কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর গাঁয়ের কবিতাগুলি গ্রাম্য জীবনের ছবি ফুটিয়ে তোলে। তাঁর কবিতায় গ্রাম্য প্রকৃতি, মানুষ এবং তাদের জীবনযাত্রা সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে।
এখানে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কিছু কবিতার উদাহরণ দেওয়া হলো:
"গাঁয়ের তালদিঘি":
এই কবিতায় গ্রামের একটি ছোট তালদিঘির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে সূর্যকিরণে জল ঝিকিমিকি করে, পাড়ে তাল ও খেজুর গাছ রয়েছে, এবং বক মাছ ধরে।
"শীতল তরুর ছায়ে":
এই কবিতায় গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং প্রকৃতির সাথে তাদের সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। Bangla Kobita অনুসারে
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতাগুলি গ্রাম্য জীবনের সরলতা এবং সৌন্দর্যকে তুলে ধরে। তাঁর কবিতাগুলি গ্রাম্য বাংলার মানুষের আবেগ, অনুভূতি এবং জীবনযাত্রার একটি প্রতিচ্ছবি।
আমার গাঁয়ের মাটি আমার পবিত্র স্বর্গধাম
মা মাটি মানুষের কবিতা (চতুর্থ পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
গাঁয়ে আছে ছোট ঘর সবুজের মাঠ,
রাঙাপথ গেছে চলে সোজ নদীঘাট।
রাঙাপথে আম জাম কাঁঠালের বন,
কোকিলের কুহুতানে হরষিত মন।
গাঁয়ে আছে পদ্মদিঘি কালো তার জল,
হাঁসগুলি সারাদিন করে কোলাহল।
পদ্মদিঘি দুই পাড়ে আছে তালগাছ,
দিঘিজলে জেলে সব রোজ ধরে মাছ।
গাঁয়ে আছে ছোট নদী নামটি অজয়,
দিবানিশি কুলু কুলু অবিরাম বয়।
নদীঘাটে সন্ধ্যা নামে আঁধার ঘনায়,
পাখি সব আসে ফিরে আপন বাসায়।
গাঁয়ের সবাই ভাই, আমার আপন,
গাঁয়ের কবিতা লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।
আমার গ্রাম, আমার পবিত্র স্বর্গ: ভূমি, মাটি ও মানুষের প্রতি একটি গীতিকবি
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতার ভিত্তিতে
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতা, তার "মা, মাটি, মানুষের কবিতা" কবিতার চতুর্থ পর্ব, তার গ্রামকে জীবন্ত এবং স্নেহময়ভাবে তুলে ধরে, যাকে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে তার "পবিত্র স্বর্গ" বলেন। সরল অথচ অনুভূতিপূর্ণ ভাষায় কবি আমাদের নিয়ে যান এক অপূর্ব সৌন্দর্যের এবং ঘনিষ্ঠ সম্প্রদায়ের জগতে।
কবিতাটি শুরু হয় গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে: সবুজ ক্ষেতের মাঝে ছড়ানো সাধারণ গৃহ। গঙ্গার তীরের দিকে মোড় নেয় লাল মাটির পথ, যা নতুন যাত্রা ও সংযোগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই পথে আম, কাঁঠাল এবং জাম গাছেরা সারিবদ্ধ, এবং কোকিলের আনন্দময় সুরে পথটি ভরে ওঠে, হৃদয়কে আনন্দিত করে।
এরপর কবিতাটি গ্রামের "পদ্মা দিঘি"-র দিকে ঝুঁকে, একটি শাপলা ফুলে সজ্জিত পুকুর, যার অন্ধকার জল জীবনে পরিপূর্ণ। হাঁসেরা অবিরাম আওয়াজ তোলায় বাতাস ভরে ওঠে তাদের প্রাণবন্ত ডাক দিয়ে। পুকুরের দুই পাশে দাঁড়ানো গগনচুম্বী নারকেল গাছ গাছের ছায়া দেয় এবং কালজয়ী অনুভূতি সৃষ্টি করে। প্রতিদিনের জীবন এখানে ফুটে ওঠে, মৎস্যজীবীরা তাদের জাল ছুঁড়ে জল থেকে জীবিকার আহরণ করেন।
গ্রামের প্রাণশক্তি হলো অজয় নদী, "ছোট নদী" যা দিনরাত অবিরাম প্রবাহিত হয়। তার ধ্বনি, "কুলু কুলু" বলে বর্ণিত, একটি সান্ত্বনাদায়ক তাল তৈরি করে, প্রকৃতির অবিচল উপস্থিতির স্মারক। সন্ধ্যা নেমে এলে নদীর তীর অন্ধকারে ঢেকে যায়, পাখিরা তাদের বাসায় ফিরে যায়, দিনের সমাপ্তি এবং বিশ্রামের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
অবশেষে, গ্রামটিকে সত্যিকারের "পবিত্র স্বর্গ" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে গ্রামবাসীই। কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী তাদের সবাইকে তার ভাই-বোন মনে করেন, যা তাদের মধ্যে দৃঢ় সম্প্রদায়বদ্ধতার প্রমাণ। কবিতার শেষাংশে তিনি তার রচয়িতার পরিচয় দেন, এই প্রিয় স্থলের সারমর্ম ধারণ করার জন্য তার বিনয়ী স্বীকারোক্তি।
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতা শুধু একটি গ্রামের বর্ণনা নয়; এটি অন্তর্ভুক্তির উদযাপন, ভূমি, মাটি এবং মানুষের প্রতি হৃদয় থেকে উৎসর্গীকৃত শ্রদ্ধা যারা তার পরিচয় গঠন করে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় গ্রামীণ জীবনের সরল সৌন্দর্যের গুরুত্ব এবং মানব সংযোগের স্থায়ী শক্তি। তার কথার মাধ্যমে, আমরা তার “পবিত্র স্বর্গ”-এর প্রতি ভালোবাসায় অংশীদার হতে পারি, যেখানে প্রকৃতি ও সম্প্রদায় মিলে গভীর শান্তি ও অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে।