আমার গাঁয়ের মাটি আমার পবিত্র স্বর্গধাম
মা মাটি মানুষের কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
গাঁয়ের মাটিতে আছে শান্তি ভালবাসা,
এই মাটি মা আমার জাগে নব আশা।
গাঁয়ের মানুষ জন সবাই আপন,
গাঁয়ে আছে আমবন কাঁঠালের বন।
ছোট আমাদের গ্রাম অজয়ের পারে,
সারি সারি তালগাছ পথে দুই ধারে।
রাঙা পথ গেছে চলে অজয়ের ঘাট,
দুইপাশে ঝোপঝাড় ছোট ছোট মাঠ।
আম কাঁঠালের গাছ গ্রামখানি জুড়ে,
রাঙাপথে সারাদিন ধূলোবালি উড়ে।
চলো রোজ গরুগাড়ি সেইপথ দিয়ে,
নদীঘাটে এসে থামে যাত্রীদের নিয়ে।
আমাদের ছোট গ্রাম ছায়া সুশীতল,
বধূরা কলসী কাঁখে নিয়ে যায় জল।
আমাদের গ্রামখানি অতি মনোহর,
আঁকাবাঁকা গলিপথ ছোট ছোট ঘর।
সাঁঝের সানাই বাজে আমাদের গাঁয়ে,
কাজল ডাঙার মাঠ, হাট-তলা বাঁয়ে।
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কবি সবুজ ছায়ায়,
মা মাটি মানুষ কাব্য লিখে কবিতায়।
আমার গাঁয়ের মাটি: এক পবিত্র স্বর্গধাম
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কলমে উঠে এসেছে মাটি, মানুষ আর প্রকৃতির এক মায়াবী চিত্র। "আমার গাঁয়ের মাটি আমার পবিত্র স্বর্গধাম" শীর্ষক কবিতায় তিনি তাঁর গ্রামের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিবেদন করেছেন। কবিতাটি যেন মা, মাটি ও মানুষের এক অপূর্ব মেলবন্ধন, যেখানে প্রতিটি পঙ্ক্তি গাঁয়ের শান্ত স্নিগ্ধ রূপকে জীবন্ত করে তোলে।
কবি শুরুতেই ঘোষণা করেন, গাঁয়ের মাটিতেই শান্তি ও ভালোবাসা বিদ্যমান। এই মাটি যেন মায়ের মতোই, যা হৃদয়ে নতুন আশা জাগায়। গাঁয়ের মানুষজন আপন, আত্মার আত্মীয়। আম ও কাঁঠালের বাগান গ্রামের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
অজয় নদের তীরে অবস্থিত এই ছোট গ্রামটির বর্ণনা কবি নিখুঁতভাবে দিয়েছেন। পথের দু’ধারে সারি সারি তালগাছ, অজয়ের ঘাটে চলে যাওয়া লাল মাটির রাস্তা, দু’পাশে ঝোপঝাড় আর ছোট ছোট মাঠ - এই ছবিগুলো যেন পাঠকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
গ্রামখানি আম-কাঁঠালের গাছে পরিপূর্ণ, আর লাল রাস্তায় সারাদিন ধুলো ওড়ে। গরুর গাড়ি সেই পথ ধরে যাত্রীদের নিয়ে নদীর ঘাটে এসে থামে। এই দৃশ্য গ্রামীণ জীবনের এক চিরন্তন প্রতিচ্ছবি।
কবি তাঁর গ্রামকে ছায়া সুশীতল বলেছেন। বধূরা কলসি কাঁখে জল আনতে যায়, যা গ্রামীণ নারীদের দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ চিত্র। আঁকাবাঁকা গলিপথ আর ছোট ছোট ঘরগুলো গ্রামটিকে আরও মনোরম করে তুলেছে।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই গাঁয়ে সানাইয়ের সুর বাজে। কাজল ডাঙার মাঠ আর হাট-তলা যেন গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সবুজ ছায়ায় বসে মা, মাটি ও মানুষের কাব্য রচনা করেন, যা তাঁর কবিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে।
এই কবিতাটি কেবল একটি গ্রামের বর্ণনা নয়, এটি গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি, যা শান্তি, ভালোবাসা ও সরলতায় পরিপূর্ণ। কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী তাঁর কবিতার মাধ্যমে আমাদের শিকড়ের সন্ধান দেন এবং মা, মাটি ও মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দেন।