ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়!
তৃতীয় পর্ব।


ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন (১৮৫৭-১৯৪৭): একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ভারতবর্ষে ২০০ বছরের ইংরেজ শোষনের ইতিহাসঃ (প্রথম পর্ব) পূর্বে প্রকাশিত।
১০০ বছর ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক শোষনঃ (দ্বিতীয় পর্ব) পূর্বে প্রকাশিত।
৯০ বছরের ব্রিটিশ ভারত ঔপনিবেশিক শোষনঃ (তৃতীয় পর্ব) বর্তমানে প্রকাশিত।
পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম (চতুর্থ পর্ব) প্রকাশিত হবে।
স্বাধীন ভারত ও ভারতবাসীর স্বপ্ন (পঞ্চম পর্ব) প্রকাশিত হবে।


৯০ বছরের ব্রিটিশ ভারত ঔপনিবেশিক শোষনঃ (তৃতীয় পর্ব)


এরপর ১৮৫৮ সালে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তির হাতে স্থানান্তরিত হয়। রাণী ভিক্টোরিয়া নিজ হাতে ভারতের শাসনভার তুলে নেন। এর সঙ্গে সঙ্গে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভারতবর্ষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঃ


প্রায় এই ১৯০ বছর এই ভারত ভুখণ্ডের মানুষরা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ করেছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। আর তাই ১৮৫৭ সালে ভারতে প্রথম স্বাধীনতার আন্দোলন হয়। কিন্তু বর্বর ইংরেজদের ভাষায় ওটা ছিল “সিপাহী বিদ্রোহ”।


ইংরেজ সেনাবাহিনীর অন্তর্গত ভারতীয় সিপাহীরা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে মূল ভূমিকা পালন করে। ইংরেজ সরকার এই বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করলেও এর মাধ্যমে ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়।


এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অর্থাত্‍ ১৯৪৫ সালে ভারতবর্ষ জুড়ে “ইংরেজ ভারত ছাড়” আন্দোলন তীব্রতর হয়। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী সহ সব বড় বড় নেতা তখন সরাসরি ইংরেজদের হটাও আন্দোলনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন


মহাত্মা গান্ধীর দিক থেকে তাঁর “অহিংসা মনোভাব” এর কারণে হয়ত আন্দোলন বেগবান হচ্ছিল না। গান্ধীজীর মতে “যখন আমি হতাশ হই , আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালবাসার জয় হয়েছে । দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের কখনো অপরাজেয় মনে হলেও শেষ সবসময়ই তাদের পতন ঘটে মনে রাখবেন সর্বদাই।” অপর দিকে নেতাজীর বক্তব্য ছিল,”তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”।


নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু মহাত্মা গান্ধীর এই অহিংসা মনোভাব পছন্দ করতেন না। উনি চাইতেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এবং সেটা হবে সমর যুদ্ধ। তাই তিনি খুঁজছিলেন ঠিক সেই মুহুর্তে ইংরেজদের বিরুদ্ধে কোন পরাশক্তি আছে। সেই হিসেবে সে খুঁজে পায় জামার্নীকে আর ইংল্যান্ড তো তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনী। আর তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতবর্ষের অংশগ্রহনটা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ভালো ভাবে নেননি। তিনি হিটলারের কাছে গেলেন। কিন্তু সেই মুহুর্তে হিটলার প্রচন্ড ব্যাস্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে। তাই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু অক্ষশক্তির আরেক শক্তিশালী রাষ্ট্র জাপানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এসময় জার্মান তাকে একটি সাবমেরিনে করে জাপানে পৌছে দেয়। জাপান নেতাজীর পরিকল্পনা শুনে, এতে মত দেয়। এবং প্রয়োজনীয় অর্থ ও সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে।


রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব নিয়ে ভারত আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ মূলতঃ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা গঠিত একটি সশস্ত্র সেনাবাহিনী। ১৯৪২ সালে এই বাহিনী গঠিত হয়। এর বাহিনী ভিতরে ভারতের স্বাধীনতাকামী মানুষ, ইংরেজ নির্যাতিত ভারতীয়, মুটে ও মজুর ছিল। আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অর্থের অভাব থাকলেও নেতাজী সুভাষের অসাধারণ নেতৃত্বের ফলে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্যের একটি সুশৃঙ্খল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। জাপানী সহায়তায় বলীয়ান হয়ে এই বাহিনী ভারতের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভারতকে আক্রমন করে। [এখানে একটা বির্তক আছে যে কেন সে ভারতীয় হয়ে ভারতকে আক্রমন করলো? আসলে তার আক্রমন ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে]


জাপানের সহায়তায় আজাদ হিন্দ ফৌজ অতর্কিত আক্রমনে ভারতে ইংরেজরা কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়ে যায়। এক যুদ্ধের ভিতরে আরেক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারতের আরাকান, ইম্ফল, ময়রাং, বিষেণপুর প্রভৃতি স্থান সুভাষ চন্দ্র দখল করে নেন। এসব দখলকৃত জায়গা পুনরুদ্ধারের জন্য ব্রিটেনের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা যুদ্ধবিমান ও কামান নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। ঠিক এই মুহুর্তে নেতাজীর দল একটু পিছপা হয়ে পড়ে। তখন তারা রেঙ্গুনে গিয়ে আবারো পুর্নগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কয়েক মাস ব্যাপী এ যুদ্ধে মারা যায় উভয় পক্ষের অনেক সৈন্য। কিন্তু ঠিক এই মূহুর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় পরাজিত হয় অক্ষ বাহিনী। তাই জাপানের আত্মসমর্পণের ফলে বন্ধ হয়ে যায় আজাদ হিন্দ ফৌজের রসদ সরবরাহ। তারপর থেকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু নিখোঁজ হন। কথিত আছে ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। (তবে তাঁর এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে বির্তক আছে)


(চলবে)


ভারতসূর্য ডুবে গেল হায় গীতি-কবিতা-৩
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার জন্মভূমি।
স্বাধীন আমার ভারতবর্ষ দেশ আমাদের বঙ্গভূমি।


দিকে দিকে শুনি আহ্বান ঐ শুনি ভারতের জয়গান,
আ-সমুদ্র হিমাচল জুড়ে উড়িছে গর্বে বিজয় নিশান।
এসো হে আর্য! নও অনার্য, এসো সবে ভারতবাসী,
স্বদেশের তরে হাসি হাসি পরলো যারা গলায় ফাঁসি।


ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার জন্মভূমি।
স্বাধীন আমার ভারতবর্ষ দেশ আমাদের বঙ্গভূমি।


হিন্দু মুসলিম বিভেদ মানি না, মানি না ধর্ম জাতি,
মানুষের তরে আমরা সকলে জাগি দিবস রাতি।
স্বাধীন আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বর্গ ধাম,
ভারতমাতা সবার মাতা জানাই তারে শত প্রণাম।


ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার জন্মভূমি।
স্বাধীন আমার ভারতবর্ষ দেশ আমাদের বঙ্গভূমি।


ত্রিবর্ণ পতাকা ভাসে আকাশে জাগছে জনগণ,
সংগ্রাম সমরে দীপ্ত পুলকে করলো যাঁরা রণ।
ফাঁসির মঞ্চে জয়গান গেয়ে জীবন দিল যাঁরা,
প্রতিবাদের দাবীতে যাঁরা ভেঙেছে পাষাণকারা।


ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার জন্মভূমি।
স্বাধীন আমার ভারতবর্ষ দেশ আমাদের বঙ্গভূমি।