কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতায় অজয় নদী যেন এক জীবন্ত সত্তা। দ্বিতীয় পর্বে তিনি নদীটিকে আরও গভীর অনুভূতির সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতার প্রতিটি ছত্রে অজয়ের রূপ, রস, গন্ধ যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে।
কবিতার শুরুতেই অজয় নদের তীরের এক মনোরম চিত্রকল্প আঁকা হয়েছে। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন বটবৃক্ষ, যেখানে নানা পাখির আনাগোনা, পাখির কলকাকলি আর শীতল বাতাস এক শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশের সৃষ্টি করে। কোকিলের কুহু ডাক যেন সেই শান্ততাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এরপর কবি সোনালী কিরণে ঝলমল অজয় নদীর চরের ছবি এঁকেছেন। সূর্যের আলো নদীর জলে পড়ে চিকচিক করছে, আর সেই আলোয় বাউলেরা একতারা-দোতারা হাতে সুর তোলে। বাউলদের গানের সুরে যেন অজয়ের বাতাসও মুখরিত হয়ে ওঠে।
গ্রামীণ জীবনের এক সুন্দর প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে কবিতায়। সারি সারি গরুর গাড়ি দূর গাঁয়ের উদ্দেশ্যে নদী পার হচ্ছে। যাত্রীরা দলে দলে নদী পারাপার করছে, আর তাদের চারিপাশে কাশফুলের শুভ্রতা যেন এক স্বপ্নিল পরিবেশ তৈরি করেছে।
নদীর পাড়ে মাছরাঙার মাছ ধরা এবং বলাকাদের সারি বেঁধে উড়ে যাওয়া - এই দৃশ্যগুলি অজয় নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও মনোরম করে তোলে। নদীর ঘাট যেখানে এসে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে শুরু হয়েছে লাল মাটির পথ, যার দুপাশে সারি সারি তাল ও সুপারি গাছ দাঁড়িয়ে আছে।
দিনের শেষে সূর্য যখন অস্ত যায়, তখন অজয় নদীর ঘাটে নেমে আসে এক স্নিগ্ধ আঁধার। কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী, যিনি ছন্দ কাব্যের কাণ্ডারী, তিনি সেই মুহূর্তটিকে কবিতায় বন্দী করেন।
সব মিলিয়ে, কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর এই কবিতাটি অজয় নদীর প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার এক সুন্দর প্রকাশ। তিনি শুধু নদীটির বর্ণনা দেননি, বরং নদীর সাথে জড়িয়ে থাকা প্রকৃতি, মানুষ এবং জীবনের প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরেছেন। কবিতাটি পাঠকদের অজয় নদীর তীরে এক কল্পনাবিলাসী ভ্রমণে নিয়ে যায়, যেখানে প্রকৃতির নীরবতা এবং জীবনের ছন্দ একাকার হয়ে মিশে গেছে।
অজয় তটিনী বয় ....কবিতায় কথা কয়
কবিতা অজয় নদীর ধারা (দ্বিতীয় পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয়ের নদীতটে প্রাচীন বিশাল বটে
বাসা বাঁধে আসি নানা পাখি,
রজনী প্রভাত হয় শীতল সমীর বয়
কোকিল উঠিল কুহু ডাকি।
অজয়ের নদীচরে সোনালী কিরণ ঝরে
রাঙা রবি কিরণ ছড়ায়,
হাতে লয়ে একতারা কেহবা লয় দোতারা
বাউলেরা সুরে গান গায়।
সারি সারি গরুগাড়ি দূর গাঁয়ে দেয় পাড়ি
নদীজলে হয়ে যায় পার,
যাত্রীসব দলে দলে পার হয় নদীজলে
কাশফুলে ভরা চারিধার।
বসিয়া বালির চরে মাছরাঙা মাছ ধরে
বলাকারা উড়ে সারি সারি,
নদীর ঘাটের শেষে রাঙাপথ আসি মেশে
সারি সারি তাল ও সুপারি।
সূর্য বসিল পাটে অজয় নদীর ঘাটে
ধীরে ধীরে নামিল আঁধার,
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী ছন্দ কাব্যের কাণ্ডারী
লিখে কবি কবিতায় তার।