তারিখ মনে নেই, দিনটা সেদিন ছিল মাঘী পূর্ণিমা।
রাতের অতিথি হয়েছিলাম আমি আর আমার দিম্মা !
ছোটোদের অনেকের মুখেই অনেক গল্প শুনেছি,
গেরুয়া বসনধারী সন্নাসীদের প্রতি বছর এক সময়ে,
নিয়ম করে ঘুরে ঘুরে টাকা সংগ্ৰহ করতে দেখেছি।
গ্ৰাম গঞ্জের লোক নাকি হাজির হয় যজ্ঞ দেখতে,
বিশাল আয়োজন, বসে অনেকেই পাত পেড়ে খেতে।
খাওয়ার লোভ নয়, মনে ছিল লোভ আরতি দেখার,
অনুষ্ঠানে নাকি মহারাজেরা মিলে নাচায় তলোয়ার !
সুতরাং দিম্মাকে সাধাসাধি, নিয়ে যেতে হবে আমায়,
আগে তো করতে হবে মা-বাবার পারমিশন আদায় !
ঐ প্রথম মা-বাবাকে ছেড়ে কোথাও যাওয়া আমার,
টাক ডুমা ডুম ডুম ধিতাং ধিতাং নাচে মন,যেন ময়ূর।
দিদার একপাশে আমি, আমার পাশে বুলি সহচরী,
যজ্ঞ দেখি বসে, হাতা হাতা ঘী ঢালা, আহা মরি মরি !
সুগন্ধে ভুর ভুর করছে চারিধার, উপচে পড়া ভিড় !
ঘন্টা চারেক দেখতে দেখতে কি করে হয়ে গেল পার,
অং বং চং মন্ত্র না বুঝেও, মনটা বেশ ভরল আমার ।
তারপর উঠে গিয়ে বসলাম একটা স্টেজের সামনে,
অনুষ্ঠানের সমস্ত কর্মসূচি দেখে চলেছি এক মনে ।
সব শেষে শুরু হলো বড় বড় প্রদীপ নিয়ে আরতি,
তলোয়ারের ঝনঝনানি, রূপো যেন চকচকে অতি !
কখন যে হলো সব কিছুর সমাপ্তি,বুঝিনি তো কিছুই,
ছিলাম যেন এক ঘোরের মাঝে, সে কি শুধু আমিই !
আশে পাশে কেউ নেই, দিম্মা, বুলি,দু চার জন ছাড়া,
মহারাজের কথায় মন্দিরের ভেতরে এলাম আমরা।
মন্দিরের পেছনে বারান্দায় ওনারা আমাদের বসায়,
খিচুড়ি ভোগ খেতে দেয় সেধে, সবুজ কলা পাতায়।
মনে ভাবি এই জন্যেই সাধুরা করেন সাহায্য আদায় !
মন্দিরের বারান্দায় ঢুকিয়ে দিয়ে গেটে পড়ল তালা,
মেঝেতে পড়লাম শুয়ে, এটা যেন বিছানা একঢালা ।
এক ঘুমে রাত কাবার,সকালের কথা আর মনে নেই,
ফিরেছিলাম বাড়িতে বাসে করে ঠিকঠাক সকলেই ।
রাতের অতিথি তো সেদিন মাঘী পূর্ণিমায় আমরাই !