বসন্ত এলো আজি…….. নব বসন্তের গান
গীতি কবিতা-৩ তৃতীয় পর্ব।
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



শীতের বিদায়ের সাথে সাথে বসন্তের আগমনে প্রকৃতির জড়তা কেটে যায়, চারিদেকে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। কোকিলের কন্ঠে কুহু রব ফিরে আসে। বসন্ত শুরু হলেই নাকি সাপের শীত নিদ্রা ভাঙ্গে। বসন্তের হাওয়া লেগে গেলে ঘুমন্ত গাছে কুঁড়ি ফোঁটে ও নব নব পাতা দেখা দেয়। চারদিকে চলে সবুজের সমারোহ। কৃষ্ণচূড়ায় যেন ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। আহা ফোঁটে ফুল ছোটে অলি- তোলে কতোই গুঞ্জন। আর সবার মনে মনে কতো না গানের কলি জেগে ওঠে। বসন্ত মানে রঙ। প্রেমিক প্রেমিকার মনে লাগায় যৌবনের রঙ। ভালোবাসা জাগায় উভয়ের হৃদয়ে। বসন্ত মানে মাঠে মাঠে সুগন্ধি মৃত্তিকা ছেয়ে জেগে ওঠে সবুজ পল্লব ও রং বেরংয়ের ফুল। ভালোবাসা আর চির যৌবনের সঙ্গে তুলনা করা হয় এই বসন্তকালকে। বসন্তে উদযাপিত হয় শ্রী কৃষ্ণের দোলযাত্রা।


বসন্তকালে ‘কুহু কুহু’ স্বরে ডাকে কোকিল। তখন তো নব পরিনীতা বঁধূ’র মন হয় উতলা। মন আনচান করে, করবেইনা কেন, স্বামী বাসর রাতের পরের দিনই চলে গেছে দূর পরবাসে বহু দূরে সৌদি আরব নয়তো মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশে। তখনতো নববধূটি গুনগুন করে গায়- ‘বনের কোকিল আর ডাকিস না তোর কুহু কুহু ডাক শুনিয়া পরান আমার রয় না ঘরে’ নয়তো ‘ও কোকিল ডাইকো না ডাইকো না ঐ কদম্ব ডালে শীত বসন্ত সুখের কালে।’ ফাল্গুন-চৈত্র নিয়েই বসন্তকাল এই ষড় ঋতুর বাংলাদেশে। যৌবনকে বসন্তের সঙ্গে তুলনা করে ‘গরমিল’ ছবির জন্য গীতিকার প্রণব রায় লিখলেনঃ ‘আমার ও ভুবন হতে বসন্ত চলে যায়……. হারানো দিনের লাগি প্রেম তবু রহে জাগি’। আর এই গানে কন্ঠ দিয়ে নায়ক- গায়ক রবীন মজুমদার অমর হয়ে রইলেন। এই রবীন মজুমদার-ই ‘শাপমুক্তি’ ছবিতে সুপ্রভা সরকার ও শৈল দেবীকে নিয়ে বসন্তের ছোঁয়া জাগায়ে গেয়েছিলেন ঃ
‘ফাল্গুনের ঐ অশোক পলাশে তারি হিয়া বুঝি রাঙ্গা হয়ে হাসে/ কোকিলের গানে সুখের বেদনা সহিতে পারেনা বালা/ কিবা যেন চায় কহিতে না চায় চন্দনে বাড়ে জ্বালা……….।’ বসন্ত ও যৌবনকে একই সূত্রে বেঁধে দিয়েছে বহু গান, এমনি কয়েকটি গান হলো – ‘ দু’টি হিয়া বাঁধল আবার ভালবাসার কুঞ্জুরে/ আবার বসন্ত এলোরে’; ‘ প্রজাপতির গায়ে হলুদ ফাগুন গেলে চইতে/ দক্ষিণ হতে মলয় ছুটে এলো খবর কইতে’; ‘আমি চেয়েছিনু দুটি ফুল দাও আমারে / তুমি চেয়েছিলে মোর পানে ক্ষণিক হেসে’; ‘বসন্ত রাগ বাজলে যেনো দেহের বীনাতে ‘; ‘এই তো প্রথম কুহু কাকলী তোলে নতুন ফাগুন তারই আবেশে দোলে’; ‘ফাগুণের এক মুখরিত সাজে তুমি আর আমি প্রিয়া/ একই বন্ধনে বেঁধেছিনু হায় মোদের এ দুটি হিয়া/ মোর রিক্ত ভূবন ঘিরে সেই ফাল্গুন এলো রে ফিরে’; ‘কৃষ্ণচূড়া, আগুন তুমি আগুন ঝরা প্রাণে……. ডাক দিয়েছি তোমায় নব শ্যামল সম্ভারে কৃষ্ণচূড়া তুমি আমার প্রেমের পরিচয়’ ইত্যাদি কতো কি। এই বসন্তেই প্রিয়তম তার প্রেমিককে গানে গানে শুনাতো- ‘আমি গোলাপের মতো ফুটবো জানি পাপিয়া দূরে রয়/ আমি স্বপনের কথা বলিয়া স্বপনে ভাসিয়া যাই/ আমি চাঁপার কুঞ্জে কুহু আমি কেতকী বনের কেকা’ কিংবা ‘আমি দেখেছি নয়ন মেলে পাখির কুজনে সুষমা জাগায়ে/ স্বপন মোহন এলে তব আঁখির নিবিড় নীলে/ মোর নীল নব এ দিনে মলয়ার কাছে মৃদুল আভাসে ।



মায়াময় বসন্ত সবাইকে কেড়ে নেয় নিজের ভালবাসার মোহে। যেন প্রেমিকা তার প্রেমিককে মায়া বন্ধনী দিয়ে আবদ্ধ করে রাখে, তেমনি নব ফাগুন সবাইকে নিজের মায়ামন্ত্রে আচ্ছন্ন করে রাখে।


নব বসন্ত বাঙালির প্রাণে নতুনত্বে প্রাণ সঞ্চার করুক এটাই হোক বসন্ত বরণের অভিপ্রায়। আসুন, আমরা সবাই নব বসন্তের রঙে রাঙিয়ে তুলি নিজেদের। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!


নব বসন্তের গান – ৩
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বসন্ত আসিল আজি, এই বসুধায়,
তরুশাখে পাখিসব সুরে গীত গায়।
ফুটিল কুসুম কলি ধেয়ে আসে অলি,
ফুলেফুলে শোভে তরু পলাশ শাল্মলী।


অজয় নদীর ঘাটে হাটে জমে ভিড়,
জন কোলাহলে ভরে অজয়ের তীর।
অজয়ের নদীপাড়ে আম্রের বাগান
প্রভাতে উঠিয়া শুনি কোকিলের তান।


অজয়ের নদীঘাটে আসে যত মেয়ে,
জল নিয়ে চলে ঘরে রাঙা পথ বেয়ে।
দিবসের শেষে দেখি সূর্য বসে পাটে,
সাঁঝের আঁধার নামে অজয়ের ঘাটে।


বসন্তের ছোঁয়া লাগে সবার হৃদয়ে,
অজয় আপন বেগে শুধু চলে বয়ে।