প্রথম যখন তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো,
মালিকানা বিহীন পড়েছিলে তুমি বড় এলোমেলো।
আমার চোখে খবরের কাগজের তৈরী ঠোঙাও দামী,
তাই কিছুতেই তোমাকে এড়িয়ে যেতে পারিনি আমি।
ভাঙা জিনিস, প্লাস্টিক, বাতিল বেলনের মাঝ থেকে,
ধূলো ঝেড়ে, সাফ করে তাই খুশীতে তুলে নিই বুকে।
না ছিল মলাট, না ছিল নাম, না লেখকের পরিচয়,
অবহেলায় তোমাকে কেউ হারিয়েছিল মনে হয়।
কাহিনীর শুরু থেকে শেষ প্রতিটি পাতা ছিল অক্ষয়,
পড়তে শুরু করেই আমি, অবাক হয়ে শুধু ভাবি __
এমন এক বই ইচ্ছে করে হারাবার কোনো মানে হয়!
বানরের মুক্তো হেন, হয়তো উপহার পেয়েছিল কেউ, একটুও মর্ম বোঝেনি, পড়তে ভালোবাসেনা মোটেও।
তবে এমন ঘটনার, আমার জীবনে ছিলো দরকার,
কেউ ফেলে দিয়েছিলো বলেই তো তুমি কাছে এলে!
কি করে পেতাম বলো তোমায় আমি, তা না হলে?
এমনকি মলাটটাও তখন ছিল না ভাগ্যিস !
লেখকটিকে করেছিলাম বয়কট অভিমান ভরে, ইস!
"আনন্দমেলা"য় কাকাবাবুর সিরিজ পড়ে ভক্ত আমি,
প্রাপ্তমনস্ক কোনো উপন্যাস পড়তে গিয়ে খাই ভিরমি!
স্বীকার করতেই হয় ওগুলোও লেখেন ভালো উনি,
কিছুতেই বিয়ের আগে একদম আর এসব পড়া নয়।
প্রতিজ্ঞা করে ফেলি নির্দ্বিধায়, মনে মনে একাই !
বিয়ের পরে তখনও লাইব্রেরির কার্ড করা হয়নি।
বিয়ের আগের কার্ডে মাঝে মাঝে বই আনি।
সময়ে না ছুঁতেই যায় ফুরিয়ে, তবু বইটা পড়ে ফেলি,
পড়ার পর শুধু মনে মনে ভাবি, কার লেখা? কি বই?
পেটে খিদে, মুখে লাজ সহ্য করা যায় আর কতদিন !
নতুন লাইব্রেরিতে কার্ড একটা করেই ফেলি একদিন।
এবার গোগ্রাসে শুরু আবার, আমার অক্ষর গেলা,
প্রাপ্তমনস্ক এখন নিশ্চয়ই, আর নেই কিছু ফেলা,
মায়ের বা অন্য কারো তো আর কিছুই বলারও নেই !
সুনীল গাঙ্গুলীর "একা এবং কয়েকজন"পড়ে অবাক!
এভাবেই একসময় পড়তে শুরু করি, ঐ "সেই সময়"।
আরে! এটা তো সেই আমার কুড়িয়ে পাওয়া!
কারোর না কারোর কাছ থেকে, হারিয়ে যাওয়া!
সেই নাম না জানা, মলাট ছেঁড়া বইটাই !
এবার নতুন করে জেনে বুঝে দ্বিতীয় বার পড়ে ফেলি,
অবাক হই, লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কলমে,
এমন ইতিহাস সমৃদ্ধ অসাধারণ লেখাও বেরোয় !