যোগ দিবে কে?
এসো সবাই আলোর মিছিলে
সাম্য-প্রীতির ধ্বজা হাতে,
বুকেতে বুক মিলে।


২২ জুন ২০১৮ শুক্রবার ছিল স্মৃতির পাতায় লিখে রাখার মত একটি স্মরণীয় দিন। ঢাকার মিরপুরস্থ গ্রান্ড প্রিন্স হোটেলের অভিজাত সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলা কবিতা আসরের 'মাসিক আড্ডা ও ঈদ পুনর্মিলনী' অনুষ্ঠানটি। প্রায় অর্ধশত কবি, কবি পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মিলনমেলাটি ছিল যেন এক আলোর মিছিল! এই মিছিল দিন দিন আরো বিস্তৃত হবে - তেমনটিই প্রত্যাশা।


কবি রুনা লায়লার সভাপতিত্বে ও কবি কবীর হুমায়ূনের সঞ্চালনায় জমাটি ওই আড্ডার মধ্যমনি ছিলেন আসরের শক্তিমান প্রবাসী কবি ড. খলিলুর রহমান। তাঁর আন্তরিক ইচ্ছা ও আর্থিক সহায়তায়ই এমন ব্যয়বহুল একটি অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর জন্য রইল আন্তরিক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা। ইতোমধ্যেই আসরের বিশিষ্ট কবিবর্গ বিভিন্ন পোস্টে অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তাই আমি আর চর্বিত-চর্বণে যাচ্ছি না।


তবে ওই আড্ডার বিশেষত্ব ছিল; আসর কবি ড. খলিলুর রহমানের প্রায় ডজনখানেক সতীর্থ সহপাঠী বন্ধু ও কবিতামনষ্ক ব্যক্তিত্ব - সচিব, প্রকৌশলী, ব্যাঙ্কার, শিক্ষক প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ও বিশেষ অতিথি ছিলেন - গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ড. সুলতান আহমেদ। একজন প্রকৌশলী হয়েও কাব্য-কবিতা এবং বিশ্ব-সাহিত্যের নানান অঙ্গনে তাঁর অগাধ জ্ঞানের পরিধি দেখে উপস্থিত কবিকুল বিস্মিত ও অভিভূত! আমরা বাংলা কবিতার নানান তথ্য ও ফিচার তুলে ধরলে আমন্ত্রিত কাব্যমনষ্ক অতিথিবৃন্দ বাংলা কবিতার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেন।


স্মর্তব্য, কবি-সাহিত্যিকদের আঁতুরঘর হিসাবে খ্যাত পুরান ঢাকার শ্রীশদাস লেনস্থ 'বিউটি বোর্ডিং'এ সেই পঞ্চাশের দশকে শুরু হয়েছিল কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডা। সেই পথটি বেয়েই মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে (পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় সাহিত্য-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে থাকা) আমাদের বাংলাদেশ আজ হাজারো কবি-সাহিত্যিকের সার্থক সৃষ্টি নিয়ে একটা সুউচ্চ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে।


বছর চল্লিশেক আগে যখন শ্রীশদাস লেনে থাকতাম - আসা-যাওয়ার পথে পুরনো জমিদার বাড়ির সুবিশাল ফটকের পূর্ব পাশে একটুকরা সবুজ বেষ্টিত পুরনো দুতলা বাড়িটির দিকে সম্ভ্রমে তাকাতাম। এই যুগের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অনেকেই নিয়মিত আড্ডায় জড়ো হতেন ওই বাড়িতে। সেদিন ভাবিনি আমরাও একদিন এমনি আড্ডায় মেতে উঠবো নিয়মিত! এ ও যেন এক অদেখা স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন!


প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে এসে 'রসের ফোঁটা' নামের এক ছোট্ট ক্যাফেতে শুরু হওয়া নিভৃত আড্ডাটি এখনো পর্যন্ত আমার ডেরাতেই মিটিমিটি জ্বলছিল। আসর কবি খলিলুর রহমানের ইচ্ছা ও অর্থানুকূল্যে সেই আড্ডাটিই এবার বিলাসবহুল হোটেল পর্যন্ত উঠে এসেছে। শ্রদ্ধা জানাই প্রবাসী কবি ড. খলিলুর রহমানের বদান্যতাকে। ধন্যবাদ অংশগ্রহণকারী বন্ধুদের, আর ধন্যবাদ সুন্দর এই আয়োজনের রূপকার এবং কুশিলবদের।


আমার বিশ্বাস, সময়ের ব্যবধানে এই আড্ডাও একদিন এদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করবে। পল্লবের এই আলোর মিছিল দিন দিন বেড়ে এগিয়ে যাবে - যুগ থেকে যুগান্তরে। সেই দিন বেশি দূরে নয়।


উপস্থিত কবিমণ্ডলী, অতিথিবর্গ ও তাঁদের পরিবারবর্গের প্রতি বাংলা কবিতার পক্ষ থেকে রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা। সর্বোপরি যার ঐকান্তিক ত্যাগ ও শ্রম-সাধনায় আমরা পেয়েছি বাংলা কবিতার মত সুন্দর একটি প্লাটফর্ম সেই মহান যোগী - এডমিন পল্লব আশফাককে জানাই প্রাণের অভিনন্দন।


পরিশেষে সেদিনকার আড্ডায় আমার রচিত ও পঠিত একটি কবিতা নিবেদন করছি -


আসরের জয়গান


পল্লবের এই কাব্য কানন আমরা কজন মিলছি আজ
হরেক ধাঁচের মানুষ হলেও কবির নামে নেইকো লাজ।
আয়েস করে আমরা পড়ি শখের লেখা কবিতা
আমরাই আবার লিখছি কষে যে যা-ই বলুক যাচ্ছে তা। 


গুরু যদিও রবি নজরুল করছি তাঁদের সরণ যে
তবুও মোদের লেখায় আছে স্বকীয়তার ধরন যে
কবিতাতে যতই থাকুক মাত্রা ছন্দের কৃচ্ছতা 
আস্থা সবার উৎসাহতেই বাড়বে মানের উচ্চতা। 


নানান পথের মানুষ আছি শত মতের ধারক
সবার উপর আমরাই আবার ঐক্য-সাম্যের স্মারক। 
প্রেম ও প্রীতির বন্ধনেতে বুকে নিয়ে এই পাতা
নিশি-দুপুর বসে লিখি দুঃখ-সুখের কবিতা।


যত্নে গড়া আশিস বিধির পল্লবের কাব্য কানন 
হাজার ফুলের রঙ বাহারে আমোদিত এই ভুবন।
নদীর ধারা সাগর পানে কল্লোলিনী যায় ধেয়ে
যাবেই আসর সুমুখেতে হালের নতুন বাঁক নিয়ে। 


যুগের চাকা যতই ঘুরোক কাব্য-কলা থাক বেঁচে 
আসর কবির মিলন মেলা চলবে গেয়ে ও নেচে। 
হিংসা বিভেদ ভুলে হলাম কবিতাতে অন্তঃপ্রাণ
সবার উপর গাই এসো আজ এই আসরের জয়গান।