মহাশক্তির আরাধনা ......... দেবী বন্দনা
শ্রী শ্রী মহাষষ্ঠী পূজা (পৌরাণিক কাহিনী)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মহাশক্তির মহাপূজার সূচনা হয় বোধনের মধ্যে দিয়ে৷ দেবীপক্ষের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে দেবীকে উদবোধিত করা হয়৷ কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এর দুর্গাপুজোর বিবরণের থেকে পৌরাণিক দুর্গাপূজার বিবরণ কিছুটা আলাদা। কালিকাপুরাণ অনুসারে, রাবণবধে রামচন্দ্রকে সাহায্য করার জন্য রাত্রিকালে দেবীর বোধন করেছিলেন ব্রহ্মা।


পুরাণ মতে, সূর্যের উত্তরায়ন হচ্ছে দেবতাদের দিন। উত্তরায়নের অর্থ বিষুবরেখা থেকে সূর্যের ক্রমশ উত্তরে গমন। সূর্যের এই গমনে সময় লাগে ছয় মাস। এই ছয় মাস দেবতাদের একদিনের সমান। দিনের বেলায় জাগ্রত থাকেন দেবতারা। তাই দিনেই দেবতাদের পুজো করা শাস্ত্রের বিধান। অন্যদিকে সূর্যের দক্ষিণায়ন হল দেবতাদের রাত। দক্ষিণায়ন অর্থ বিষুবরেখা থেকে সূর্যের ক্রমশ দক্ষিণে গমন। সূর্যের এই গমনকালের ব্যপ্তিও ছয় মাস। দক্ষিণায়নের ছয় মাস দেবতাদের একরাতের সমান। স্বাভাবিক ভাবেই এই সময় দেবতারা ঘুমোন। সেই কারণেই রাতে পুজো করার বিধান নেই শাস্ত্রে।


শরৎকাল দক্ষিণায়ণের সময়, দেবতাদের রাত্রিকাল। তাই শরৎকাল পূজার্চনার জন্য উপযুক্ত সময় নয় - ‘অকাল’। অকালে দেবতার পুজো করতে হলে তাঁকে জাগরিত করতে হয়। জাগরনের এই প্রক্রিয়াটিই হল ‘বোধন’। সেই কারণে দুর্গাপুজো শুরু হয় দেবীর অকাল বোধন করে।


এই অকালে শ্রীরামচন্দ্র অশুভ শক্তির প্রতীক রাবণ রাজাকে পরাজিত করতে শক্তি সঞ্চারে মায়ের পুজো করেছিলেন। তাই এই পুজোকে অকাল বোধন বলা হয়। আবার উক্ত সময়টি শরৎকাল হওয়ায় একে শারদীয়া দুর্গা পুজো বলা হয়ে থাকে। কিন্তু ঘুমন্ত দেবীকে জাগ্রত করার জন্য স্বয়ং ব্রহ্মাকে দেবীস্তুতি করতে হয়েছিল৷ 'হে দেবী রাবণবধের জন্য রামকে অনুগ্রহ করুন ও জাগ্রতা হোন'৷ - ব্রহ্মার এই আবেদনে দেবী বেল গাছের একটি পাতায় কুমারী কন্যার রূপে আবির্ভূতা হন৷


দেবীর সেই আবির্ভাবকে স্মরণ করে আজও দেবীপুজোর প্রাক্কালে তাঁকে জাগ্রত করা হয়৷ বিল্ববৃক্ষে তাঁকে উদবোধিত করার যে অনুষ্ঠান তাই বোধন৷ ষষ্ঠীতিথির সন্ধ্যায় প্রথমে দেবীর বোধন, পরে অধিবাস ও আমন্ত্রণ করা হয়৷ শৈলশিখর কৈলাস থেকে তিনি আসছেন৷ তাই তাঁকে যথাযথ আমন্ত্রণ করে এই দিনের অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়৷


সবারে করি আহ্বান। আসুন, মহাশক্তির আরাধনায় আমরা সকলেই সমবেতভাবে দেবীর সম্মুখে প্রার্থনা করি, অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয় হউক। বাংলা কবিতা আসরের সকল কবি ও সহৃদয় পাঠকগণকে জানাই শুভ দুর্গাপূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!!!


মহাশক্তির আরাধনা ......... দেবী বন্দনা
শ্রী শ্রী মহাষষ্ঠী পূজা (প্রথম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


দুর্গা মহা ষষ্ঠী আজি দেবীর বোধন,
মর্ত্তধামে আজি দেবী করে আগমন।
কার্তিক গণেশ আর লক্ষ্মী সরস্বতী,
মাতার সহিত আসে সন্তান-সন্ততি।


সুসজ্জিত ফুলমালা তাহে আম্রশাখা,
দেবালয় চারিপাশে আলপনা আঁকা।
শোভিছে মঙ্গল ঘট সম্মুখে দেবীর,
ধান্য দূর্বা ফুলমালা ঘটে দেয় নীর।


সজ্জিত বরণ ডালা কুমকুম আর,
ধূপদীপ নৈবেদ্যাদি রাখে চারিধার।
জয়ন্তী অপরাজিতা অশোক সহিতে,
নব-পত্রিকা বন্ধন পাটের রজ্জুতে।


যুগ্ম বিল্ব ফল আর কদলীর ছাল,
পঞ্চশস্য পঞ্চগব্য দিয়ে চারিফাল।
পাটরজ্জু দিয়ে করে পত্রিকা বন্ধন,
কলাবধূ পাশে তার দেব গজানন।


দেবীর বোধন আজি পূণ্য শুভক্ষণ,
মহাষষ্ঠী কাব্য লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।