এসো হে পঁচিশে বৈশাখ... কবিগুরু প্রণাম
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ  প্রথম পর্ব
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


নব আনন্দে জাগো আজি,
বৈশাখের প্রথম পুণ্য প্রভাতে ।
সব জ্বালা যন্ত্রণা যাক মুছে,
আসুক এক নতুন ভোর ।
এসো হে বৈশাখ !
এসো হে নতুন এসো
নিত্য নব নব সাজে।
এসো হে পঁচিশে বৈশাখ।
দিকে দিকে শুনি তার ডাক।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে (বাংলা-পঁচিশে বৈশাখ-১২৬৮) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতিলাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে।


১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ কবিকাহিনী ’প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকেই কবির বিভিন্ন ঘরানার লেখা দেশ-বিদেশে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলী’। এই বইয়ের জন্য কবি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।


১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে এবং উড়িষ্যায় জমিদারীগুলো তদারকি শুরু করেন কবি। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। কবি বিশ্বভ্রমণ করেন বারো বার। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি  দেশভ্রমণ করেন।

কবির ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাখ ঠাকুর মূলত কবি। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ২৫টি। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা সংগীতেও রয়েছে। তিনি দুই হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। তার সমগ্র গান ‘ গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে।


কবির লেখা ‘ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা।


জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্প’র বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মত্যুর পর ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ১৯ খণ্ডে রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র।’ ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্ম’র সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে।


বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীর্ঘ রোগভোগের পর বাংলা ১৩৪৮ সালের বাইশে শ্রাবণ (ইংরেজী ৭ আগস্ট-১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।


            
এসো হে পঁচিশে বৈশাখ  
কবিপ্রণাম আমার কবিতা-1
কবি- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বিশ্বের কবি রবি ঠাকুর
তোমায় জানাই প্রণাম,
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি
তব পবিত্র জন্মধাম।


পঁচিশে বৈশাখ পূণ্য দিবসে
এলে তুমি ধরাধামে,
রচিলে কত গীতি ও কবিতা
রবীন্দ্র সংগীত নামে।


প্রাণের ঠাকুর হে রবি কবি!
তুমি যে বাংলার কবি,
পঁচিশে বৈশাখে তীব্র দাবদাহে
চির উদ্ভাসিত রবি।


দুই বাংলার জাতীয় সংগীত
তোমারই তো অবদান,
বিশ্বের কবি হে রবি ঠাকুর
তোমায় জানাই প্রণাম।


বিশ্বের মাঝারে গাহিলে হে কবি
বঙ্গ জননীর জয়গান,
রচিলে হে কবি গীতাঞ্জলি কাব্য
রাখিলে জাতির মান।


এসো এসো কবি হে বিশ্বকবি!
আসুক পঁচিশে বৈশাখ,
বিশ্ববাসী সবে ডাকে বারেবার
শুনিতে পাও কি ডাক?


বিশ্ব বরেণ্য হে বিশ্বের কবি
কবিগুরু লহ প্রণাম,
সারা বিশ্বজুড়ে সবার হৃদয়ে
আছে লেখা তব নাম।