মা লক্ষ্মীদেবী আবাহন....... কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা
এসো মা লক্ষ্মী আমার ঘরে (সমাপ্তি পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শাস্ত্র পুরাণে মহালক্ষ্মীকে আদিশক্তি ভগবতী দেবী রূপে মানা হয়েছে। তাঁর কৃপাতেই মানুষ ধন-দৌলত-সুখ-স্বাচ্ছন্দ-যশ-মান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাঁর দয়া মমতা মহাসাগরের মতো। তিনি কখনওই কারও প্রতি কঠোর হোন না। যে কোনও মানুষ যদি ভক্তি ভরে ব্যাকুলভাবে তাঁর উপাসনা বা আরাধনা করেন তাহলে দুর্ভাগ্য দূর হয়ে, সৌভাগ্য আসবে এবং ধনলাভ ঘটবে। শারদ পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীপূজা অত্যন্ত শুভ। দেবী দুর্গা আমাদের কর্মের প্রেরণা দেন, সাফল্য লাভের শক্তি দেন। দেবী লক্ষ্মী ধন-সম্পদ সঞ্চয়ের শক্তি দেন।


লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী দুই বোন। যে বাড়িতে শুদ্ধতা, পরিছন্নতা, শান্ত নম্নভাব থাকে, সেখানে লক্ষ্মীর বাস আর যেখানে অশুদ্ধতা ,অপরিষ্কার ভাব, কলহ-বিবাদ উগ্র মেজাজ, হিংসা থাকে সেখানে থাকে অলক্ষ্মীর বাস। মা লক্ষ্মীর কৃপায় শুধু অর্থলাভ নয়, সন্তান লাভ, স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক নির্ভর করে। চার হাতের মা লক্ষীকে বলা হয় মাতা বৈভব লক্ষ্মী। মা মহালক্ষ্মী কে দেখা যায় কর্দম থেকে উত্থিত হয়ে পদ্মের উপরে বসে আছেন, যা আধ্যাত্মিক পবিত্রতা ও শক্তির প্রতীক।


যাঁরা বাড়িতে ব্রাহ্মণ দিয়ে এইদিন লক্ষ্মীপুজো করাচ্ছেন খুবই ভালো। কিন্তু যাঁদের সেটা সম্ভব হয়নি, তাঁরা নিজেরাও ঘরে বসে করে নিতে পারেন লক্ষ্মী পূজা। মা লক্ষ্মীর ফটোর সামনে যেদিন একটি ঘিয়ের প্রদীপ। যদি চার মুখওয়ালা প্রদীপ হয় তাহলে তো খুবই ভালো। সারা দিন উপোস করে অথবা নিরামিষ খেয়ে থাকবেন। দেবী লক্ষীকে যথাসম্ভব ভোগ দেবেন আর তাতে খিচুড়ি ও পায়েস যেন অবশ্যই থাকে। এছাড়া চিঁড়ে ফলমূল এবং অন্যান্য জিনিস অবশ্যই থাকবে। পুজোর শেষে আপনি ওই প্রসাদ গ্রহণ করবেন।


দশেরার দিন রাবণ বধ করে দীপাবলির দিন রামচন্দ্র-সীতা-লক্ষণ হনুমানজি অযোধ্যায় প্রবেশ করলেন। আর তারপরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় লক্ষ্মী-স্বরূপা সীতা দেবীকে নিয়ে গুঞ্জন, তার চারিত্রিক শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন। লক্ষ্মী পুজোর দিন সীতাদেবী রাবণের ছবি এঁকে সখীদের রাবণ সম্বন্ধে বোঝানোর সময়ে, রামচন্দ্র সেই ঘরে প্রবেশ করেন এবং প্রজাদের সন্দেহ দূর করতে সীতাদেবীকে 'এক পাক' খাইয়ে মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। তাই লক্ষ্মীপুজোয় খিচুড়ি নিবেদন আবশ্যিক।


বাংলা কবিতার আসরের সকল কবিগণ ও সহৃদয় পাঠক-পাঠিকাগণকে জানাই কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার শুভেচ্ছা।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!!!


মা লক্ষ্মীদেবী আবাহন....... কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা
এসো মা লক্ষ্মী আমার ঘরে (সমাপ্তি পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শুন সবে বিশ্ববাসী, শুন দিয়া মন,
লক্ষ্মীর পাঁচালি কাব্য করিব বর্ণন।
একদিন বৈকুণ্ঠেতে লক্ষ্মী নারায়ণ,
দুইজনে একসাথে করে আলাপন।


সহসা নারদ আসি উপনীত হয়,
লক্ষ্মী নারায়ণ প্রতি করযোড়ে কয়।
ধরাধামে মর্ত্যবাসী না করে বিচার,
ঘরে কারো অন্ন নাই থাকে অনাহার।


ধরাধামে বিপ্রগণ দেব পূজা ছাড়ি,
সুরাসক্ত হয়ে নিত্য করে মারামারি।
সতীনারী নাহি করে পতিরে সম্মান,
পতির অগ্রেতে খায় নাহি করে স্নান।


সর্বদা কলহ করে দিবস শর্বরী,
উলঙ্গ হইয়া ভূমে দেয় গড়াগড়ি।
মর্ত্যবাসী জীবকুল পাপ কর্মে রত,
সতীত্ব হারায়ে বালা কাঁদে অবিরত।


লক্ষ্মীসম অবলারে করিছে ধর্ষণ,
কি প্রকারে পাপকর্ম হবে নিবারণ?
নারদের বাক্য শুনি নারায়ণ কয়,
আপন দোষেতে জীব পাপে লিপ্ত হয়।


ইহা শুনি নারায়ণ লক্ষ্মী প্রতি কয়,
রক্ষা কর জীবকূলে হও মা সদয়।
মর্তবাসী জীব যদি তব পূজা করে,
ঐশ্বর্য বৈভব আদি পাবে তব বরে।


মর্ত্যধামে গিয়া কর পূজার প্রচার,
অন্যথা না হবে কভু বচন আমার।
এত শুনি লক্ষ্মীদেবী করিল গমন,
নারদের সাথে আসি দিলা দরশন।


ধরাধামে আসি দেবী বিপ্র ঘরে যায়,
বিপ্র সম পাপী আর না আছে ধরায়।
ত্রিলোচন নামে এক আছিল ব্রাহ্মণ,
দেব-দেবী পূজা নাহি করে কদাচন।


গায়ত্রী নামেতে আছে তাহার গৃহিণী,
পতিব্রতা সতী সাধ্বী সুশীলা রমণী।
প্রতি গুরুবারে নিত্য লক্ষ্মীপূজা করে,
ধন রত্ন বাড়ে তার মা লক্ষ্মীর বরে।


একদা ব্রাহ্মণ আসি মহা ত্রুদ্ধ মন,
মম গৃহে লক্ষ্মীপূজা কর কি কারণ?
গৃহে মম লক্ষ্মীপূজা কভু নাহি হবে,
পদাঘাত করি বিপ্র ঘট ভাঙে তবে।


ইহা দেখি বিপ্রজায়া চৈতন্য হারায়,
মহাদেবী মহালক্ষ্মী দেখিবারে পায়।
মহালক্ষ্মী নিজ রূপ প্রকাশ করিল,
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী কাছে দরশন দিল।


কমলা আমার নাম বৈকুণ্ঠেতে থাকি,
আসিয়াছি ধরাধামে জীবক্লেশ দেখি।
ব্রাহ্মণ বলেন, মাগো করিয়াছি পাপ,
ক্ষমা কর মোরে দেবী করি অনুতাপ।


ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী দোঁহে করযোড়ে কয়,
থাকো মাগো মম গৃহে হও মা সদয়।
মহালক্ষ্মী ব্রত-কথা হল সমাপন,
পাঁচালির ছন্দে কাব্য লিখিল লক্ষ্মণ।