করবা চৌথ’ ব্রত ও পৌরাণিক উপখ্যান (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


সন্তান এবং স্ত্রীকে রেখে স্বামী যেতেন দূর দেশে, যুদ্ধক্ষেত্রে। পেশায় সৈন্য স্বামীর জন্য উদ্বেগের প্রহর গুনতেন স্ত্রী। তাঁর মঙ্গল কামনায় বিশেষ উপবাস ব্রত করতেন কার্তিক মাসের প্রথম পূর্ণিমার পরে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে। বলিউডের কল্যাণে সেই ব্রত ‘করবা চৌথ’ আজ বহুল প্রচলিত।


হিন্দি সিনেমায় যেমন দেখানো হয়, ততটা জৌলুস এই ব্রতের সঙ্গে প্রথম থেকে জড়িয়ে ছিল না। বরং, এই ব্রত ছিল মূলত সৈন্যদের স্ত্রীদের জন্য। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সমাজের অন্য স্তরে। এখন তো সার্বিকভাবেই বিবাহিত মহিলারা এই ব্রত পালন করেন স্বামীর মঙ্গল কামনায়।


‘করবা’ শব্দের অর্থ কড়াই এবং ‘চৌথ’ মানে চতুর্থী তিথি। এই দুয়ে মিলে ব্রতের নামকরণ। এই ব্রতে কড়াইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা ব্রত রাখেন, তাঁরা নতুন কড়াই কেনেন। সেখানে রাখেন নতুন কাপড়, কাচের চুড়ি এবং বাড়িতে তৈরি মুখরোচক খাবার ও মিষ্টি। একে অন্যের সঙ্গে সেই কড়াই আদানপ্রদানও করেন তাঁরা।


কৃষি সভ্যতার সঙ্গেও এই ব্রত জড়িয়ে। এই সময়েই রবি শস্যের চাষ শুরু হয়। বপন করা হয় গমের দানা। যে বড় পাত্রে গমের দানা রাখা হয়, তাকেও ‘করবা’ বলা হয়।


‘করবা চৌথ’ মূলত উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারতে পালনীয় ব্রত। রীতি হল, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত ব্রতীরা কিছু খাবেন না। এমনকি, জলপানও নিষিদ্ধ। তাই অনেক প্রদেশেই সূর্যোদয়ের আগে বিবাহিতারা খেয়ে নেন।


সন্ধ্যায় শুরু হয় আসল উৎসব। গয়না আর নতুন পোশাকে সেজে, মেহেন্দিতে হাত রাঙিয়ে, এক জায়গায় জড়ো হন সবাই, যাঁরা ব্রত রেখেছেন। ‘করবা চৌথ’-এর পোশাক সাধারণত লাল, হলুদ বা সোনালি রঙের হয়। গান গাওয়া হয় একসঙ্গে। কোনও প্রবীণা বা কোনও পুরোহিত ব্রতকথা পাঠ করেন।


আকাশে চতুর্থীর চাঁদ দেখা গেলে তা চালুনির মধ্যে দিয়ে দেখতে হয়। সঙ্গে থাকে প্রদীপ। চন্দ্রদেবতার কাছে স্বামীর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন স্ত্রী। তারপর সেই প্রদীপের আলোয় দেখতে হয় স্বামীর মুখ। বরণডালা থেকে জলের পাত্র নিয়ে স্ত্রীর মুখে ধরেন স্বামী। সেই জল পান করেই ভঙ্গ হয় উপবাস।


‘করবা চৌথ’ ব্রতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু পৌরাণিক আখ্যান। কথিত, রানি বীরবতী তাঁর পিতৃগৃহে এই ব্রত পালন করছিলেন। কিন্তু উপবাসরত বোনের কষ্ট হচ্ছে ভেবে তাঁর সাত দাদা অশ্বত্থ গাছে আয়না রেখে দিলেন। যাতে মনে হয়, আকাশে চাঁদ উঠেছে।


আয়নাকে চাঁদ ভেবে ভুল করে উপবাস ভঙ্গ করেন বীরবতী। তার পরেই স্বামীর মৃত্যুর খবর পান। শোকে মুহ্যমান হলেও বীরবতী আবার ‘করবা চৌথ’ পালন করে তাঁর স্বামীর প্রাণভিক্ষা করেন। প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে যমরাজ ফিরিয়ে দেন তাঁর স্বামীর প্রাণ।


আবার কোনও লোককথা বলে, ‘করবা’ নামের এক পতিব্রতা নারী ছিলেন। তিনি যমরাজের মুখোমুখি হয়ে কুমিরের গ্রাস থেকে উদ্ধার করেছিলেন স্বামীকে। তাঁর নামেই নাকি এই ব্রতের নামকরণ।


শুভ করবাচৌথ দিবস.........খুশির রঙে রাঙিয়ে তোলার উত্সব সবার ঘরে ঘরে (প্রথম পর্ব)
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


করবাচৌথ দিবসে মহা ধূমধাম,
হাসিখুশি কলরব নাহিক বিরাম।
সারাদিন উপবাস করে নারীগণ,
পতির কল্যাণ হয় তাহার কারণ।


লুচি, সুজি, সুমিষ্টান্ন, সুস্বাদু ব্যঞ্জন,
উত্তম ভোজন কত করে আয়োজন।
মেহেন্দি লাগায় করে উত্তম শৃঙ্গার,
দামী দামী অলঙ্কার, গলে রত্নহার।


চতুর্থীর চাঁদ উঠে সুনীল গগনে,
চালুনি লইয়া দেখে পূণ্য শুভক্ষণে।
সামাজিক রীতি এই হিন্দুশাস্ত্র কয়,
সতীর পূণ্যের ফলে পতি সুখী হয়।


অগ্রে পতি পরে পত্নী করয়ে আহার,
একটি দিনের তরে প্রতীক্ষা আবার।
প্রতি বর্ষে একদিন আসে শুভক্ষণ,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।