিলেন, “সাবধানে থেকো”,  
জীবন পথে বারো রঙের মানুষের দেখা পাবে।

এখন আমি চেয়ে দেখি,
বর্ণিল স্বপ্ন চোখে রংহীন মানুষের ভীড়,
আবেগ অনুভূতিহীন যান্ত্রিক মানব,
আজ বাবা বেঁচে নেই,
থাকলে দেখতেন, তার ছেলে আজ কত বড় হয়েছে  
পৃথিবীর সব রং গায়ে মেখে হয়েছে বর্ণিল
তবে এখনো বাবার মতো উদার হতে পারিনি আমি।


এখনো ইচ্ছে করে বাবার হাত ধরে নানা বায়নায় বিরক্ত করতে
মা কে বলি মা বাবাকে বোলো না আমাকে কিনে দিতে
আমাকে কিনে দিতেই হবে ...
_______________
২৩/০৮/১৬......এথেন্স,গ্রীস
© Copyright সংরক্ষিত ®